মহাসড়কে গাছবোঝাই ট্রাক উল্টে ১০ কিলোমিটার যানজট
Published: 29th, April 2025 GMT
কুমিল্লার দেবিদ্বারে গাছবোঝাই ট্রাক উল্টে কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানজটে দীর্ঘক্ষণ আটকে থেকে দুর্ভোগ পোহায় সাধারণ যাত্রীরা।
মিরপুর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার ভোরে মহাসড়কের জাফরগঞ্জ অংশে একটি গাছবোঝাই ট্রাক উল্টে গেলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুই পাশে প্রায় ১০ কিলোমিটার যানজট ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী আবদুল জলিল বলেন, ফজরের নামাজের পর একটি গাছবোঝাই ট্রাক সড়কে উল্টে যায়। এ ঘটনায় কেউ আহত না হলেও সড়কের দুই পাশে প্রায় ১০ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় চার ঘণ্টা পর পুলিশ এসে রেকার দিয়ে ট্রাক সড়ক থেকে সরালে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
মিরপুর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পারভেজ আলী জানান, দেবিদ্বারের জাফরগঞ্জ এলাকায় ভোরে একটি গাছবোঝাই ট্রাক সড়কে উল্টে যাওয়ার খবর পেলে সেখানে ফাঁড়ি থেকে পুলিশ পাঠানো হয়। উল্টে যাওয়া ট্রাকে বড় বড় গাছ থাকায় ট্রাকটি সরাতে একটু বিলম্ব হয়েছে। পরবর্তীতে রেকার দিয়ে ট্রাকটি সড়ক থেকে সরানো হয়েছে। বর্তমানে সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন য নজট
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)