ম্যাচের আগে বার্সেলোনা কোচ জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাস দেখাবেন, রিয়াল মাদ্রিদকে সম্মান করবেন এমনই হওয়ার কথা। হয়েছিলও তাই। হানসি ফ্লিক বলেছিলেন, ‘রিয়াল মাদ্রিদ দুর্দান্ত দল। কোচ আনচেলত্তি সবকিছু জিতেছেন। তিনি একজন ভদ্রলোক। তার জন্য আমার অগাধ শ্রদ্ধা আছে।’ 

ফুরফুরে মেজাজে ছিল ফ্লিকের দল বার্সাও। ঐতিহাসিক কোয়াড্রপুল (চার শিরোপা) জেতার পথে দাপটের সঙ্গে এগিয়ে চলেছেন তারা। মৌসুমে দুটি এল ক্লাসিকোয় জিতেছে বার্সা। এমবাপ্পে-ভিনি বনাম রাফিনিয়া-ইয়ামালদের লড়াইও এখনো জমেনি। ওই হিসেবে কোপা দেল রে’র ক্লাসিকো পানসে স্বাদের আভাস দিচ্ছিল। কিন্তু ম্যাচের আগে হুট করে সব উল্টে  পাল্টে গেছে। আগুন লেগে গেছে ক্লাসিকোয়।

কোপা দেল রে ফাইনালের রেফারি রিকার্দো দে বুর্গোস বেনগোচিয়া ও ভিএআর হিসেবে আছেন পাবলো গঞ্জালেস। তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছে রিয়াল। যে কারণে ম্যাচ পূর্ব অনুশীলন কিংবা সংবাদ সম্মেলন করেনি। অবস্থা এমন গুঞ্জন রটে যায় যে- ফাইনাল বর্জন করতে যাচ্ছে রিয়াল।

পেছনে অবশ্য কারণও আছে। রেফারি বেনগোচিয়া এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। দাবি করেন যে, স্কুলে তার ছেলেকে ‘চোরের ছেলে’ বলা হয়। তাকে নির্মমভাবে অপদস্ত করা হয়েছে। তার ইমেজ সংকটে ফেলা হয়েছে। রিয়াল মাদ্রিদ গ্রুপের সংবাদ মাধ্যমে তার মুণ্ডোপাত করা হয়েছে।

এরপর রিয়াল পক্ষপাতিত্ব হবে এমন অভিযোগ এনে রেফারি পরিবর্তনের জন্য স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনে আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে রিয়াল মাদ্রিদকে নিয়ে ক্ষেপেছে বার্সেলোনা। অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ নিন্দা করেছে লস ব্লাঙ্কোসদের। লা লিগা প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের তেবাস এক হাত নিয়েছেন রিয়ালের প্রেসিডেন্ট ফ্লোরিন্তিনো পেরেজের।

ফ্লিক রিয়ালের সমালোচনা করে বলেন, ‘এটা তো নৈতিক লড়াই হলো না। এটা ফুটবল, একটা খেলা। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।’ অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের পক্ষ থেকে পেরেজকে কটাক্ষ করে টুইট করা হয়েছে, ‘এটা মেনে নেওয়া যায় না। স্প্যানিশ ফুটবলের ভাবমূর্তি এভাবে নষ্ট করবেন না।’

লা লিগা প্রেসিডেন্ট তেবাস তো মনে জমা ক্ষোভের সবটা ঝাপি খুলে দিয়েছেন এক্সে (টুইটার), ‘তেবাসকে তিনি (পেরেজ) পছন্দ করেন না, কারণ আমি তার চাওয়া পূরণ করি না। সেফেরিনকে (উয়েফা প্রেসিডেন্ট) তার পছন্দ নয়, কারণ তিনি তার কথা শোনেন না। টিভি ধারাভাষ্যকারদের তার পছন্দের নয়, কারণ উনি (পেরেজ) যা শুনতে চান তারা তা বলেন না। এখন তিনি রেফারিদের পেছনে লেগেছেন।’   

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ল য় ন এমব প প

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতের কাছে তেল বিক্রি করতে পারে পাকিস্তান, খোঁচা দিলেন ট্রাম্প

ভারতের ওপর বেজায় খেপেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারতকে শায়েস্তা করতে এক দিনে একাধিক পদক্ষেপ নিলেন তিনি। ফলে হোয়াইট হাউসে বেশ ব্যস্ত দিন পার করেছেন তিনি।

গতকাল নিজের মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ভারতীয় পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েই ক্ষান্ত হননি তিনি। ভারতকে খোঁচা দিতে পাকিস্তানকেও টেনে আনলেন তিনি। আরেকটি পোস্টে জানালেন, পাকিস্তানের মজুত তেলের ভান্ডার নিয়ে কাজ করতে দেশটির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। ফলে এমনও হতে পারে, পাকিস্তান একসময় ভারতের কাছে তেল বিক্রি করবে। স্পষ্টতই রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের তেল কেনার দিকে ইঙ্গিত করে এ কথা বলেছেন ট্রাম্প। খবর ইকোনমিক টাইমস।

ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প যা লিখেছেন, তার মর্ম এ রকম: আমরা এই মাত্র পাকিস্তান রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করেছি। এই চুক্তির আওতায় পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে বিশাল তেল মজুত উত্তোলনে কাজ করবে। কোন কোম্পানি এই অংশীদারত্বের নেতৃত্ব দিতে পারে, আমরা এখন সেই কোম্পানি নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় আছি। কে জানে, হয়তো একদিন তারা ভারতের কাছেও তেল বিক্রি করবে।

ট্রাম্পের এই পোস্ট নিয়ে এখন পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া দেয়নি নয়াদিল্লি। ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে এখনো দর-কষাকষি চলছে; ট্রাম্প শুল্ক ও জরিমানা আরোপ করছেন, ঠিক সেই সময়ে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই চুক্তি ভূরাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

এর আগে বুধবার বাংলাদেশ সময় বিকেলে ট্রুথ সোশ্যালে পাতায় ভারতের ওপর শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করেন ট্রাম্প। সেখানে ভারতকে ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে অসন্তুষ্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পাশাপাশি ট্রাম্পের দাবি, মার্কিন পণ্যের ওপর ভারতীয় বাজারে চড়া হারে শুল্ক নেওয়া হয়। সে কারণেই আমেরিকার বাজারে ভারতীয় পণ্য আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

ট্রাম্প আরও লেখেন, ভারত আমাদের বন্ধু হলেও বছরের পর বছর ধরে তাদের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা তুলনামূলকভাবে অনেক কম হয়েছে। তারা অনেক বেশি শুল্ক নেয়, এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি হারে শুল্ক নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে তারা একটি। ভারতের সঙ্গে ব্যবসা করতে গেলে দেখা যায়, অনেক ধরনের বিরক্তিকর বাধা আছে। যার সঙ্গে আর্থিক কোনো সম্পর্ক নেই। এ ছাড়া ভারত সব সময় সামরিক সরঞ্জামের বড় একটি অংশ রাশিয়া থেকে কেনে। রাশিয়ার জ্বালানিরও অন্যতম বৃহৎ ক্রেতা ভারত। ট্রাম্পের দাবি, ভারতের মতো চীনও রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট লেখেন, যখন সবাই চাইছে, রাশিয়া ইউক্রেনে হত্যালীলা বন্ধ করুক, তখন এসব কাজ ভালো নয়। তাই ভারত ২৫ শতাংশ শুল্ক দেবে এবং উল্লিখিত বিষয়গুলোর জন্য জরিমানাও নেওয়া হবে ১ আগস্ট থেকে।

ঘটনাচক্রে সপ্তাহ দু-এক আগেই রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে—এমন দেশগুলোকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কিয়েভের সঙ্গে যুদ্ধ থামানোর জন্য মস্কোকে ৫০ দিন সময় দিয়েছিলেন তিনি। এর মধ্যে রাশিয়া হামলা বন্ধ না করলে মস্কোর বাণিজ্যিক বন্ধুদের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দেন তিনি। দুদিন আগে ট্রাম্প আবার জানান, যুদ্ধ থামানোর জন্য তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ১০ থেকে ১২ দিন সময় দিচ্ছেন।

বুধবার ট্রাম্প আরও একটি খোঁচা দিয়েছেন ভারতকে। ট্রুথ সোশ্যালের আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, ভারত রাশিয়ার সঙ্গে কী করছে, তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। ওরা চাইলে নিজেদের মৃতপ্রায় অর্থনীতি একসঙ্গে ডুবিয়ে দিতে পারে। এতে তাঁর কিছু যায় আসে না। ভারতের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য অনেক কম, কেননা, তাদের শুল্ক অনেক বেশি, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপকারী দেশগুলোর মধ্যে তারা অন্যতম। অন্যদিকে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য নেই বললেই চলে।

মঙ্গলবার স্কটল্যান্ড থেকে ওয়াশিংটনে ফেরার সময়েই ট্রাম্প আভাস দিয়েছিলেন ভারতের ওপর ২০ থেকে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। তবে তখনো তা সম্ভাবনার পর্যায়েই ছিল। ওই মন্তব্যের ২৪ ঘণ্টা হতে না হতেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

সম্পর্কিত নিবন্ধ