নদীতে বাঁধ দিয়ে কৃষিজমির মাটি কাটছেন যুবলীগ নেতা
Published: 24th, April 2025 GMT
ঢাকার ধামরাইয়ে নদীতে বাঁধ দিয়ে কৃষিজমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে যুবলীগ নেতা মোশাররফ হোসেন ও ছানোয়ার হোসেনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। উপজেলার নান্নার ইউনিয়নের ধাইরা গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গাজীখালী নদীর গতিপথ বন্ধ করায় ব্যাহত হচ্ছে পানির প্রবাহ। এতে ঝুঁকিতে রয়েছে ধাইরা, চাউনা আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের ফসলি জমি।
জানা গেছে, ফসলি জমিতে ভেকু যন্ত্র বসিয়ে কয়েক ফুট গর্ত করে মাটি কেটে নিচ্ছে প্রভাবশালী মহল। সরেজমিন গিয়েও এর সত্যতা মিলেছে। নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে মাটি কাটতে দেখা গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, চারদিন ধরে সন্ধ্যায় শুরু হয় মাটি কাটা। সারারাত চলে এ কর্মকাণ্ড। অর্ধশতাধিক ডাম্প ট্রাকে মাটি নেওয়া হয় ইটভাটায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কৃষকের ভাষ্য, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলার ঘটনায় মামলার এজাহারভুক্ত আসামি নান্নার ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি মোশাররফ হোসেন।
অভিযোগের বিষয়ে যুবলীগ নেতা মোশাররফ হোসেনের ভাষ্য, ‘এ বছর মাটি কাটার দায়িত্ব নিয়েছেন ছানোয়ার হোসেন।’ ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘কয়েকটি কৃষি জমির মাটি কিনেছি। নদীর ওপর দিয়ে মাটি নেওয়া ছাড়া কোনো রাস্তা নেই।’
বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে ইউএনও মামনুন আহমেদ অনীক বলেন, ইটভাটায় বিক্রির ঘটনায় দুই মাসে ধামরাইয়ে অর্ধশতাধিক ভেকু জব্দ করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে। তারপরও মাটি কাটা থামানো যাচ্ছে না।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য বল গ
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)