রাজধানীর ফার্মগেটের শহীদ আনোয়ারা উদ্যান থেকে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের স্থাপনা-সরঞ্জাম সরানো হয়নি। উদ্যানটি আবার সংস্কার ও সবুজায়ন করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি ছিল, তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।

গত বছরের ডিসেম্বরে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

উদ্যান রক্ষার আন্দোলনকারীদের কাছে এই প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময় মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে ছিলেন আরও দুজন উপদেষ্টা। তাঁরা হলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

উদ্যান হচ্ছে জনস্বাস্থ্যের অবকাঠামো। এটা দখলে থাকায় সাধারণ মানুষের অমেরামতযোগ্য ক্ষতি হচ্ছে।অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান, সভাপতি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স 

প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, উদ্যানটি খালি করে দেওয়ার কথা ছিল গত ২৬ মার্চ, অর্থাৎ স্বাধীনতা দিবসের দিন। কিন্তু প্রতিশ্রুত তারিখের প্রায় তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও উদ্যানটি এখনো খালি হয়নি। সেখানে নিজেদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ।

নগর-পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশ আন্দোলনকারীরা বলছেন, উদ্যানটিতে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের যে স্থাপনাসহ সরঞ্জাম রয়েছে, চাইলে তা এক সপ্তাহের মধ্যে সরিয়ে ফেলা সম্ভব।

প্রকল্পের সাইট অফিস স্থাপন ও নির্মাণকাজের উপকরণ রাখতে ২০১৮ সাল থেকে উদ্যানটি ব্যবহার করছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি মালিকানাধীন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। 

কথা ছিল, মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ শেষে উদ্যানটি ফিরিয়ে দেওয়া হবে; কিন্তু ২০২৩ সালে উদ্যানের জায়গায় একটি স্টেশন প্লাজা নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানায় ডিএমটিসিএল। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেখানে দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁ, কফি শপ, বিনোদনকেন্দ্রসহ শিশুদের বিনোদন ও খেলার ব্যবস্থা থাকবে। সে সময় মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরকে একটি চিঠিও দিয়েছিল।

এরপর থেকে উদ্যানটিতে স্টেশন প্লাজা নির্মাণ পরিকল্পনার প্রতিবাদে স্থানীয় লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন নগরবিদ ও পরিবেশ সংগঠকেরা। 

৭ এপ্রিল বিকেলে উদ্যানটিতে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে এখনো মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম চলছে। উদ্যানের ভেতরে পূর্ব অংশে রয়েছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজের স্থাপনা। আর পশ্চিম অংশে রাখা হচ্ছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন যান-যন্ত্রপাতি।

সেই প্রতিশ্রুতি

রাজধানীর পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল জলাশয় রক্ষায় বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের কর্মীদের পান্থকুঞ্জ পার্কে অবস্থান কর্মসূচির ১১তম দিন ছিল গত ২৩ ডিসেম্বর। আন্দোলনের মুখে সেদিন সেখানে গিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা। সেদিন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ২০২৫ সালের ২৬ মার্চের মধ্যে শহীদ আনোয়ারা উদ্যানে থাকা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সব স্থাপনাসহ সরঞ্জাম সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে উপস্থিত আন্দোলনকারীদের জানিয়েছিলেন। উপদেষ্টার এই ঘোষণা শুনে সেদিন তাঁকে হাততালি দিয়ে অভিবাদন জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা।

মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সেদিন বলেছিলেন, তিনি কিছু সময় আগে আনোয়ারা উদ্যানে গিয়েছিলেন। সেখানে থাকা স্থাপনা ২৬ মার্চের মধ্যে ভেঙে ফেলতে বলেছেন। ভেঙে ফেলার পর পুরো উদ্যানকে সবুজায়ন করতে বলেছেন।

উদ্যানটি রক্ষায় আন্দোলনকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন। সংগঠনটির সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব প্রথম আলোকে বলেন, সেদিন উপদেষ্টা নিজে থেকেই বলেছিলেন, আনোয়ারা উদ্যান মার্চের ২৬ তারিখে অবমুক্ত করে দেওয়া হবে। উদ্যানটি সংস্কার ও উন্নয়নের বিষয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসে আলোচনা করবেন। কিন্তু এসবের কিছুই করা হয়নি।

প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘উদ্যানে যে স্থাপনাগুলো রয়েছে, সেগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে খালি করা সম্ভব। অথচ প্রতিশ্রুতিরই বাস্তবায়ন হলো না। কেন হলো না, তারও কোনো ব্যাখ্যা নেই। উদ্যান হচ্ছে জনস্বাস্থ্যের অবকাঠামো। এটা দখলে থাকায় সাধারণ মানুষের অমেরামতযোগ্য ক্ষতি হচ্ছে।’

মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, আনোয়ারা উদ্যান খালি করে দেওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উদ্যানে তাঁদের এখনো কিছু কাজ রয়েছে, যা এখনো শেষ হয়নি। এখন আগামী জুনের মধ্যে উদ্যানের পশ্চিম অংশ খালি করে দেওয়া হবে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

শনি গ্রহের একাধিক চাঁদে কার্বন ডাই–অক্সাইডের সন্ধান

জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে শনি গ্রহের আটটি মাঝারি আকারের চাঁদে কার্বন ডাই–অক্সাইড শনাক্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা। বর্তমানে মিমাস, এনসেলাডাস, ডায়োন, টেথিস, রিয়া, হাইপেরিয়ন, লাপেটাস ও ফিবি নামের চাঁদগুলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের পরিবর্তনের তথ্য টেলিস্কোপের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য বিশ্লেষণ করার পাশাপাশি চাঁদগুলোর ওপরে নিয়মিত নজরও রাখছেন বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, ডায়োন ও রিয়া চাঁদে থাকা কার্বন ডাই–অক্সাইড শনির প্রধান বলয়ের বরফের অনুরূপ। ফিবি চাঁদে কার্বন ডাই–অক্সাইড জৈব পদার্থের বিকিরণের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়ে থাকে। লাপেটাস ও হাইপেরিয়নের অন্ধকার অঞ্চলে কার্বন ডাই–অক্সাইড দেখা যায়। বরফযুক্ত এসব চাঁদে কার্বন ডাই–অক্সাইডের অবস্থা সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী বিজ্ঞানীরা।

ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির বিজ্ঞানী মাইকেল ব্রাউন ও তাঁর সহকর্মীরা এক গবেষণাপত্রে লিখেছেন, কঠিন কার্বন ডাই–অক্সাইড সৌরজগতের প্রান্তসীমার বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়। যদিও সেই অবস্থানে কার্বন ডাই–অক্সাইড স্থিতিশীল নয়। আমরা শনির উপগ্রহে কার্বন ডাই–অক্সাইডের অবস্থান জানার মাধ্যমে ভিন্ন পরিবেশ বোঝার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন গ্রহে কার্বন ডাই–অক্সাইড কীভাবে আটকে আছে, তা জানার সুযোগ আছে এখানে।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, শনির চাঁদে আটকে থাকা কার্বন ডাই–অক্সাইড থেকে আদর্শ ল্যাবের মতো তথ্য পাওয়া যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, শনি গ্রহের বিভিন্ন চাঁদে কমপক্ষে দুটি পৃথক উৎস থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইড তৈরি হয়েছে।

সূত্র: এনডিটিভি

সম্পর্কিত নিবন্ধ