বহু বছর আগে রূপসী হাতিমারা নদীতীরবর্তী এলাকাকে বিবেচনা করা হতো মূল নৌবন্দর হিসেবে, যাকে কেন্দ্র করে বর্তমান নবীগঞ্জ এলাকার বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের গোড়াপত্তন হয়। যেখানে পণ্য পরিবহনের প্রধান মাধ্যমই ছিল এই হাতিমারা নদী।
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার এই নদীটিই কালের বিবর্তনে একেবারে বিলীন হয়ে গেছে। সেটি এখন প্রান্তিক চাষিদের ফসলি জমি। কথিত আছে, হাতিসহ নদী পার হওয়ার সময় বরযাত্রীর নৌকাডুবির পর এই নদীর নাম হয়ে যায় হাতিমারা নদী। 
এ নদীর তীরে গড়ে উঠেছে নবীগঞ্জ উপজেলার ১০ থেকে ১৫টি গ্রাম ও দুটি বাজার। এক সময় হাতিমারা নদী দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। জেলেদের মাছ ধরাসহ নদীর পানি দিয়ে জমি চাষ করতেন চাষিরা। স্থানীয়দের জীবন ও জীবিকার প্রধান উৎস ছিল এই নদী। অবৈধ দখল আর পারের বাসিন্দাদের ভাগাড়ে পরিণত হয়ে মরে গেছে নদীটি, যার সামান্য একটি অংশ সরু খালে পরিণত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে সেখানেও কোনো পানি থাকে না। এখন নদীটি সম্পূর্ণ দখল হয়ে গেছে। এর একেক অংশ দখলে নিয়ে চলছে চাষাবাদ।
সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা বলেন, দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে নদী ছিল। মাত্র ১৫ থেকে ২০ বছর আগেও যে নদীতে ৫০০ মণ ওজন নিয়েও বড় বড় নৌকা যাতায়াত করত, তার অস্তিত্ব নেই এখন।
নদীর অস্তিত্ব না থাকায় বর্ষায় ঢলের পানি নেমে যাওয়ার স্বাভাবিক কোনো পথ নেই। নদীপথে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ এই মরা হাতিমারার কারণে বের হতে না পারায় নবীগঞ্জের পূর্বাঞ্চলের আউশকান্দি, দেবপাড়া ও দীঘলবাক ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বর্ষার জলাবদ্ধতা ও অকাল বন্যার সমস্যা দীর্ঘদিনেও সমাধান করা যায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নতুন প্রজন্ম এই নদীটিকে বিল হিসেবে চেনে। সংরক্ষণ ও যত্নের অভাবে নদীটি বিলীন হয়ে গেল। স্থানীয়রা প্রতিবাদ করেও সমাধান পাচ্ছেন না। নদীর অধিংকাশ রয়েছে ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালীদের দখলে।
বিগত সময়ে হাতিমারা নদী রক্ষায় নবীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার অভিযান চালানো হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীটির অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছিল। আরও দুই বছর আগে নদীটি খননের জন্য জাইকা প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও কোনো কাজ না করে সেই বরাদ্দের টাকা লুটপাট করা হয়। 
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, প্রকল্প শুরুর কিছু দিনের মধ্যে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়। এর পর আর এই প্রকল্প নিয়ে কোনো ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে না।
দিনারপুর কলেজের অধ্যক্ষ তনুজ রায় বলেন, হাতিমারা নদীর প্রাণ ফিরিয়ে আনতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। হাতিমারা নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
সাংস্কৃতিক কর্মী পলাশ চৌধুরী বলেন, দেবপাড়া ইউনিয়নের রুস্তমপুর এলাকা থেকে আউশকান্দি ইউনিয়নের আমুকোনা দিয়ে যে নদী হাতিমারা নামে প্রবাহিত হয়ে শেরপুর বেরিবিক্কেল পর্যন্ত গেছে। এই পথ ধরে প্রবাহিত নদী এখানকার জনগোষ্ঠী আগলে রেখেছে বছরের পর বছর ধরে।
বাংলাদেশ পরিবেশন আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, শাখা বরাকের মতোই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নদী ছিল হাতিমারা। অসাধু লোকজন নিজেদের ভোগবিলাসের জন্য নদীটিকে শেষ 
করে ফেলেছে। দখলের মাধ্যমে অস্তিত্ব শেষ করে দেওয়া হয়েছে। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নদ

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারি জমিতে সস্তায় সচিবদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ তদন্তে কমিটি, কার্যক্রম স্থগিত

সরকারি জমিতে সচিবসহ সরকারি কর্মকর্তাদের ফ্ল্যাট বরাদ্দের বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এহসানুল হককে। অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব।

তদন্ত কমিটি গঠনসংক্রান্ত আদেশ আজ রোববার প্রকাশ করা হয়েছে। ১৪ জুন প্রথম আলোয় ‘সরকারি জমিতে সস্তায় ফ্ল্যাট নেন সচিবেরা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান উল্লিখিত ফ্ল্যাট প্রকল্পের নির্মাণ এবং হস্তান্তর কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য সেতু বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছেন। সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ ফ্ল্যাট বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের জানিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দেন উপদেষ্টা। এ ছাড়া সচিবসহ কর্মকর্তাদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে তিন কার্যদিবসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে সেতু বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, সেতু বিভাগের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন ও তদন্ত কমিটির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তদন্ত কমিটি গঠনের আদেশে কমিটির কার্যপরিধি উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, কী পদ্ধতিতে, কিসের ভিত্তিতে এবং কাদের নামে ফ্ল্যাট বরাদ্দ করা হয়েছে, তা তদন্ত কমিটি নির্ধারণ করবে। এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে কি না, তা নির্ধারণ এবং দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করবে। এ ছাড়া যাঁদের নামে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কিংবা জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো জমি বা ফ্ল্যাট পেয়েছেন কি না, তা–ও যাচাই করবে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটিকে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করবে।

সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারত্বে (পিপিপি) ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য আবাসন নির্মাণের জন্য কেনা ৪০ একর জমি থেকে ১ দশমিক ১৫ একর জমি নিয়ে ৪টি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে আমলা ও কর্মচারীদের জন্য। এর মধ্যে তিনটি ভবন সচিব ও বড় আমলাদের জন্য। তাতে ১৬৮টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ইতিমধ্যে ১৪০টি ফ্ল্যাট বরাদ্দ হয়ে গেছে। বাকিগুলো ভবিষ্যতে সচিব ও কর্মকর্তাদের মধ্যে বরাদ্দের চিন্তা রয়েছে বলে সেতু বিভাগ সূত্র জানিয়েছে। চারটির মধ্যে একটি ভবন রাখা হয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মচারীদের জন্য, যেখানে ফ্ল্যাট রয়েছে ১১২টি।

ফ্ল্যাটগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে উত্তরা মডেল টাউনে (তৃতীয় ধাপ), যা দিয়াবাড়ি এলাকা নামে পরিচিত। সেখানে বিভিন্ন সময় সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদে থাকা সচিবেরা ফ্ল্যাট নিয়েছেন। ফ্ল্যাট পেয়েছেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের প্রভাবশালী আমলারা। ফ্ল্যাট পাওয়া সচিব ও সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার সংখ্যা ৩২। তাঁদের মধ্যে চারজন চাকরিতে রয়েছেন, দুজন অবসরের পর বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকে (এডিবি) সরকারের পক্ষ থেকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন, বাকিরা অবসরে গেছেন। সচিবদের বাইরে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিবসহ বিভিন্ন পদের কর্মকর্তারা পেয়েছেন ফ্ল্যাট।

সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যক্তিগত কর্মকর্তাসহ ঘনিষ্ঠরাও পেয়েছেন পানির দামের ফ্ল্যাট। যেসব কর্মকর্তা সচিব পদে থেকে এসব ফ্ল্যাট নিয়েছেন, তাঁদের অনেকের আবার রাজউকের প্লট রয়েছে। সরকারি পদে থেকে তাঁরা ঢাকায় জমি ও ফ্ল্যাট—দুটোই নিয়েছেন।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১০ সালে। এর আওতায় বিমানবন্দর থেকে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্প এখনো শেষ হয়নি।

আরও পড়ুনসরকারি জমিতে সস্তায় ফ্ল্যাট নিয়েছেন সচিবেরা, তালিকায় কারা রয়েছেন১৪ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ