রাজশাহীতে মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করা বাবা খুন, বিচার চেয়ে লাশ নিয়ে রাস্তায় মানববন্ধন
Published: 17th, April 2025 GMT
রাজশাহীতে মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় হামলা ও মারধরের ঘটনায় নিহত ব্যক্তির লাশ রাস্তায় নিয়ে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।
নগরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সর্বস্তরের ব্যানারে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নগরের তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকায় সড়কে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধন থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ফাঁসির দাবি করা হয়।
গতকাল বুধবার রাতে মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় আকরাম আলী (৪৫) ও তাঁর ছেলে ইমাম হোসেনকে মারধর করা হয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর আকরাম আলী মারা যান। তিনি ওই এলাকার মৃত আজদার আলীর ছেলে। তিনি পেশায় বাসচালক এবং রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য। তাঁর মেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। বাবার লাশ রেখে আজ বৃহস্পতিবার সকালে সে পরীক্ষার কেন্দ্রে যায়।
এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার নগরের বোয়ালিয়া মডেল থানায় নিহত ব্যক্তির ছেলে বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এতে সাতজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকার কালু মিয়ার ছেলে মো.
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি আসামি নান্টু তাঁর স্ত্রীকে মারধর করেন। এর প্রতিবাদ করেছিলেন আকরামের স্ত্রী। ওই নারী আকরামের স্ত্রীর আত্মীয়। এতে ক্ষিপ্ত হন নান্টু। তিনি আকরামের মেয়ে ও ছেলেকে ক্ষতি করার হুমকি দেন। এর পর থেকে নান্টু বখাটেদের দিয়ে আকরাম আলীর মেয়ে রাকিয়াকে উত্ত্যক্ত করাতেন। গতকাল নান্টু নিজেই তাকে গালিগালাজ করেন। আকরাম এ বিষয়ে নান্টুর মা-বাবার কাছে নালিশ করেন। পরে রাত ১০টার দিকে নান্টু ও তাঁর সহযোগীরা নগরের তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকায় আকরাম ও তাঁর ছেলে হাসান ইমামের ওপর হামলা করেন। ইটের আঘাতে গুরুতর জখম হন আকরাম। পরে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাত ১১টার দিকে তিনি সেখানে মারা যান।
মানববন্ধনে আকরামের চাচাতো ভাই মো. ইসলাম বলেন, নান্টুসহ যারা এই হামলা করেছে, তারা এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। একটি তুচ্ছ ঘটনায় আকরামের ছেলেমেয়েকে উত্ত্যক্ত করত। গতকাল মেয়েটাকে নান্টু গালিগালাজ করেছে। আর তার প্রতিবাদ করায় আকরামকে হত্যা করা হয়। তারা এলাকার সবাই নান্টুসহ অন্যদের ফাঁসি চান। তারা যেন জামিনেও মুক্ত না হতে পারে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
আকরামের স্ত্রী মুক্তি বেগম বলেন, ‘ওরা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আমি চাই, ওদের ফাঁসি হোক। ওরা যেন পালিয়ে যেতে না পারে।’
আকরামের মেয়ে রাকিয়া আলফির ১০ এপ্রিল এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আজ ছিল ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা। নিহত আকরাম আলীর মেয়ে রাকিয়া আলফি রাজশাহী শিরোইল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে। সে রাজশাহীর অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
বাবার লাশের সামনে দাঁড়িয়ে রাকিয়া বলে, ‘গতকাল আমি প্রাইভেট পড়া শেষ করে অটোরিকশা থেকে নামি। পরে নান্টু ও তার সহযোগীরা আমাকে গালি দেয়। আমি কিছু না বলে বাসায় গিয়ে বলি। পরে বাবা প্রতিবাদ করতে যান। তবে নান্টুর বাবা–মা কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ছেলেকে লেলিয়ে দিয়েছে। এ কারণে আমার বাবাকে মেরে ফেলা হয়েছে।’
রাকিয়া আরও বলে, ‘আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে বাবাকে হারিয়েছি। ওরা বাবাকে মেরে ফেলেছে। আমি বাপকে হারিয়েছি। এটার দুঃখ ভোলার মতো না। আমি ফাঁসি চাই।’
নগরের বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহমেদ বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলা হয়েছে। তাঁরা আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছেন।
আরও পড়ুনউত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবা খুন, লাশ রেখে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে মেয়ে৫ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য় আকর ম আকর ম র পর ক ষ গতক ল নগর র ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
মাগুরছড়া ট্র্যাজেডির ২৮তম বার্ষিকী পালিত
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া ট্র্যাজেডির ২৮তম বার্ষিকী মানববন্ধন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে।
গতকাল শনিবার সকাল ১১টায় মাগুরছড়া গ্যাসক্ষেত্রের সামনে পাহাড় রক্ষা পরিবেশ, উন্নয়ন সোসাইটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের আয়োজনে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
মৌলভীবাজার জেলা পাহাড় রক্ষা পরিবেশ ও উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি ময়নুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও প্রভাষক সেলিম আহমেদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য দেন কমলগঞ্জ সরকারি গণমহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক হামিদা খাতুন, সাংবাদিক আব্দুর রাজ্জাক রাজা, নিছসা সভাপতি আব্দুস সালাম, সাধারণ সম্পাদক রাসেল হাসান বক্ত, পরিবেশকর্মী সাজু আহমেদ, শাহারা ইসলাম রুহিন, শ্রমিক নেতা দুলাল মিয়া, ছাত্রনেতা লিটন গাজী, মিনহাজুল ইসলাম মুন্না, আব্দুল মতিন, মিসবাউর রহমান, আদিবাসী নেতা সুচিনগুল প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এখনও বাংলাদেশ সেই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী মার্কিন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারেনি। বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে নিষ্ক্রিয় হলেও দেশের স্বার্থরক্ষায় আন্দোলনকারীরা সরব রয়েছেন। ২৮ বছর পার হয়ে গেলেও দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও পরিবারের ক্ষতিপূরণ আদায়ে সচেতন হয়নি সরকার। বিষয়টি আমলে নেয়নি কোম্পানি।