ঢাকা থেকে যেসব ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সদস্য দেশের ভিসা ইস্যু করা হয় না, সেসব দেশের জন্য ঢাকায় একটি একক ভিসা সেন্টার খোলার অনুরোধ জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

সোমবার (২১ এপ্রিল) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মিচেল মিলারের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এ অনুরোধ জানান।

বৈঠকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সংকট, অভিবাসন, মানবপাচার, চোরাচালান রোধ এবং বাংলাদেশের চলমান প্রশাসনিক সংস্কার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “ইইউভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশ একটি অন্যতম প্রধান জনশক্তি রপ্তানিকারক দেশ। শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা ও পর্যটনসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে বাংলাদেশিরা নিয়মিত এসব দেশে যাতায়াত করেন। কিন্তু ভিসা পেতে নয়াদিল্লি যেতে হওয়ায় তা সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল ও ভোগান্তিকর। ঢাকায় একটি ইইউভুক্ত দেশের ভিসা সেন্টার স্থাপন সময়ের দাবি।”

উত্তরে রাষ্ট্রদূত মিচেল মিলার জানান, তিনি এ প্রস্তাব ইইউভুক্ত দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরো বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী ও অন্যতম অংশীদার। ইইউর সহায়তায় অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।

রাষ্ট্রদূত জানান, ইইউ বাংলাদেশের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে এবং এ ক্ষেত্রে দক্ষতা, প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা দিয়ে সহযোগিতার আগ্রহ রাখে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে ইইউভুক্ত দেশে কর্মশালা আয়োজনের অনুরোধ জানান।

আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে রাষ্ট্রদূতের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক। ধীরে ধীরে এটি আরো উন্নত হচ্ছে।”

এ সময় রাষ্ট্রদূত বলেন, “বাংলাদেশে সংঘবদ্ধ অপরাধ ও অপরাধ পরিসংখ্যান নিয়ে অনেক ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। সঠিক তথ্য সরবরাহই গুজব প্রতিরোধের প্রধান উপায়।”

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, “সরকারিভাবে বাংলাদেশে ১২ লাখ রোহিঙ্গা নিবন্ধিত হলেও বাস্তবে এর চেয়ে বেশি শরণার্থী কক্সবাজারে অবস্থান করছে, যা ওই অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি। রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নয়নে দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলো কাজ করছে।”

মানবপাচার ইস্যুতে রাষ্ট্রদূত বলেন, “প্রতি বছর বাংলাদেশ ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করে, যাদের অনেকে দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে প্রাণ হারায় বা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।” তিনি বাংলাদেশ, লিবিয়া ও ইইউর মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সংলাপ এবং ভবিষ্যতে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তাব দেন। উপদেষ্টা এতে সম্মতি প্রকাশ করে ইইউকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানান।

বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি) খন্দকার মো.

মাহাবুবুর রহমান, যুগ্মসচিব মো. জসীম উদ্দিন খান এবং ইইউ ডেলিগেশনের কাউন্সেলর জুরেট স্মলসকেট মারভেল, ফার্স্ট সেক্রেটারি (পলিটিক্যাল) সেবাস্টিয়ান রাইগার-ব্রাউনসহ উভয় পক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন র ধ জ ন র অন র ধ

এছাড়াও পড়ুন:

ফেস্টুন অপসারণ করায় ইউএনওকে শাসালেন বিএনপি নেতা 

ফেস্টুন অপসারণ করায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়সাল আহমেদকে শাসিয়েছেন এক বিএনপি নেতা। তিনি ইউএনওকে আগের স্থানেই ফেস্টুন লাগিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, “তা না হলে যেটা করা দরকার, সেটাই করব।”

এই বিএনপি নেতার নাম কে এম জুয়েল। তিনি রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুলে তার বাড়ি। 

গত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের সড়ক বিভাজকে থাকা বিভিন্ন দলের ফেস্টুন অপসারণ করেন ইউএনও ফয়সাল আহমেদ। বিষয়টি জানতে পেরে ইউএনওকে ফোন করে ধমকান জুয়েল।

কে এম জুয়েলের ফোনকল রেকর্ড পাওয়া গেছে। এতে শোনা গেছে, কে এম জুয়েল বলেছেন- “আজকে একটা ঘটনা ঘটেছে, আমি শুনেছি। আমি ইঞ্জিনিয়ার কে এম জুয়েল বলছি, সম্ভাব্য ক্যান্ডিডেট। আপনার গোদাগাড়ী থানার প্রোপারে যে পোস্টার সরিয়েছেন, এই বিষয়ে কিছুক্ষণ আগে আমাকে ইনফর্ম করা হয়েছে। সেখানে আমার পোস্টার ছিল। জামায়াত-বিএনপির পোস্টার ছিল। আপনি যে হটাইছেন, এর কারণ কী? কোনো পরিপত্র আছে, না ইচ্ছে করেই?”

ইউএনও তখন বলেন, “জনগণ অভিযোগ দিয়েছে।” জুয়েল বলেন, “জনগণ তো অনেক অভিযোগ দিয়েছে। সমগ্র গোদাগাড়ী থানাতে ভর্তি হয়ে আছে পোস্টার। তোলেন, সব তোলেন।”

এ সময় ইউএনও কিছু বলতে চাইলে তাকে থামিয়ে দিয়ে জুয়েল বলেন, “শোনেন, আমি যেটা বলছি লিগ্যাল রাইট নিয়ে বলছি, সেটার সঠিক অ্যানসার করবেন। আপনি কেন ওই জায়গার পোস্টার তুলেছেন, আর অন্য জায়গার তুলছেন না কেন? আমি ঢাকাতে আছি, আমি আসতেছি।”

ইউএনও বলেন, “আচ্ছা ঠিক আছে।” জুয়েল বলেন, “না, আপনি যেখান থেকে পোস্টার তুলেছেন, সেখানে আপনি সাবমিট করবেন পোস্টার।” কথা না বাড়িয়ে ইউএনও বলেন, “ঠিক আছে।”

এ সময় আরো ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপি নেতা জুয়েল বলেন, “কালকে যেন আমরা ওখানে দেখতে পাই, পোস্টার যেখানে ছিল। ঠিক আছে মানে কী? অবশ্যই করবেন। না হলে যেটা করা দরকার সেটাই করব। আপনার এগেইনেস্টে যেরকম স্টেপ নেওয়া দরকার, সেটাই আমি করব। বিশেষ করে আমরা করব। আমার নেতার ছবি তুলেছেন আপনি ওখান থেকে। জাস্ট রিমেম্বার ইট।”

জুয়েল বলতে থাকেন, “নরসিংদী বাড়ি দেখান আপনি, না? কোন দল থেকে আসছেন আপনি? কোন দল থেকে এসেছেন? কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেছেন আপনি? কালকে পোস্টার ভদ্রলোকের মতো লাগাবেন। ফাইজলামি! এহ, বিশাল ব্যাপার। উনি টিএনও হয়ে গোদাগাড়ীতে আসছেন।”

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বলেন, “ডাইংপাড়া মোড়ে ব্যানার-ফেস্টুন এরকম পর্যায়ে ছিল যে, যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছিল। পাশাপাশি পৌরসভার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছিল বলে অভিযোগ ছিল। স্থানীয় জনগণ এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভা থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে সরানোর জন্য। দুই-তিনবার মৌখিকভাবে ও লিখিত আকারে জানানো হয়েছিল। না সরানোর কারণে ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে পৌরসভায় রাখা হয়েছে।”

তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একাধিক সভাতেও আলোচনা হয়েছিল। সেখান থেকে সকল রাজনৈতিক দলের পোস্টারই পৌরসভার পক্ষ থেকে সরানো হয়েছে। তবে, বিএনপি নেতা কে এম জুয়েলের ফোনে শাসানোর বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা কে এম জুয়েল বলেন, “ইউএনওর কাছে জনগণ অভিযোগ করেছে, আর আমরা কি মানুষ না? আমরা জানোয়ার? আমার ছবি তুলে ফেলুক আপত্তি নাই। আমার নেতার ছবিতে হাত দিয়েছে কেন? তার কাছে কি নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পোস্টার তুলে ফেলতে? তিন মাসের মধ্যে কি নির্বাচন? উনি জাস্টিস করতেন, আমার কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু গরু-ছাগলের মতো আচরণ করবেন, তা তো হয় না।”

বিষয়টি নিয়ে কোথাও আলোচনা হয়নি, ইউএনও কোনো চিঠিও দেননি, দাবি করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “গতকাল আমার এক লোককে ডেকে ইউএনও বলেছেন, যেখানে পোস্টার ছিল, দয়া করে আপনারা লাগিয়ে নেন। কিন্তু, আমরা তো লাগাব না। ইউএনওকেই লাগাতে হবে।”

উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একজন সদস্য জানান, প্রায় দুই মাস আগে উপজেলা সদরের এসব ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টারের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপন করেন এক ব্যক্তি। এক মাসেও সেগুলো অপসারণ না হওয়ায় পরবর্তী মাসের সভাতেও বিষয়টি আলোচনায় ওঠে। ওই সভায় ট্রাফিক পুলিশ আপত্তি করেছিল যে, ফেস্টুনের কারণে রাস্তার একপাশ থেকে অন্যপাশ দেখা যায় না। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ দুটি সভার মধ্যে প্রথম সভায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল ছিলেন না। দুই সভার মাঝে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি পুনর্গঠন করা হলে তিনি পরবর্তী সভায় উপস্থিত ছিলেন।

তবে, কোনো আলোচনা হয়নি দাবি করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল বলেন, “আমি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য। পোস্টার নিয়ে কোনো আলোচনা সভায় হয়নি। ইউএনও আমাদের না জানিয়ে এভাবে ফেস্টুন অপসারণ করে ঠিক করেননি। সেখানে আমাদের নেতার ছবি ছিল।”

ঢাকা/কেয়া/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সারা দেশে সাত দিনে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ২৮৮
  • জুলাইয়ে মব তৈরি করে ১৬ জনকে হত্যা, অজ্ঞাতনামা ৫১ লাশ উদ্ধার
  • শৈলকুপায় ইউপি কার্যালয়ে তালা, বিএনপি নেতাসহ আটক ৬
  • ইউনিয়ন পরিষদে তালা দেয়ায় বিএনপি নেতা আটক
  • গোপালগঞ্জে এনসিপির অনেকের জীবননাশের হুমকি ছিল, আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগ করা হয়েছে
  • ‘ভূমিকম্পে ছিন্নভিন্ন হওয়া দেশকে স্থিতিশীলতায় ফিরিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার’
  • ফেস্টুন অপসারণ করায় ইউএনওকে শাসালেন বিএনপি নেতা 
  • কক্সবাজারে ৩৫ পুলিশ সদস্যের পোশাকে থাকবে ‘বডি ওর্ন ক্যামেরা’
  • ২৯ জুলাই-৮ আগস্ট ‘ফ্যাসিবাদী শক্তির’ নৈরাজ্যের আশঙ্কায় এসবির সতর্কতা
  • ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট সময়কালে ফ্যাসিবাদী শক্তি নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে, এসবির প্রতিবেদন