‘শেষের কবিতা’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত একটি অনন্য অসমাপ্ত প্রেমের উপন্যাস, যাকে লেখকের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। প্রেমের পরিণতি হবে আনন্দের, একে অপরের সঙ্গে আবদ্ধ হবে এটাই স্বভাবিক। এ উপন্যাসে প্রেম ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত হয়। যেখানে নবশিক্ষিত রুচিশীল সমাজের চিত্র ফুটে উঠেছে।
আমি চোখ মেললুম আকাশে,/ জ্বলে উঠল আলো/ পুবে-পশ্চিমে।/ গোলাপের দিকে চেয়ে বললুম ‘সুন্দর’ সুন্দর হলো সে। পঙ্‌ক্তিগুলো  উচ্চারিত হয় সুহৃদদের কণ্ঠে। পঁচিশে বৈশাখ কবিগুরুর ১৬৫তম জন্মদিন। দিবসটি সামনে রেখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘শেষের কবিতা’ উপন্যাস নিয়ে পাঠচক্র করেছেন তিতুমীর কলেজের সুহৃদরা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’ বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য সৃষ্টি। এখানে প্রেমের প্রকৃতি, আত্ম-অন্বেষণ এবং সম্পর্কের জটিলতা অত্যন্ত শিল্পিত ভঙ্গিতে উপস্থাপন করেছেন রবীন্দ্রনাথ।  সে সময়ের শহুরে অভিজাত ও শিক্ষিত সমাজের সাহিত্যপ্রেমী তরুণ-তরুণীদের কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে উপন্যাসের কাহিনি। অমিত রায় ও লাবণ্যের মধ্যকার সম্পর্কের টানাপোড়েন, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব এবং আবেগের উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে উপন্যাসটি পাঠকদের এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা দেয়।
এ উপন্যাসের পাঠচক্র আয়োজনের মাধ্যমে শুধু রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ভাবনাই নয়, বরং প্রেম, জীবনবোধ এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা নিয়ে তরুণদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর একটি চমৎকার প্রয়াস। এ আয়োজন সবার মধ্যে সাহিত্যচর্চার নতুন আগ্রহ তৈরি করবে বলে মতপ্রকাশ করেন অংশগ্রহণকারীরা।
পাঠচক্রে উপস্থিত ছিলেন– কলেজ সুহৃদ আহ্বায়ক আশিকা নিগার, যুগ্ম আহ্বায়ক ফাহাদ আল উমরান, শরিফ উদ্দিন, ফেরদৌস রহমান রোদ, সদস্য সচিব মুহিতুল ইসলাম মুন্নাসহ সুহৃদ সমাবেশের অন্য সদস্যরা। এ ছাড়া কলেজের বিভিন্ন বিভাগের সাহিত্য অনুরাগী শিক্ষার্থীরা এ আয়োজনে অংশ নেন।
অনুষ্ঠান শেষে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং স্বেচ্ছাসেবী কাজের পরিকল্পনা নিয়ে মতবিনিময়  হয়। সমকাল সুহৃদ সমাবেশের এই ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়। v
সদস্য সচিব 
সুহৃদ সমাবেশ, সরকারি তিতুমীর কলেজ

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স হ দ সম ব শ উপন য স

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ