কৃষককে বিকল্প ফসল উৎপাদনে উৎসাহ দিন
Published: 28th, April 2025 GMT
কক্সবাজারের চকরিয়া ও রামু উপজেলার নদীঘেঁষা অঞ্চলে যেভাবে তামাক চাষ অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে, তা নিছক কোনো আঞ্চলিক সংকট নয়; এ এক ভয়াবহ জাতীয় বিপর্যয়ের পূর্বাভাস। সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও সচেতনতামূলক প্রচেষ্টার অস্তিত্ব থাকলেও তা মাঠে কার্যত নিষ্প্রভ; তামাক কোম্পানির লোভনীয় প্রতিশ্রুতি আর কৃষকদের আর্থিক অনিশ্চয়তার কাছে তা পরাভূত।
মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর চরভূমি, বনাঞ্চল ও কৃষিজমি ধীরে ধীরে তামাকের দখলে চলে যাচ্ছে। এই অশনিপ্রবণতা কেবল কৃষকের জীবিকা নয়, পরিবেশের সাম্য, জনস্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের টিকে থাকার সম্ভাবনাকেও চরম ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
চকরিয়ার বরইতলী ইউনিয়নে গোলাপ চাষের ব্যর্থতা আর তামাকের ক্ষণস্থায়ী লাভের মোহ এই সংকটকে আরও গাঢ় করেছে। অথচ এই সাময়িক আর্থিক সুবিধার আবরণে লুকিয়ে আছে মাটির উর্বরতার অবলুপ্তি, নদীর দূষণ, মানবদেহে মরণব্যাধির অনুপ্রবেশসহ নানা ক্ষতি।
নদীতটে তামাকের আগ্রাসী চাষ নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে ব্যাহত করে বন্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। তামাকপাতা শুকানোর জন্য বিপুল পরিমাণ কাঠের চাহিদা বনের উজাড়কে ত্বরান্বিত করছে। উবিনীগের গবেষণায় উঠে এসেছে, এই অঞ্চল ইতিমধ্যেই ভয়াবহ বন ধ্বংসের শিকার, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রবাহও দ্রুততর করছে।
স্বাস্থ্যের ওপরও এর অভিঘাত ভয়াল। তামাকপাতার সরাসরি সংস্পর্শে এসে কৃষকের শরীরে নিকোটিনের প্রবেশ ঘটছে; যার ফলাফল চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট, এমনকি ক্যানসারের মতো মরণব্যাধির করাল গ্রাস। চকরিয়া ও রামুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর প্রতিবেদনে এই রোগগুলোর বাড়বাড়ন্তের স্পষ্ট স্বাক্ষর মিলছে।
তামাক কোম্পানিগুলো নগদ অর্থ, বীজ ও কৃষিসামগ্রী প্রদানের মোহে কৃষকদের বন্দী করছে। গোলাপ বা অন্যান্য বিকল্প ফসলের বাজার সমস্যাকে হাতিয়ার করে তারা তামাকের লাভগাথা প্রচার করছে, অথচ বাস্তবে কৃষকেরা ঋণের বেড়াজালে আবদ্ধ হচ্ছেন, জমির শক্তি বিলীন হচ্ছে।
সরকারি প্রচারণা ও নীতিমালা যে যথাযথভাবে কার্যকর হচ্ছে না, তার পেছনে রয়েছে তামাক কোম্পানির দুর্ধর্ষ প্রভাববলয় এবং বিকল্প আয়ের সুনিশ্চিত পথের অভাব। এই সংকট নিরসনে সময়ক্ষেপণ আর বিলাসিতা নয়, চূড়ান্ত কর্তব্য। নদীর চর, বনভূমি ও সরকারি জমিতে অবিলম্বে তামাক চাষ নিষিদ্ধ করতে হবে; দখলদারি উচ্ছেদে সক্রিয় উদ্যোগ নিতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনকে মাঠপর্যায়ে তদারকি জোরদার করতে হবে, কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি সংলাপ বাড়াতে হবে।
একই সঙ্গে গোলাপ, শাকসবজি ও মসলাজাতীয় বিকল্প ফসলের চাষে নগদ সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও বিপণন সংযোগের নিরবচ্ছিন্ন ধারা নিশ্চিত করতে হবে। ফুলচাষিদের উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণের জন্য আধুনিক গুদাম এবং পরিবহনব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন। তামাক কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কৃষি ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব কল প
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।