এল ক্লাসিকো জিতে কোপার চ্যাম্পিয়ন বার্সা
Published: 27th, April 2025 GMT
আঙুল নাড়িয়ে রিয়াল মাদ্রিদ ডিফেন্ডার রাউল অ্যাসেনসিওর 'না, না'। ব্লাঙ্কোস কোচ কার্লো আনচেলত্তির ইঙ্গিত- 'বলেছিলাম না ছিনতাই হয়ে যাবে শিরোপা'। শেষ পর্যন্ত 'ছিনতাই' গ্লানি নিয়ে কোপা দেল রে' ফাইনাল জিততে হয়নি বার্সার। ১২০ মিনিট লড়াই করে ৩-২ ব্যবধানে লম ব্লাঙ্কোসদের হারিয়ে কোপা দেল রে'র চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কাতালানরা।
সেভিয়ার মাঠে দুর্দান্ত এক লড়াই-ই দেখা গেছে। ম্যাচের ২৮ মিনিটে প্রথম লিড নেয় হানসি ফ্লিকের দল বার্সা। গোল করেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার পেদ্রি।
ওই গোলেই জয়ের আশা জাগিয়েছিল এর আগে লা লিগার প্রথম লেগ ও সুপার কোপা দে স্পেনের ফাইনালে রিয়ালকে হারানো বার্সা। কিন্তু ইনজুরি নিয়েও দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হয়ে মাঠে নামা কিলিয়ান এমবাপ্পে ম্যাচ জমিয়ে দেন। ৭০ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে গোল করেন তিনি।
সাত মিনিট পরই রিয়ালের আরেক ফরাসি তারকা অরেলিন চুয়ামেনি গোল করে ব্লাঙ্কোসদের ২-১ গোলে এগিয়ে নেন। কিন্তু শিরোপা জয়ের কাছে যাওয়া ওই লিড কার্লো আনচেলত্তির দল ধরে রাখতে পারেনি। ৮৪ মিনিটে রিয়ালের গোলরক্ষক থিবো কর্তুয়ার ভুলে ২-২ গোলের সমতায় ফেরে বার্সেলোনা।
নির্ধারিত সময়ের যোগ করা সময়ে লিড নিয়ে শিরোপা জয়ের সুযোগ তৈরি করা বার্সা। ৯৫ মিনিটে বক্সে রাফিনিয়াকে ট্যাকল করেন অ্যাসেনসিও। পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। তাকে নিয়ে ম্যাচের আগে বার্সার পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ ওঠে। রেফারি না পরিবর্তন করলে ম্যাচ বয়কটের হুমকি দেয় রিয়াল। তাতে কাজ হয়নি। ওই রেফারিই শেষ মুহূর্তে পেনাল্টির বাঁশি দিলে 'ফাইনাল ছিনতাই' বলার সুযোগ পেয়ে যায় রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়, স্টাফ ও ভক্তরা। কিন্তু ভিএআর- এর সহায়তায় পেনাল্টি বাতিল করে রাফিনিয়াকে ডাইভ দেওয়ার অভিযোগ হলুদ কার্ড দেখান রেফারি।
ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। সেখানে ১১৬ মিনিটে গোল করে শিরোপা ঘরে তোলে বার্সা। জয়সূচক গোল করেন বার্সার ফরাসি ডিফেন্ডার জুলেন কুন্দে। পরেই অবশ্য পেনাল্টি পায় রিয়াল। কিন্ত অফসাইডের কারণে তা বাতিল হয়। শেষ বাঁশির আগে রেফারির প্রতি বাজে আচরণ করে লাল কার্ড দেখেন রিয়ালের রুডিগার ও ভাসকেস।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এল ক ল স ক গ ল কর ল কর ন
এছাড়াও পড়ুন:
খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে রেকর্ড বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি
বরেন্দ্র অঞ্চলে বছরে বৃষ্টি হয় প্রায় ১,২০০ থেকে ১,৫০০ মিলিমিটার পর্যন্ত। বৃষ্টি কম হওয়ায় ভূ-গর্ভস্থ পানিও ক্রমাগত নিচে নামছে। ফলে দিনকে দিন অঞ্চলটি খরাপ্রবণ হয়ে উঠছে। তবে, গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাতের স্মরণকালের ভারী বর্ষণে বরেন্দ্র অঞ্চলের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মাটির বাড়ি ধসে পড়ার পাশাপাশি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে এবং মাঠের ধান শুয়ে পড়েছে।
রবিবার (২ নভেম্বর) সকালে রাজশাহীর কাঁকনহাট পৌরসভার দরগাপাড়া গ্রামে কৃষক জহিরুল ইসলাম নিজের জমির পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, “মাঠের ৮০ ভাগ ধান শুয়ে পড়েছে। এই ধান তুইলতে লোকও পাওয়া যাবে না। সবাইকে একসঙ্গে ধান তুইলতে হবে। আমরা এবারের খুব ক্ষতির শিকার।”
আরো পড়ুন:
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভারী বর্ষণে ৪০০ পুকুর ভেসে গেছে
পদ্মা-মেঘনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে পাঙ্গাস
সরেজমিনে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কৃষকের কথার সত্যতা পাওয়া গেছে।
বরেন্দ্র অঞ্চলের ফসলি মাঠ উঁচুনিচু সিঁড়ির মতো। দুই পাশ উঁচু হলেও মাঝের অংশ তুলনামূলক নিচু থাকে, যা স্থানীয়রা ‘কান্দর’ বলেন। এবার এই কান্দরগুলো তলিয়ে গিয়ে বিলের মতো হয়েছে। এসব জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। কখনো কখনো বিলের ধান পানিতে ডুবলেও কান্দর কখনো ডুবে না। শুক্রবার রাতের বৃষ্টিতে সবই তলিয়েছে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, “গ্রামের দিকে খুব বৃষ্টি হয়েছে। তবে, শহরে আমরা মাত্র ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছি।”
এদিকে, বিলের পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় মানুষ দলবেঁধে মাছ ধরতে নেমেছেন। শনিবার (১ নভেম্বর) থেকেই মাছ ধরার মহোৎসব চলছে। পবা উপজেলার শুলিতলা ভিমারডাইং এলাকায় জোয়াখালি নদীতে অর্ধশতাধিক মানুষ মাছ ধরছিলেন।
ক্ষেত থেকে শুয়ে পড়া ধান কাটছেন এক কৃষক
আলোকছত্র গ্রামের কৃষক মো. মনিরুজ্জামান (৬৫) বলেন, “জাল ফেললেই বড় বড় মাছ পাওয়া যাচ্ছে। আমি আমার জীবনে এবার দ্বিতীয়বার উত্তরা পেলি দেখছি। সাধারণত নদীর স্রোত উত্তর দিকে যায়, কিন্তু এবার উত্তরেই এত বেশি বৃষ্টি হয়েছে যে পানি দক্ষিণে যাচ্ছে।”
বিলের মধ্যে খনন করা পুকুরগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মাছচাষিরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন। গোদাগাড়ীর কালোসাঁকো বিলে চারটি পুকুরে মাছচাষ করতেন মারিফুল ইসলাম। তিনি জানান, প্রায় ৪ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। অন্তত ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
রিশিকুল ইউনিয়নের খড়িয়াকান্দি এলাকায় দুটি স্থানে পাকা রাস্তা প্লাবিত হয়ে একপাশ থেকে অন্যপাশে পানি যাচ্ছে। স্থানীয়রা সেখানে জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। রাস্তার দুই পাশে শত শত বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে। খড়িয়াকান্দি খালের পাশে ১০–১২টি বাড়ির মাটির দেয়াল ভেঙে পড়েছে।
মান্ডইল নলপুকুর গ্রামের বিশ্বনাথ সরেন জানান, তার বাড়ির দুটি ঘর ধসে পড়েছে।
জালে বড় মাছ উঠায় খুশি স্থানীয় এক বাসিন্দা
রিশিকুল এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, “আমাদের এলাকায় এমন বন্যা হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। তারপর এত বৃষ্টি ও বন্যা হয়নি। এবার প্রথম।”
এলাকাবাসী জানান, পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রান্নাবান্না সম্ভব হচ্ছে না। স্বেচ্ছাসেবীরা খিচুড়ি রান্না করে বাড়ি বাড়ি বিতরণ করছেন। গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট, আলোকছত্র হয়ে তানোরের সরনজাই ও কালীগঞ্জ এলাকায় মাঠের পর মাঠের ধান শুয়ে পড়েছে।
কালীগঞ্জের কৃষক সাবিয়ার রহমান বলেন, “আমার ১২ বিঘা জমির ধান শেষ। আধাপাকা ধান ঘরে তুলতেও লোক পাওয়া যাবে না।”
এবার মাঠ তলিয়ে যাওয়ায় আলু ও শীতকালীন সবজি চাষে বিলম্ব হবে। পার্শ্ববর্তী মোহনপুর ও বাগমারায় ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি ঢুকে যাওয়ায় পানবরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দুই পাশের জমি প্লাবিত করে বৃষ্টির পানি সড়কে উঠেছে
শনিবার বাগমারার বাসুপাড়ায় নুর মোহম্মাদ নামের এক পানচাষির মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়দের ধারণা, বরজে পানি ঢুকে যাওয়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গিয়ে থাকতে পারেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন দাবি করেছেন, “ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি।” তিনি বলেন, “৫০০ হেক্টর ধানের ক্ষতির প্রতিবেদন আমরা দিচ্ছি। ধান শুয়ে পড়লেই কিন্তু ক্ষতি হবে না। মাঠে যাচ্ছি, দেখছি।”
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “কিছু উপজেলা থেকে পুকুর ভেসে যাওয়ার খবর পেয়েছি। মাছ বেরিয়ে গেছে। এটি অপরিকল্পিত পুকুর খননের কারণে হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানার জন্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি।”
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ