ভোলার চরফ্যাশনে বাসশ্রমিক ও অটোরিকশাচালকদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি, হাতাহাতি ও সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় চরফ্যাশন বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

এর প্রতিবাদে ভোলা-চরফ্যাশন রুটসহ ভোলা শহর থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন। একই সঙ্গে তারা অটোরিকশা চলাচলও বন্ধ করে দিয়েছে। এ কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

বাসশ্রমিক ও অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল সন্ধ্যায় চরফ্যাশন বাজারে যানবাহনে যাত্রী তোলা নিয়ে বাসশ্রমিক ও অটোরিকশাচালকদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি, যাত্রী টানাহেঁচড়া, হাতাহাতির ঘটনায় মো.

ইমন নামের এক অটোরিকশাচালকের মাথায় আঘাত লাগে। বাসশ্রমিকদের অভিযোগ, অটোরিকশার চালকেরা আগে তাঁদের ওপর হামলা করেছেন। হাতাহাতি ও মারধরের ঘটনায় উভয় পক্ষের তিনজন আহত হন। এরপর বাসশ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন।

বাসশ্রমিকেরা ভোলার বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাসস্ট‌্যান্ড এলাকায় গতকাল রাতে ও আজ সোমবার ভোরে বিক্ষোভ মিছিল করে দূরপাল্লায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধের দাবি করেন। আজ সকালে তাঁরা ১১টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা আটক করে বাসস্ট্যান্ডে রাখেন।

এ কারণে আজ সকালে ভোলা-চরফ্যাশন (ভায়া দক্ষিণ আইচা), চরফ্যাশন-দক্ষিণ আইচা, ভোলা-তজুমদ্দিন, ভোলা-ইলিশা, ভোলা-দৌলতখান, ভোলা-বাবুরহাট এবং ভোলা-আঞ্জুরহাট রুটে বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে না। ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব রুটের যাত্রীরা।

জেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, চরফ‌্যাশন বাজা‌রে যাত্রী ওঠা‌নোর সময় অটোরিকশার শ্রমিকেরা বা‌সের চালক ও টি‌কিট মাস্টা‌রের ওপর হামলা চালান। এ ঘটনার বিচার ও আঞ্চ‌লিক সড়‌কে অটোরিকশা চলাচল বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা বাস চালা‌বেন না।

এ সম্পর্কে ভোলা অটোরিকশা মা‌লিক স‌মি‌তির সভাপ‌তি জা‌কির হো‌সেন বলেন, ‘চরফ‌্যাশ‌নে যাত্রী তোলা নিয়ে বাস ও অটোরিকশার শ্রমিক‌দের মধ্যে হাতাহাতি হ‌য়ে‌ছে। ওরা দলবল ভারী করে তাঁদের শ্রমিকদের ওপর হামলা করেছেন। উল্টো বাস ধর্মঘট করেছেন। আমরা অটোরিকশা নিয়ে সড়কে নেমেছি, আমাদের ১১টি অটোরিকশা আটক করে রেখেছে। নিজেরা যাত্রী টানছে না, আমাদের টানতে দিচ্ছে না। বাসশ্রমিকেরা যাত্রী ভোগান্তির মূল কারণ।’

এদিকে দুই পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসে সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। ভোলা বাস মালিক সমিতির ডিপোর প্রধান অসীম বাবু বলেন, আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান তাঁদের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সমঝোতা বৈঠকের জন্য ডেকেছেন। আশা করা যায়, বৈঠকে তাঁদের দাবি আদায় হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ লকদ র চরফ য শ

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ