লালপুরের ওয়ালিয়া গ্রামের আশফিকুল ইসলাম আড়াই বিঘা জমিতে হাঁড়িভাঙ্গা জাতের আমের বাগান করেছেন। মুকল আসার আগে পরিচর্যাও করেছিলেন। এর পরও বাগানের ৫ থেকে ১০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। খরা ও পোকার কারণে সে গুটিগুলোও ঝরে যাচ্ছে। কীটনাশক ও পানি দিয়ে গুটি ঝরা রোধ করা যাচ্ছে না। তিনি ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন।
আশফিকুল ইসলাম বলেন, দুই বছর ধরে আমে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এবার বাগানে আমই নেই। গুটি ঝরে যাওয়ায় কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যাবে না। সব বাগানেরই একই অবস্থা।
আম চাষি সোহেল রানার দুই বিঘাজুড়ে আমের বাগান। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে আম চাষ করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। অনেকেই বাগান কেটে ফেলছেন।
ব্যবসায়ী ইনছার আলী এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আমের ব্যবসা করেন। বিভিন্ন জাতের কয়েক বিঘা আমের বাগান কিনেছেন। বেশির ভাগ গাছে মুকুল আসেনি। গুটি ঝরে পড়েছে অনেক গাছের। কীটনাশক ও পানি সেচ দিয়েও গুটি রক্ষা করা যাচ্ছে না। এবারও লোকসান হবে।
নাটোরের লালপুরে এ সময় থোকায় থোকায় সবুজ আমের গুটিতে ছেয়ে যায় বাগান। কিন্তু এবার মুকুল কম এসেছে। যেটুকু মুকুল এসেছে, তা তীব্র তাপপ্রবাহ, খরা ও পোকার উপদ্রবে ঝরে পড়ছে। কীটনাশক ও পানি সেচ দিয়েও প্রতিকার মিলছে না। এবার আমের ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি ছাড়া আমের গুটি ঝরা বন্ধ হবে না– বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১ হাজার ৮০০ ৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আমের বাগান আছে। ৬২ শতাংশ বাগানে আমের মুকুল এসেছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ ৫০ হাজার টন। যার বাজারমূল্য ধরা হয়েছে ৬৩ কোটি ১৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে গুটি ঝরে যাওয়ায় আমের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় সমকালকে বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর মুকুল কম এসেছে। তার ওপর চৈত্র মাসেও দিনে খরা, ভোরে কুয়াশা ও পোকার উপদ্রবে কিছু গাছে গুটি ঝরছে। বড় ধরনের দুর্যোগ না হলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। এবার আমের বাজারও গত বছরের তুলনায় বাড়বে বলে আশা করছেন
এ কর্মকর্তা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আম র ব গ ন র আম র
এছাড়াও পড়ুন:
শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।
একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।
আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।
ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।
ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।
পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল