দেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতারা ইন্টারনেটের গতি বাড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী, গ্রাহক ৫০০ টাকায় ১০ এমবিপিএস (মেগাবাইট পার সেকেন্ড) গতি পাবেন।

কিন্তু গ্রাহক–অভিজ্ঞতা ভিন্ন। গ্রাহকের অভিযোগ, ৫০০ টাকার প্যাকেজে ইন্টারনেটের যে গতির কথা বলা হয়, তা আদতে পাওয়া যায় না।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ২০২১ সালে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সর্বনিম্ন দাম ৫০০ টাকা করার জন্য নির্দেশ দেয়। সে ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের গতি নির্ধারণ করা হয় ৫ এমবিপিএস।

আরও পড়ুনইন্টারনেটের দাম ৩ স্তরে কমছে: ফয়েজ আহমদ২১ এপ্রিল ২০২৫

চার বছর পর এসে এই প্যাকেজের (৫০০ টাকার) ইন্টারনেটের গতি দ্বিগুণ (১০ এমবিপিএস) করার ঘোষণা দিল ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)। গত শনিবার এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

২০২১ সালের জুনে বিটিআরসি ‘এক দেশ এক রেট’ নীতি চালু করে। এই নীতির আওতায় সারা দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতাদের একই দামে সংযোগ দিতে বলা হয়। এতে তিনটি প্যাকেজ রাখা হয়। প্রথম প্যাকেজের মূল্য মাসে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা, গতি ৫ এমবিপিএস। দ্বিতীয় প্যাকেজের মূল্য মাসিক ৮০০ টাকার মধ্যে, গতি ১০ এমবিপিএস। আর তৃতীয় প্যাকেজের মূল্য মাসিক ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে, গতি ২০ এমবিপিএস। সম্প্রতি বিটিআরসি জানিয়েছে, এই ‘এক দেশ এক রেট’ নিয়ে আবার কাজ হবে।

দেশের বিভিন্ন স্থানের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের (আইএসপি) সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেউ ইতিমধ্যে নতুন ঘোষিত গতি (১০ এমবিপিএস) বাড়িয়েছে। কেউ শিগগির তা বাস্তবায়ন করবে।

এখন প্রশ্ন হলো, ৫০০ টাকায় ১০ এমবিপিএসের যে ঘোষণা এসেছে, গ্রাহক কি আসলেই এই গতির ইন্টারনেট পাবেন?

আরও পড়ুনমোবাইল অপারেটরদের একটি দাবি পূরণ, গ্রাহক কতটা সুফল পাবেন১৯ এপ্রিল ২০২৫

দেশের গ্রাহকেরা সব সময়ই অভিযোগ করে আসছেন, যে গতির ইন্টারনেট দেখে তাঁরা সংযোগ নেন, ব্যবহারের সময় সে গতি পাওয়া যায় না।

রাজধানীর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা ফয়সাল আহমেদ তাঁর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ৫০০ টাকায় ৫ এমবিপিএসের সংযোগ নিয়ে ব্যবহার করছেন। কিন্তু তিনি ২ থেকে ৩ এমবিপিএসের মতো গতি পান।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরার একটি আইএসপি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আশিকুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ভাগাভাগির নীতি অনুযায়ী একটি সংযোগ কয়েকজন গ্রাহককে দেওয়া হয়। ফলে ১০ এমবিপিএসের ক্ষেত্রে একজন গ্রাহক হয়তো গড়ে ৩ এমবিপিএসের মতো গতি পাবেন।

বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী, একটি সংযোগ সর্বোচ্চ আটজনের মধ্যে ভাগ করা যাবে। সে হিসাবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গ্রাহক যে সংযোগ পান, তা এই ভাগাভাগির ভিত্তিতেই পেয়ে থাকেন বলে জানায় আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো।

তবে গ্রাহকের একক সংযোগ নেওয়ারও সুযোগ আছে। সে ক্ষেত্রে দাম বেশি পড়ে।

তাহলে গ্রাহক কি ৫০০ টাকায় ১০ এমবিপিএস একেবারেই পাবেন না? এই প্রশ্নের জবাবে কয়েকটি আইএসপি প্রতিষ্ঠান বলে, পিক আওয়ারে, অর্থাৎ রাতের দিকে সব গ্রাহক যখন একসঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করেন, তখন গতি কমে যায়। আবার দিনের বেলায় বা অফপিক আওয়ারে (চাহিদা যখন কম থাকা) গতি বেড়ে যায়।

আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের দিক থেকে গতি বাড়ানোর জন্য একটা প্রত্যাশা ছিল। সব মিলিয়ে তাঁরা ৫০০ টাকায় ১০ এমবিপিএস দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে ভাগাভাগির নীতিতে এই প্যাকেজের গ্রাহক ১০ এমবিপিএসের চেয়ে কম গতি পাবেন।

আরও পড়ুনব্যান্ডউইডথের দাম কমানোর সুবিধা গ্রাহক কতটা পাবেন২৫ মার্চ ২০২৫

দেশে ইন্টারনেটের গতি ও মান নিয়ে অসন্তোষ আছে। সম্প্রতি এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, দেশের ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা বলে থাকেন, এ অঞ্চলে, বাংলাদেশে ইন্টারনেট অনেক সস্তা। কিন্তু এখানে যে মানের ইন্টারনেট দেওয়া হয়, তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট। সে হিসাবে মান বিবেচনায় দাম অনেক বেশি।

ইন্টারনেটের গতি পরীক্ষা ও বিশ্লেষণের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওকলার গত মার্চ মাসের হিসাব অনুযায়ী, ফিক্সড ব্রডব্যান্ডের গতিতে বিশ্বের ১৫৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০০তম।

বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী, দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গ্রাহকসংখ্যা ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি। আর লাইসেন্সধারী আইএসপি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২ হাজার ৪১৫; যদিও লাইসেন্সধারী, লাইসেন্স ছাড়াসহ সব মিলিয়ে দেশে আইএসপি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬ হাজারের বেশি বলে জানায় আইএসপিএবি।

আরও পড়ুনসাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানির সব ধরনের ইন্টারনেটের দাম কমছে ১০ শতাংশ২৩ মার্চ ২০২৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আইএসপিএবি যখন ১০ এমবিপিএসের ঘোষণা দেয়, তখন গ্রাহক ধরেই নেন, তিনি এই পরিমাণ গতিই পাবেন। কিন্তু এর সঙ্গে (প্যাকেজ) যেসব শর্ত থাকে, তা গ্রাহককে জানানো হয় না। ইন্টারনেট সেবার সঙ্গে যেসব শর্ত রয়েছে, তা স্পষ্ট করে গ্রাহককে জানাতে হবে। আগের ডিশ ব্যবসা এখন ইন্টারনেট ব্যবসায় রূপান্তর রয়েছে। এখানে পেশিশক্তি, চাঁদাবাজি, কাঙ্ক্ষিত সেবা না দেওয়ার মতো বিষয় আছে। গ্রাহক কোথায় অভিযোগ জানাবে, প্রতিশ্রুতির কতটা গতি গ্রাহককে দেওয়া হচ্ছে, এসব বিষয়ে বিটিআরসির ভূমিকা ও পর্যবেক্ষণ দরকার।

আরও পড়ুনমোবাইলে ইন্টারনেট গ্রাহক কমেছে ১.

৩২ কোটি ১৫ মার্চ ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব রডব য ন ড প রথম আল ক গ র হক ক ব ট আরস গ র হকক অন য য়

এছাড়াও পড়ুন:

ক্যাম্পাসে বিনা মূল্যে রাউটার ও ৫০০ টাকায় ১৫ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট দেবে বিটিসিএল, পাবেন যেভাবে

সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫০০ টাকায় ১৫ এমবিপিএস (মেগাবিট পার সেকেন্ড) ইন্টারনেট দেবে; সঙ্গে বিনা মূল্যে রাউটার দেবে তারা।

প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব গতকাল মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বিটিসিএলের ইন্টারনেট–সেবার বিষয়ে একটি পোস্ট দেন।

সেখানে বিটিসিএলের নতুন প্যাকেজটি তুলে ধরেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও হোস্টেলে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য বিশেষ প্যাকেজ দেবে বিটিসিএল।

জিপন নামে বিটিসিএলের প্যাকেজের আওতায় ক্যাম্পাস–১৫ নামের একটি ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু করা হচ্ছে। এতে ১৫ এমবিপিএস গতিতে মাসিক ৫০০ টাকায় ক্যাম্পাসে ইন্টারনেট দেওয়া হবে। সেবাটি শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য হবে।

বিটিসিএল টেলিফোন সেবা পরিচালনাকারী সরকারি সংস্থা। ২০০৮ সালের আগে এটি বাংলাদেশ টেলিগ্রাফ অ্যান্ড টেলিফোন বোর্ড (বিটিটিবি) নামে পরিচিত ছিল। পরে একটি কোম্পানিতে পরিণত করা হয়, নাম হয় বিটিসিএল।

বিটিসিএল এখন টেলিফোন, ইন্টারনেট, ডোমেইন, ব্যান্ডউইডথ সঞ্চালন ইত্যাদি সেবা দেয়। অবশ্য তাদের ইন্টারনেট–সেবার গ্রাহক অনেক কম। বেসরকারি ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বা আইএসপিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে বিটিসিএল।

জিপন ইন্টারনেট প্যাকেজের আওতায় তারা ১ লাখ ১৩ হাজার ১৭৬ গ্রাহককে সেবা দেয়।

নতুন প্যাকেজ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিটিসিএলের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নেটওয়ার্ক থাকা সাপেক্ষে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য বিটিসিএল ৫০০ টাকায় ১৫ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট দেবে। তাদের সেবা পেতে টেলিসেবা অ্যাপ বা মাইবিটিসিএল সাইটে গিয়ে নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) করে প্রয়োজনীয় নথিপত্র দিতে হবে। সাধারণত তিন দিনের মধ্যেই সংযোগ দেওয়া হয়।

সংযোগ দেওয়ার পর কোনো সমস্যা দেখা দিলে, সে ক্ষেত্রে তাদের হটলাইন ১৬৪০২ নম্বরে অথবা অ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে হয়। ২৪ ঘণ্টা সেবা পাওয়ার বিষয়টি তাদের জনবল ও সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে।

বিটিসিএল টেলিফোন লাইন ও আইএসপিদের মতো তারের মাধ্যমে ইন্টারনেট–সেবা দেয়। গ্রাহক চাইলে দুভাবেই ইন্টারনেট সংযোগ নিতে পারবেন।

বিটিসিএল জানায়, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকেই তারা ৫০০ টাকায় ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট–সেবা দিয়ে আসছে। ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য বলছে, ///////////১৫ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট দিতে তারা নিত ১৫ টাকা। ২০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট–সেবার মূল্য ১ হাজার ৫০ টাকা।////////////

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ফেসবুক পোস্টে জানান, ইন্টারনেট ও টেলিফোনের সংযোগ নিলে মাসিক চার্জের সঙ্গে অতিরিক্ত ১০০ টাকা যোগ হবে। টেলিফোন কল চার্জের ক্ষেত্রে বিটিসিএলের ‘অফিশিয়াল চার্জ’ প্রযোজ্য হবে। এই সেবা শুধু প্রিপেইড সেবা হিসেবে পাওয়া যাবে এবং অফার সীমিত সময়ের জন্য। এলাকাভিত্তিক সংযোগ ফি প্রযোজ্য।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ফেসবুক পোস্টে বিটিসিএলের আরও সেবার ব্যাপারে জানান। তিনি বলেন, বিটিসিএল তাদের ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) শ্রেণিতে কেনা ব্যান্ডউইডথের অতিরিক্ত ৪৫ শতাংশ বেনাপোলে ও ৪০ শতাংশ প্রণোদনা হিসেবে সারা দেশে দেবে।

আইএসপি শ্রেণিতে অতিরিক্ত ৪০ শতাংশ, সরকারি বা করপোরেট শ্রেণিতে ইন্টারনেট গ্রাহকদের অতিরিক্ত ৪০ শতাংশ, শিক্ষা শ্রেণিতে অতিরিক্ত ৪০ শতাংশ ও ডেটা সেন্টার শ্রেণিতে অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ ব্যান্ডউইডথ প্রণোদনা হিসেবে দেবে বিটিসিএল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আগ বাড়িয়ে উসকানিমূলক পদক্ষেপ নেবে না পাকিস্তান: ইসহাক দার
  • ক্যাম্পাসে বিনা মূল্যে রাউটার ও ৫০০ টাকায় ১৫ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট দেবে বিটিসিএল, পাবেন যেভাবে
  • পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষ, ৩ দিনে নিহত ৭১
  • পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষ, নিহত ৭১