পাকিস্তানের সব বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদার
Published: 30th, April 2025 GMT
পাহেলগ্রামের ঘটনায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে, পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ দেশের সব বিমানবন্দরকে উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে। নিরাপত্তা ও নজরদারি প্রোটোকল উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল সূত্রের বরাত দিয়ে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, ভারতীয় আকাশসীমা দিয়ে যাতায়াতকারী বা সেখান থেকে আসা সব বিদেশি বিমান সংস্থাগুলোর উপর কঠোর নজরদারি শুরু হয়েছে। ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলো পাকিস্তানে চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও, অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলোর বিমান চলাচল আরো কঠোর নজরদারির অধীনে রয়েছে।
লাহোরের আল্লামা ইকবাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ সব প্রধান বিমানবন্দরে বিমান পরিবহন নিয়ন্ত্রণকারীদের বিশেষ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ফ্লাইটের আগে যেকোনো সন্দেহজনক বিমানের পাইলটদের কাছ থেকে বিমান প্রতিরক্ষা ছাড়পত্র নম্বর চাওয়ার। যথাযথ নথিপত্র এবং সনাক্তকরণ ছাড়া কোনো বিমান ছাড়পত্র না দেওয়ার নিদের্শ দেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন:
নিয়ন্ত্রণরেখায় ষষ্ঠ দিনের মতো ভারত–পাকিস্তানের গোলাগুলি
৩৬ ঘণ্টার মধ্যে হামলা চালাতে পারে ভারত: পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী
এছাড়াও, বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ সব বিমানবন্দর কর্মীদের সবসময় বৈধ বিভাগীয় পরিচয়পত্র বহন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উচ্চতর নজরদারির অংশ হিসাবে পরিচয়পত্রবিহীন ব্যক্তিদের বিমানবন্দর প্রাঙ্গণে প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
যেকোনো সম্ভাব্য জরুরি অবস্থার নিরবচ্ছিন্ন প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য বিমানবন্দর নিরাপত্তা বাহিনী (এএসএফ), পুলিশ এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মতো নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ও জোরদার করা হয়েছে।
পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা প্রোটোকল কঠোরভাবে প্রয়োগের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। আঞ্চলিক উত্তেজনার এই সময়ে নিরাপত্তায় কোনো ত্রুটি রোধ করার জন্য ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে: আইরিন খান
জাতিসংঘের মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান বলেছেন, ‘আমাদের যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে, তার একটি হলো ঠিক এই মুহূর্তে বাংলাদেশ একটি স্বাভাবিক গণতন্ত্রের দেশ নয়। এখানে গণতন্ত্র চলছে না। কার্যত এটা পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে।’
টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট (টিজিআই) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে আইরিন খান এ কথা বলেন। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গত বুধবার ‘আইন থেকে অধিকার: বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণে ডিজিটাল স্বাধীনতার সুরক্ষা’ শীর্ষক এ ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়। গতকাল রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ওয়েবিনারে বিদ্যমান ও নতুন সাইবার আইন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া এবং নাগরিকদের ওপর নজরদারিসহ ডিজিটাল সুশাসন-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় ও উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা হয়। টিজিআই–এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে নজরদারি সরঞ্জাম কেনার জন্য ১৯ কোটি ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় করেছে।
ওয়েবিনারে সূচনা বক্তব্য দেন টিজিআই–এর নির্বাহী পরিচালক সাবহানাজ রশীদ দিয়া। গত বছরের জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশে বেশ কিছু সংস্কার হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। সাবহানাজ রশীদ বলেন, ‘আমরা দেখেছি, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো বিষয়গুলোর ব্যাপারে কিছু উল্লেখযোগ্য তদন্ত, কমিশন ও প্রক্রিয়া করা হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে আমরা নির্বিচার গ্রেপ্তার হতেও দেখেছি।’
টিজিআই–এর নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘গত কয়েক মাসে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। অতীতে আমাদের বিশ্লেষণে আমরা দেখেছি, এই আইন বাংলাদেশে নজরদারির সবচেয়ে সহায়ক এবং একই সঙ্গে এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করেছে।’
আলোচনায় বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা খাতের বিষয়গুলো নিয়ে আইরিন খান বলেন, ‘আমাদের একটি অন্তর্বর্তী সরকার আছে, যার কর্তৃত্ব সীমিত। আমাদের একটি নিরাপত্তা খাত আছে; এই একটি মাত্র খাতে অভ্যুত্থান ও পরিবর্তনের কোনো প্রভাব পড়েনি। তাই এ ধরনের পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা খাতে সংস্কার নিশ্চিত করতে আমরা কী করতে পারি?’
জাতিসংঘের বিশেষ এই র্যাপোর্টিয়ার বলেন, ‘এই রূপান্তর বাস্তবায়নের জন্য নিরাপত্তা খাতকেই সহায়তা করতে এগিয়ে আসতে হবে (বর্তমান সরকারকে)। এখনো তাদের কাছে সব ধরনের (নজরদারি) সরঞ্জাম রয়েছে। আর সে কারণে পরবর্তী সরকারের নেতৃত্ব কে দেবে, তা নির্ধারণে অন্য সবার চেয়ে তাদের বাড়তি সুবিধা রয়েছে।’
পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ডিজিটাল পরিসরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় বর্তমান সরকার কী করতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনায় আইরিন খান বলেন, ‘ডিজিটাল নিয়ে ভাবুন। আমি মনে করি না, সরকার তা করছে। তবে অন্য সবাই ডিজিটাল নিয়ে ভাবছে। তাই সরকারের ডিজিটাল নিয়ে এবং ডিজিটাল পরিসরে কীভাবে কাজ করবে, সে বিষয়ে ভাবা দরকার। (ইন্টারনেট) কোম্পানিগুলোকে ডাকুন, তাদের সঙ্গে কথা বলুন এবং ডিজিটাল পরিসর কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা মানুষকে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকেও বুঝতে দিন।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিনের প্রোগ্রাম অফিসার ডায়নাহ ফন ডার গেস্ট বলেন, ‘আমি মনে করি, নজরদারি নিজে থেকে অবৈধ নয়। সর্বত্র রাষ্ট্রগুলোর জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধের তদন্ত করা এবং নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু নজরদারি যখন ব্যাপক, অস্বচ্ছ ও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়, তখন তা একটি বিপজ্জনক সীমা অতিক্রম করে।’
ওয়েবিনারে বলা হয়, বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ডিজিটাল স্বাধীনতা যেমন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, তথ্যে প্রবেশাধিকার এবং অনলাইনে নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে সাইবার আইন ও এর প্রয়োগের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ; ডিজিটাল পরিসরে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা এবং মানুষের অধিকার সুরক্ষায় সংস্কারের সম্ভাবনা নিয়ে এতে আলোচনা হয়েছে।