প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরোপিত বাড়তি শুল্ক থেকে রেহাই পাওয়া এবং আইএমএফের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ে ইতিবাচক অগ্রগতি আশা করছে বাংলাদেশ। ওয়াশিংটনে গত বুধবার এ দুই ইস্যুতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছে সফররত বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। বৈঠকে দুই ক্ষেত্রেই ঐকমত্যে পৌঁছার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। 
বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্কের বিষয়ে ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সফররত বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল বৈঠক করেছে। দুই পক্ষের নেতৃত্ব দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়-সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের জন্য বাড়তি শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত রয়েছে। বাংলাদেশ দেশভিত্তিক এই শুল্ক থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করছে। 

জানা গেছে, ইউএসটিআরের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো– যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হয় এমন কিছু পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া, আমদানি করা তুলার জন্য গুদাম সুবিধা দেওয়া ও অশুল্ক বাধা দূর করা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়োজাহাজ, এলএনজি ও তুলা কেনার পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা জানানো হয়। এ সময় ইউএসটিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই মুহূর্তে পদক্ষেপ নিলে বাণিজ্য ঘাটতি একেবারে কমে যাবে, তা কেউ আশা করে না। তবে বাংলাদেশের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিশ্চিত করা জরুরি। এ জন্য বাংলাদেশ কোন কোন পদক্ষেপ নেবে এবং কীভাবে নেবে, তার সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা চায় যুক্তরাষ্ট্র। শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা, তাদের কাজের পরিবেশের উন্নতিসহ শ্রম পরিস্থিতি, শ্রম আইন ও মেধাস্বত্ব আইনের প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের বিষয়েও জোর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। 
গত ২ এপ্রিল বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ওপর বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় ট্রাম্প প্রশাসন, যা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ৯ এপ্রিল। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ৭ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্টকে চিঠি দেন। ওই দিনই বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ারের কাছে চিঠি দেন। যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা শুল্ক তিন মাস স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়ে ওই চিঠি দেওয়া হয়। 

আইএমএফের কিস্তি নিয়ে আশাবাদী সরকার
ঢাকায় আসা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধি দল সম্প্রতি ফিরে গেছে। কিন্তু মুদ্রা বিনিময় হার অধিকতর নমনীয় করা ও কর রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের সুরাহা হয়নি। বর্তমানে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন সম্মেলনে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন অর্থ উপদেষ্টা ড.

সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। শনিবার থেকে প্রতিনিধি দলটি আইএমএফ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে অংশ নিচ্ছে। 
গত বুধবার আইএমএফের ডিএমডি নাইজেল ক্লার্কের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। বৈঠকের বিষয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রেস মিনিস্টার গোলাম মর্তুজা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। এতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা আলোচনায় আছি এবং একটি ঐকমত্যের কাছাকাছি পৌঁছেছি।’ 
সমকালের পক্ষ থেকে আইএমএফের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের দেরির কারণ জানতে চাইলে গতকাল ওশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেন, মূলত দুটি বিষয়ে আলোচনা শেষ হয়নি। দুটি বিষয় হলো– বিনিময় হারে অধিকতর নমনীয়তা এবং রাজস্ব আহরণে উন্নতি। এ ছাড়া আর্থিক খাতের দুবর্লতা কাটানোর বিষয়টিও তাদের আলোচনার মধ্যে রয়েছে। এসব বিষয় নিষ্পত্তি হলে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ছাড়ে বিষয়টি পর্ষদে উঠবে। 

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী মে মাসে আইএমএফের একটি কারিগরি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করার কথা রয়েছে। তারপর আগামী জুন নাগাদ দুই কিস্তি ছাড়ের প্রস্তাব সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদে উঠতে পারে। দুই কিস্তিতে ১৩০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার কথা। চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে শর্তগুলোর মধ্যে বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, রাজস্ব বাড়ানো, ভর্তুকি কমানো এবং আর্থিক খাতের কিছু শর্ত বাস্তবায়ন পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে ছাড় দিলেও প্রতিনিধি দল বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়হার অধিকতর নমনীয় করার বিষয়ে অবস্থান নেয়। তাদের প্রস্তাব, বিনিময় হার ‘ক্রলিং পেগ’ থেকে বাজারভিত্তিকের দিকে যেতে হবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আইএমএফ র উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

লন্ডন বৈঠকে বিচার ও সংস্কারের বিষয়টি নির্বাচনের মতো গুরুত্ব না পাওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক: এনসিপি

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত হতাশাজনক’ বলেছে দলটি।

আজ শুক্রবার রাতে এনসিপির এক বিবৃতিতে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহউদ্দিন সিফাত বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন।

এনসিপির বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের আলোচনাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে এনসিপি। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে লন্ডনে অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকটি ‘সংসদ নির্বাচন’ বিষয়ে দলটিকে আস্থায় আনতে সফল হয়েছে সরকার। জাতীয় ঐক্য, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা জরুরি। কিন্তু বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে নাগরিকদের প্রধান দাবি তথা বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি। এটা অত্যন্ত হতাশাজনক বলে মনে করে এনসিপি।

নির্বাচন প্রশ্নে সরকার কেবল একটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান ও দাবিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে বলে বারবার প্রতীয়মান হচ্ছে—এ কথা উল্লেখ করে এনসিপি আরও বলেছে, জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, জুলাই সনদ কার্যকর করা এবং বিচারের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন গণ-অভ্যুত্থানকে স্রেফ একটি ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে পরিণত করবে এবং রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন–আকাঙ্ক্ষাকে অবদমিত করবে।

জনগণের দাবি তথা জুলাই সনদ রচনা ও কার্যকর করার আগে নির্বাচনের কোনো তারিখ ঘোষিত হলে তা জনগণ মেনে নেবে না বলে উল্লেখ করেছে এনসিপি। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংস্কারের বিষয়গুলোর ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ও জুলাই সনদ রচনা এবং কার্যকর করেই আসন্ন জুলাইকে যথাযথ মর্যাদায় স্মরণ করার উদ্যোগ নিতে সরকারকে জোর দাবি জানাচ্ছে এনসিপি।’

জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নে জুলাই সনদ কার্যকর করা ও বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণার পরই নির্বাচন সংক্রান্ত আলোচনা চূড়ান্ত হওয়া উচিত বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে এনসিপি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা মঙ্গলবার আবার শুরু
  • বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, ভালো উদ্যোগ নিলেও বিরোধিতা আসে
  • আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশের কিস্তির প্রস্তাব উঠছে আইএমএফ পর্ষদে
  • আইএমএফের পর্ষদ বৈঠক ২৩ জুন, এরপর মিলতে পারে দুই কিস্তি অর্থ
  • ট্রাম্প ও আইএমএফ—এই দুই পায়ের ওপর দাঁড়ানো এবারের বাজেট: আনু মুহাম্মদ
  • লন্ডন বৈঠকে বিচার ও সংস্কারের বিষয়টি নির্বাচনের মতো গুরুত্ব না পাওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক: এনসিপি
  • ইউনূস-তারেকের বৈঠক দেশের মানুষের জন্য স্বস্তির বার্তা, আশার আলো
  • ড. ইউনূস ও তারেকের বৈঠক জাতির জন্য স্বস্তির বার্তা: ১২ দলীয় জোট
  • ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার ও জুলাই সনদ