শরীয়তপুরের নড়িয়ায় পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে যাওয়ায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত নড়িয়া পৌরসভা এলাকায় এ আদেশ বলবৎ থাকবে।

সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে উপজেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে ১৪৪ ধারার আদেশ প্রচার করা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ১৪৪ ধারার নোটিশে বলা হয়, নড়িয়া উপজেলার বিএনপির দুটি পক্ষ একই স্থানে কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা থাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষায় পৌরসভা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এ সময়ের মধ্যে কোনো সভা, জমায়েত, মাইক ব্যবহার বা আইনশৃঙ্খলার পরিপন্থী কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযোগ উঠেছে, নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদের নেতৃত্বে পদ্মা নদী থেকে বালু তুলে বিক্রি করছে একটি চক্র। ফরিদ আহমেদ নড়িয়ার চরআত্রা এলাকার স্তূপ করা ১০ কোটি ঘনফুট বালু নিলামে কিনেছেন। কিন্তু তিনি ড্রেজার লাগিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন। এতে নদীর তীর রক্ষা বাঁধ ও ফসলি জমি ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে। বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে ১৪, ১৫ ও ১৬ এপ্রিল নড়িয়ার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, অবস্থান ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মহিউদ্দিন আহম্মেদ, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল এস এম ফয়সাল, ঢাকার কলাবাগান থানা মহিলা দলের সভাপতি শামীমা জামানসহ নেতা–কর্মীরা অংশ নেন।

আরও পড়ুনপদ্মার বালু উত্তোলন ঘিরে নড়িয়ায় বিএনপির দুই পক্ষ মুখোমুখি৪ ঘণ্টা আগে

নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, নড়িয়ায় বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলের দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে যায়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নড়িয়ায় বিএনপির দুটি পক্ষ একই সময়ে একই স্থানে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে, এমন আশঙ্কায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। নদীর তীরে স্তূপ করে রাখা ড্রেজিং মাটি বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হলেও নির্ধারিত এলাকা ছাড়িয়ে বালু উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করেছি। তারা নির্দেশনা না মানলে, তাদের কার্যাদেশ বাতিল করা হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র দ অবস থ ন ১৪৪ ধ র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।

মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।

সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।

প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।

আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।

মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। 

মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রামে সাংবাদিক পরিচয়ে হোটেল কক্ষে তল্লাশি, সমালোচনা 
  • ভারতে কোনো বাংলাদেশি থাকলে উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠাতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচনের জন‌্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • গাজীপুরে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে কারখানার কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে মারধর, আটক ৪৩
  • তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
  • বিএনপি ও গণ অধিকারের মধ্যে উত্তেজনার জেরে পটুয়াখালীর ২ উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি
  • দীর্ঘ ছুটি শেষে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় ফিরছে মানুষ