কয়রায় জামায়াতের কর্মীকে হত্যার অভিযোগে ১২ বছর পর মামলা, আসামি সাবেক এমপিসহ ১১৩
Published: 18th, April 2025 GMT
জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশের প্রতিবাদে খুলনার কয়রায় বিক্ষোভ মিছিলে গুলি করে দলটির এক কর্মীকে হত্যার ঘটনায় ১২ বছর পর মামলা হয়েছে। মামলায় খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সোহরাব আলী, আক্তারুজ্জামানসহ ১১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এক যুগ আগের ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নিহত জামায়াত কর্মী জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী ছবিরন নেছা কয়রার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে আবেদনটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করতে কয়রা থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন। আজ শুক্রবার কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার মাইনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলায় আসামিদের মধ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ আইনজীবী ও সাংবাদিকদের নামও আছে। উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন কয়রা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম, কয়রা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহারুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিজয় কুমার, সহসভাপতি আবদুস সাত্তার পাড়, আইনজীবী আরাফাত হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, কয়রা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন, ভোরের কাগজের কয়রা প্রতিনিধি সিরাজুদ্দৌলা (লিংকন) প্রমুখ।
মামলার আরজিতে বলা হয়, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের উদ্যোগে কয়রা সদরে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল প্রতিহত করতে তখন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্বে হামলা হয়। হামলায় অন্তত ৩১ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে বাদীর স্বামী জাহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ সময় আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিতেও বাধা দেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা।
মামলার ৫২ নম্বর আসামি কয়রা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামলায় উল্লিখিত ঘটনার সময় আমি খুলনা জেলা শহরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলাম। ঘটনার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। মামলায় আমার নাম থাকাটা বিব্রতকর।’
মামলার বাদী ছবিরন নেছা জানান, তাঁর স্বামী জাহিদুল ইসলাম দিনমজুর ছিলেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় জানতে পারেন তাঁর স্বামী গুলিতে নিহত হয়েছেন। তখনকার সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনো তিনি বয়ে বেড়াচ্ছেন। তাই তিনি এই হত্যার বিচারের দাবিতে মামলাটি করেছেন। তবে মামলার আসামি তালিকায় সাংবাদিকদের নাম থাকার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না বলে মুঠোফোনে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জামায়াতের উপজেলা আমির মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনার দিন শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশে আওয়ামী লীগ সশস্ত্র হামলা চালায়। এ সময় বহু নেতা-কর্মী আহত হন। এর মধ্যে ঘটনাস্থলে একজন নিহত হন। সে সময় মামলা করার সাহস করেনি কেউ। এখন দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হওয়ায় ভুক্তভোগীর পরিবার হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার বলছি, মামলায় যাতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কারও নাম জড়ানো না হয়। কেউ যদি অপরাধে জড়িত থাকে, অবশ্যই তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। কিন্তু কাউকে হেয়প্রতিপন্ন কিংবা হয়রানি করতে মামলায় আসামি করা উচিত নয়। এতে সুবিচার করার প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল ইসল ম ঘটন র উপজ ল আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া ইরানে যুক্তরাষ্ট্রকে ঠেকাতে বিল আনছেন বার্নি স্যান্ডার্স
ডেমোক্র্যাট দলীয় মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স গতকাল শনিবার ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি একটি বিল আনতে যাচ্ছেন, যাতে বলা হয়েছে, কংগ্রেসের স্পষ্ট অনুমতি ছাড়া ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যেন কোনো সামরিক অভিযান চালাতে না পারে। সেই উদ্দেশ্যে ফেডারেল সরকারের অর্থ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হবে।
বার্তা সংস্থা আনাদোলুর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
স্যান্ডার্স সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’–এ এক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমাদের যুক্তরাষ্ট্রকে নেতানিয়াহুর অবৈধ ইরান যুদ্ধের ফাঁদে ফেলা যাবে না।’
বার্নি আরও বলেন, ‘আমি এমন একটি আইন আনতে যাচ্ছি, যাতে কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া ইরানে বা ইরানের বিরুদ্ধে কোনো সামরিক শক্তি ব্যবহারে ফেডারেল তহবিল ব্যবহার করা যাবে না। তবে আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকবে।’
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক নীতির কঠোর সমালোচক সিনেটর স্যান্ডার্স। গত শুক্রবারও নেতানিয়াহুর একতরফা ইরান হামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এতে করে পুরো অঞ্চলে বড় যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে।
স্যান্ডার্সের বিল উত্থাপনের এই ঘোষণার পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ঘিরে ওয়াশিংটনে বাড়তে থাকা উদ্বেগ।
গত শুক্রবার ভোররাতে ইসরায়েল ইরানের রাজধানী তেহরানসহ আটটি শহরে বড় আকারের বিমান হামলা চালায়। লক্ষ্য ছিল পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা এবং ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কারখানা। এতে ইরানের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানীরা নিহত হন।
সেই রাতেই ইরান ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালায়। প্রথমে প্রায় ১০০ ড্রোন ছোড়ে এবং পরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
ইরানের দাবি, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ২০ শিশুসহ অন্তত ৮০ জন নিহত হয়েছেন ও ৩২০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। শনিবারও হামলা অব্যাহত ছিল।