কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগের কার্যালয়ে ঢুকলে চোখে পড়ে দেয়ালে টাঙানো একটি মানচিত্র। ধান-পেঁয়াজ, আঙুর, বাদামসহ বিভিন্ন শস্যদানা দিয়ে তৈরি হয়েছে কুতুবদিয়া উপজেলার মানচিত্রটি। মানচিত্রে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নকে শস্যচিত্রে ভরিয়ে রাখা হলেও সেখানে লবণের ঠাঁই হয়নি। যদিও উপজেলার ৬ হাজার ৭৬৮ একরজুড়ে এখন লবণ উৎপাদন হচ্ছে। অন্যদিকে উপজেলার আলী আকবরডেইল, কৈয়ারবিল, বড়ঘোপ ও লেমশীখালী ইউনিয়নের অন্তত ৩ হাজার একর জমিতে বোরো ধানের চাষ হচ্ছে। অবশিষ্ট জমি খালি পড়ে আছে। উপজেলায় কৃষিজমির পরিমাণ ১১ হাজার ১১৫ একর। চাষির সংখ্যা ১৫ হাজার ৫০০।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, গত বছর উপজেলার প্রায় ১১ হাজার একর জমিতে চাল উৎপাদন হয়েছিল ২০ হাজার ৩৮৩ মেট্রিক টন। চাহিদা ছিল ২১ হাজার ১১৫ মেট্রিক টন। ঘাটতির পরিমাণ ১ হাজার ২৯৮ মেট্রিক টন। উপজেলার লোকসংখ্যা ১ লাখ ৫৩ হাজার। লবণ আগ্রাসনের কারণে ধান চাষের জমি কমছে জানিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.

রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, একসময় খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল কুতুবদিয়া। এখন উৎপাদন কমে যাচ্ছে। একদিকে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসে ফসল উৎপাদনের জমি বিলীন হচ্ছে, অন্যদিকে লবণের আগ্রাসন এবং ভূগর্ভের পানি লবণাক্ত হয়ে পড়ছে। স্বাদুপানির অভাবে অনেক জায়গায় ধানসহ ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তা ছাড়া দ্বীপের অভ্যন্তরে স্বাদুপানি ধরে রাখার খাল ছিল ৯টির বেশি। পলি জমে সাতটি খাল ভরাট হয়ে গেছে। দখল-দূষণেও খালের পরিধি সংকুচিত হয়ে পড়ছে। আবার ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে সমুদ্রের লোনা পানি ঢুকেও ফসলহানি ঘটছে। লবণ উৎপাদনের মৌসুমে জমির বর্গা মূল্য বেড়ে যাওয়ায় কৃষকেরা ধান ও ফসল উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

কমছে ফসলের জমি

উপজেলার সবচেয়ে বেশি ধান ও সবজি চাষ হয় আলী আকবরডেইল ইউনিয়নে। ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকিও বেশি এই ইউনিয়নে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের খুদিয়ারটেক সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। এক যুগ আগে তাবলেরচর এলাকায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দেশের বৃহৎ বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্রেটিও সাগরের পানিতে লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি আলী আকবরডেইল ইউনিয়নের পুতিন্যার পাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, শতাধিক কৃষক বোরো ধানের চারা রোপণ করছেন। পরিত্যক্ত বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশেও কিছু জমিতে তরমুজসহ শাকসবজির চাষ চোখে পড়ে। তবে বেশির ভাগ এলাকায় লবণ চাষ হচ্ছে।

পুতিন্যার পাড়ায় চার কানি জমিতে বোরো চাষ করছেন স্থানীয় কৃষক আবু মুছা। প্রতি কানি জমি তিনি বর্গা নিয়েছেন ৭ হাজার টাকায়। আবু মুছা (৫৫) বলেন, ২৮ হাজার টাকা দিয়ে চার কানি জমি বর্গা নিয়ে তিনি ধান চাষে নামলেও ভয় দূর হচ্ছে না। কারণ, খেত থেকে আধা কিলোমিটার দূরে (পশ্চিমে) ভাঙা বেড়িবাঁধ। শুষ্ক মৌসুমে সাগর শান্ত থাকায় ভাঙা বাঁধ দিয়ে লোনা পানি ঢুকছে না। কিন্তু বর্ষাকাল কিংবা বৈরী পরিবেশে সাগরে উত্তাল হলে কিংবা নিম্নচাপ-ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে ফসল রক্ষার উপায় নেই।

কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবরডেইলে ধান চাষ কৃষকের। সম্প্রতি তোলা

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল র

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকায় অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে শনিবার

ঢাকায় দুই দিনব্যাপী অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে আগামী শনিবার। এতে অটোমোবাইল, কৃষি যন্ত্রপাতিসহ হালকা প্রকৌশল খাতের ২৬টি স্টল থাকবে। পাশাপাশি শিল্পের সহায়ক প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে আরও ১২টি। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ও অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই প্রদর্শনীর আয়োজন করছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকায় এডিসন প্রাইম ভবনের ছাদে এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। এই ভবনেই বিসিআইয়ের কার্যালয় অবস্থিত।

আজ বৃহস্পতিবার বিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী নিয়ে বিস্তারিত জানান চেম্বারটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী, বিসিআইয়ের পরিচালক মো. শাহেদ আলম, এস এম শাহ আলম, জিয়া হায়দার প্রমুখ।

বিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, হালকা প্রকৌশল খাতে বাংলাদেশে বর্তমানে ছোটবড় প্রায় ৫০ হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই খাতে কাজ করেন ১০ লাখ মানুষ। হালকা প্রকৌশল খাতে স্থানীয় বাজার ১২ বিলিয়ন ডলারের হলেও দেশীয় উৎপাদকেরা অর্ধেক পূরণ করতে পারছেন। তা ছাড়া হালকা প্রকৌশল খাতের বৈশ্বিক বাজারের আকার প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলার। তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাক খাত আর বেশি মূল্য সংযোজন করতে পারবে না। ফলে আমাদের অর্থনীতিকে টেকসই করতে হলে আমাদের অন্য খাতে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে হালকা প্রকৌশল খাত পারে বড় সম্ভাবনার।

অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর কৃষিজমি কমছে। কৃষকের বয়স বাড়ছে, তার কারণ তরুণেরা খুব কম কৃষিকাজে আসছেন। বিশ্বের অনেক দেশেই মোট জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশের কম কৃষিকাজে নিয়োজিত। ১০ শতাংশ মানুষ বাকি ৯০ শতাংশের জন্য খাদ্য জোগান দিচ্ছে। সে কারণে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। বাংলাদেশেও কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। তবে বড় অংশই আমদানি করতে হচ্ছে।

আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ১২০০ থেকে ১৫০০ কোটি টাকার কৃষি যন্ত্রপাতির বাজার আছে। তার মধ্যে দেশীয় কোম্পানিগুলো সরবরাহ করছে মাত্র ৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ। নীতিসহায়তা পেলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ