ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় রডবাহী ট্রাক উল্টে প্রায় ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা।

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) ভোর থেকে মহাসড়কের জামালদী থেকে ভবেরচর বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত এ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। 

জানা গেছে, শুক্রবার আনুমানিক ভোর ৪টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনের মেঘনা ব্রিজের ঢালে জামালদী এলাকায় একটি রডবাহী ট্রাক উল্টে যায়। ট্রাকটি সড়ক থেকে সরাতে সময় লাগায় সড়কে এ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে রডবাহী ট্রাক সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে যানবাহনের চাপ ও সড়কের উল্টো পথে যানবাহন চলায় সড়কে গতি কমে যায়।

কুমিল্লা থেকে ঢাকাগামী তিশা পরিবহনের বাসচালক বিল্লাল হোসেন জানান, ভোর ৫ টার দিকে কুমিল্লা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয় তিনি। কিন্তু আলীপুরা এলাকায় এসে তিনি যানজটে আটকা পড়েন। 

ইমরান হোসেন নামে এক বাসের যাত্রী বলেন, “আমি দরি বাউশিয়া থেকে সকাল ৬ টায় বাসে উঠেছি। দুই ঘণ্টা হলো বাস একই জায়গায় আছে। ৩৫ কিলোমিটার মহাসড়ক ৩৫ মিনিটে অতিক্রম করার কথা ছিল। কিন্তু যানজটে আটকে পড়ে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হচ্ছে।”

ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শওকত হোসেন জানান,  এক‌টি রডবাহী ট্রাক সড়কে উল্টে পড়ে। এতে ট্রাকে থাকা রডগুলো  সড়কে ছড়িয়ে-ছি‌টিয়ে পড়ে। ফলে কিছু সময় যান চলাচল বন্ধ ছিল ঢাকগামী লেনে। যানজট নিরসনে পুলিশ কাজ করছে।

ঢাকা/রতন/টিপু

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক র য নজট রডব হ

এছাড়াও পড়ুন:

পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে

অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।

১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’

এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।

পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।

পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।

আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)

সম্পর্কিত নিবন্ধ