নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন অক্ষরে-অক্ষরে প্রয়োগের মধ্য দিয়ে নির্বাচনে যেতে হবে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
Published: 20th, April 2025 GMT
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ছত্রে-ছত্রে, অক্ষরে-অক্ষরে প্রয়োগের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে একটি নির্বাচনে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এই মন্তব্য করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, পুরোনো যে সিস্টেম (ব্যবস্থা) রয়েছে, তা কাঠের পেরেক মারার মতো। যখন ইচ্ছা তখন একটি দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করে দেওয়া, একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে নষ্ট করা—এই সুযোগ ছাত্র-জনতা এবার আর দেবে না।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, তাঁরা নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) বলেছেন, নতুন বাংলাদেশে ইসিকে একটি সুন্দর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
বিগত নির্বাচনগুলোতে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক। তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ বিষয়ে তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, আওয়ামী লীগ দেশ ও দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ফ্যাসিস্ট কাঠামোতে নিয়ে গিয়েছিল। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল। এর দায় নির্বাচন কমিশনেরও। বিগত নির্বাচনগুলোতে যাঁরা প্রার্থী হয়ে অংশ নিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের যাঁরা অনিয়মে যুক্ত হয়েছেন, তাঁদের বিষয়ে তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, নির্বাচন কমিশনকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে সার্টিফিকেশন দিতে হবে যে নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে কি না। যাতে করে পরবর্তী সময় একটি প্রাতিষ্ঠানিক আকারে, ব্যাপ্তি আকারে নির্বাচন কমিশনকে আইনের আওতায় আনা যায়। তাঁরা দেখেছেন, নির্বাচন কমিশন গত ১৫ বছরে কোনো সার্টিফিকেশন দেয়নি। বরং বিভিন্ন দলীয় অফিস থেকে সার্টিফিকেশনগুলো এসেছে।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আরও বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দিতে সশরীর আসার বিধান করা, প্রার্থীদের হলফনামা তদন্ত করে সত্যতা নিরূপণ করা, নির্বাচনী সহিংসতা রোধে আচরণবিধি ও ব্যয়ের বিধিতে পরিবর্তন আনা, ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া বন্ধ করা, হলফনামায় ভুল তথ্য থাকলে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল ও নির্বাচিত হলেও যেন তাঁরা সংসদে থাকতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা করা, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য সময় বাড়ানো, রাজনৈতিক দলগুলো যেন অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চা করে, তা মনিটরিং করার কথা তাঁরা তুলে ধরেছেন। এ ছাড়া প্রতিটি দলকে নতুন করে নবায়ন করা, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়নের তাগিদ তাঁরা দিয়েছেন।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সিইসির সঙ্গে বৈঠক করতে তাঁর কার্যালয়ে যায়। এনসিপির প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায়, খালেদ সাইফুল্লাহ, মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন ও তাজনুভা জাবীন।
আরও পড়ুনসিইসির সঙ্গে বৈঠকে এনসিপি৩ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এনস প র ম খ য সমন বয়ক ন স র দ দ ন প টওয় র ব যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।