ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে গত বছরের জুলাই ও আগস্টে আধিপত্য এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি অনেককে জড়ানো হয়েছে, যাদেরকে কারো কারো রাজনৈতিক বা ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষ মনে হয়, বা যাদের সঙ্গে কারো কারো ব্যক্তিগত অন্তরঙ্গতা আছে। একইসঙ্গে জুলাই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত তদন্ত ও বিচার এবং পাশাপাশি যারা এইভাবে আইনের অপব্যবহার করছে তাদের ব্যাপারে জরুরি তদন্ত এবং ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো ২৩ বিশিষ্টজন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি অভিনেতা এবং এশিয়াটিক গ্রুপের একজন পরিচালক ইরেশ জাকেরসহ পেশাদার সাংবাদিকদের অন্তর্ভুক্ত করে আওয়ামী লীগ দলীয় নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের সঙ্গে ৪০৮ জনকে আসামি করে ঢাকার মিরপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি দায়ের করেছেন জনৈক মোস্তাফিজুর রহমান, যার ছোট ভাই মাহফুজ আলম শ্রাবন (২১) গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের চূড়ান্ত মুহূর্তে ঢাকার মিরপুর এলাকায় গুলি বর্ষণে নিহত হয়েছেন। নিহত তরুণ বিএনপির কর্মী বলে বাদী মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন। বাদীর ভাই মাহফুজ আলম শ্রাবন ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে জীবন উৎসর্গ করা তরুণদের একজন। নিহত তরুণের মৃত্যুর ঘটনায় সাধারণ নাগরিকদের সম্পৃক্ত করে মামলা দায়ের হওয়ায় ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা কিংবা সংকট সৃষ্টি হতে পারে। জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনে হতাহতের বিচার চেয়ে দেশজুড়ে যেসব মামলা হচ্ছে, এতে করে ভুক্তভোগীর পরিবার সঠিক বিচার পাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা থেকে যায়।

বিবৃতিতে বিশিষ্টজন বলেন, গণহারে আসামি করায় মামলার তদন্ত ও বিচার বিঘ্নিত হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দিতেও দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিবে বলে ধারণা করা যায়। এ পরিস্থিতিতে এটি স্পষ্ট যে, হয়রানি করার জন্য এ ধরণের মামলা দায়ের করা হচ্ছে, যার প্রভাব অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। কাজেই, এ ধরণের মামলা গ্রহণে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখার এবং ইরেশ জাকেরসহ অন্যান্য পেশাজীবী অরাজনৈতিক ব্যক্তিসহ সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত উদ্দেশ্যমূলক সৃজিত মামলাগুলো তদন্ত সাপেক্ষে অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক।

এইচআরএফবি মনে করে, নিহত তরুণ শ্রাবনের হত্যাকাণ্ডে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জরুরি এবং একই সাথে এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিরা যেন দায়মুক্তি না পায় সেজন্য প্রয়োজনীয় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে। পাশাপাশি, উদ্দেশ্যমূলক সৃজিত মামলায় কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে ইরেশ জাকের এবং অন্যান্য যাদের নাম ইচ্ছাকৃতভাবে বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যোগ করা হয়েছে, তাদের নাম যেন বাদ দিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেয়।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন- এইচআরএফবির ড.

হামিদা হোসেন, অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, রাজা দেবাশীষ রায়, অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের শাহীন আনাম, নাগরিক উদ্যোগের জাকির হোসেন, সারা হোসেন, স্টেপসের রঞ্জন কর্মকার, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সালেহ আহমেদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সঞ্জীব দ্রং, টিআইবি'র ড. ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ডা. ফওজিয়া মোসলেম, এএলআরডি'র শামসুল হুদা, নিজরা করি'র খুশী কবির, এএসএফ'র সরদার জাহাঙ্গীর হোসেন, বিডিইআরএম'র শিপন কুমার রবিদাস, বিলস এর সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, ফেয়ারের দেওয়ান জামান, কাপেং ফাউন্ডেশনের পল্লব চাকমা, কর্মজীবনী নারীর রোকেয়া রফিক বেবী, নারীপক্ষের গীতা দাস, ন্যাডপোর আবদুস সাত্তার দুলাল, ওমেন উইথ ডিজাবিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের আশরাফুন্নাহার মিষ্টি। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: তদন ত ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

নুরাল পাগলার দরবার থেকে চুরি হওয়া জেনারেটর উদ্ধার, যুবক গ্রেপ্তার

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার দরবার থেকে চুরি হওয়া একটি জেনারেটর উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় মো. মিজানুর রহমান (২৪) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।

গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে মিজানুরকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও গোয়ালন্দ ঘাট থানা-পুলিশ। মিজানুরের বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার লক্ষ্মীকোল সোনাকান্দর গ্রামে।

আরও পড়ুননিহতের বাবার মামলায় গ্রেপ্তার আরও ২, দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির দাবি১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ নিয়ে দুই মামলায় মোট ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. শরীফ আল রাজীব।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ৫ সেপ্টেম্বর গোয়ালন্দের নুরাল পাগলার দরবারে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় মিজানুর রহমান জেনারেটর চুরি করে নিয়ে যাচ্ছেন—এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মিজানুরকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়। মিজানুরকে দরবারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, লাশ পোড়ানো ও হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁকে রাজবাড়ীর আদালতে সোপর্দ করার প্রস্তুতি চলছে।

আরও পড়ুননুরাল পাগলার দরবারে হামলায় হত্যা মামলা, মসজিদের ইমামসহ চারজন গ্রেপ্তার০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ওই দিন পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় উপপরিদর্শক (এসআই) সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে প্রায় তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে ৬ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। এই মামলায় মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে দরবারে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, হত্যা ও কবর থেকে লাশ তুলে মহাসড়কে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় নিহত ভক্ত রাসেল মোল্লার বাবা আজাদ মোল্লা বাদী হয়ে ৮ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। ওই মামলায় সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় এখন পর্যন্ত মিজানুরসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ