এন্টারপ্রাইজের জন্য ক্লাউড সেবা নিয়ে এল বাংলালিংক
Published: 30th, April 2025 GMT
বিশ্বমানের এন্টারপ্রাইজ ক্লাউড সমাধান নিশ্চিত করতে নতুন ক্লাউড সেবা ব্র্যান্ড ‘বিক্লাউড’ চালু করল দেশের বাংলালিংক। দেশের ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক প্রদানকারী ফাইবার অ্যাট হোমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান পিকো পাবলিক ক্লাউডের সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে এ সেবা চালু করা হয়।
রাজধানীর গুলশান ১-এ অবস্থিত বাংলালিংক টাইগারস ডেনে আজ বুধবার এক অনুষ্ঠানে এ সেবা চালু করা হয়। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভিওন গ্রুপের সিইও কান তেরজিওগ্লো, বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইওহান বুসে, চিফ করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমানসহ প্রতিষ্ঠানটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। এ সময় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ফাইবার অ্যাট হোমের চেয়ারম্যান মইনুল হক সিদ্দিকী, পিকো পাবলিক ক্লাউডের সিইও আজাদ চৌধুরী এবং ফেলিসিটি আইডিসির সিইও সারফুল আলম।
এই অংশীদারত্বের মাধ্যমে কম্পিউটিং, স্টোরেজ, ব্যাকআপ ও রিকভারি, নেটওয়ার্কিং, সাইবার নিরাপত্তা সমাধানসহ পরবর্তী প্রজন্মের উপযোগী ক্লাউড সেবার ক্ষেত্রে নিজেদের আইসিটি সক্ষমতা বিস্তৃত করল বাংলালিংক। এটি এন্টারপ্রাইজের কার্যক্রমের আধুনিকায়ন করতে এবং ডিজিটাল অর্থনীতিতে ব্যবসার প্রবৃদ্ধি গতিশীল করতে ভূমিকা রাখবে।
দেশজুড়ে ডিজিটাল রূপান্তর নিশ্চিত করা ও উদ্ভাবন এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে দেশের ডিজিটাল ইকোসিস্টেমকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বাংলালিংকের অব্যাহত প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন এই মাইলফলক। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), মেশিন লার্নিং (এমএল) ও ইন্টারনেট অব থিংসের (আইওটি) মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও শক্তিশালী ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।
এ বিষয়ে ইওহান বুসে বলেন, ‘প্রতিটি উদ্ভাবনে গ্রাহকদের কেন্দ্রে রাখাই বাংলালিংকের মূলনীতি। একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল অপারেটর হওয়ার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আমরা দ্রুত পরিবর্তনশীল অর্থনীতির চাহিদা পূরণ করবে এমন উদ্ভাবনী ডিজিটাল সমাধান নিয়ে আসার মাধ্যমে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উভয়কেই সক্ষম করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের এন্টারপ্রাইজ আইসিটি পোর্টফোলিও সম্প্রসারণ এবং এন্টারপ্রাইজের ডিজিটাল সক্ষমতা শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বিক্লাউড চালু করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’
অনুষ্ঠানে মইনুল হক সিদ্দিকী বলেন, বাংলালিংকের গ্রাহককেন্দ্রিক ডিজিটাল সেবা ও পিকোর প্রযুক্তিগত দক্ষতাকে একত্র করার মধ্য দিয়ে দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য উল্লেখযোগ্য সুবিধা নিয়ে আসবে। ডিজিটাল সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আরও কার্যকর ব্যবসায়িক সমাধান নিশ্চিত করার মাধ্যমে এটি দেশের ডিজিটাল রূপান্তর ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন
এছাড়াও পড়ুন:
খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে রেকর্ড বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি
বরেন্দ্র অঞ্চলে বছরে বৃষ্টি হয় প্রায় ১,২০০ থেকে ১,৫০০ মিলিমিটার পর্যন্ত। বৃষ্টি কম হওয়ায় ভূ-গর্ভস্থ পানিও ক্রমাগত নিচে নামছে। ফলে দিনকে দিন অঞ্চলটি খরাপ্রবণ হয়ে উঠছে। তবে, গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাতের স্মরণকালের ভারী বর্ষণে বরেন্দ্র অঞ্চলের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মাটির বাড়ি ধসে পড়ার পাশাপাশি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে এবং মাঠের ধান শুয়ে পড়েছে।
রবিবার (২ নভেম্বর) সকালে রাজশাহীর কাঁকনহাট পৌরসভার দরগাপাড়া গ্রামে কৃষক জহিরুল ইসলাম নিজের জমির পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, “মাঠের ৮০ ভাগ ধান শুয়ে পড়েছে। এই ধান তুইলতে লোকও পাওয়া যাবে না। সবাইকে একসঙ্গে ধান তুইলতে হবে। আমরা এবারের খুব ক্ষতির শিকার।”
আরো পড়ুন:
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভারী বর্ষণে ৪০০ পুকুর ভেসে গেছে
পদ্মা-মেঘনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে পাঙ্গাস
সরেজমিনে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কৃষকের কথার সত্যতা পাওয়া গেছে।
বরেন্দ্র অঞ্চলের ফসলি মাঠ উঁচুনিচু সিঁড়ির মতো। দুই পাশ উঁচু হলেও মাঝের অংশ তুলনামূলক নিচু থাকে, যা স্থানীয়রা ‘কান্দর’ বলেন। এবার এই কান্দরগুলো তলিয়ে গিয়ে বিলের মতো হয়েছে। এসব জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। কখনো কখনো বিলের ধান পানিতে ডুবলেও কান্দর কখনো ডুবে না। শুক্রবার রাতের বৃষ্টিতে সবই তলিয়েছে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, “গ্রামের দিকে খুব বৃষ্টি হয়েছে। তবে, শহরে আমরা মাত্র ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছি।”
এদিকে, বিলের পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় মানুষ দলবেঁধে মাছ ধরতে নেমেছেন। শনিবার (১ নভেম্বর) থেকেই মাছ ধরার মহোৎসব চলছে। পবা উপজেলার শুলিতলা ভিমারডাইং এলাকায় জোয়াখালি নদীতে অর্ধশতাধিক মানুষ মাছ ধরছিলেন।
ক্ষেত থেকে শুয়ে পড়া ধান কাটছেন এক কৃষক
আলোকছত্র গ্রামের কৃষক মো. মনিরুজ্জামান (৬৫) বলেন, “জাল ফেললেই বড় বড় মাছ পাওয়া যাচ্ছে। আমি আমার জীবনে এবার দ্বিতীয়বার উত্তরা পেলি দেখছি। সাধারণত নদীর স্রোত উত্তর দিকে যায়, কিন্তু এবার উত্তরেই এত বেশি বৃষ্টি হয়েছে যে পানি দক্ষিণে যাচ্ছে।”
বিলের মধ্যে খনন করা পুকুরগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মাছচাষিরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন। গোদাগাড়ীর কালোসাঁকো বিলে চারটি পুকুরে মাছচাষ করতেন মারিফুল ইসলাম। তিনি জানান, প্রায় ৪ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। অন্তত ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
রিশিকুল ইউনিয়নের খড়িয়াকান্দি এলাকায় দুটি স্থানে পাকা রাস্তা প্লাবিত হয়ে একপাশ থেকে অন্যপাশে পানি যাচ্ছে। স্থানীয়রা সেখানে জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। রাস্তার দুই পাশে শত শত বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে। খড়িয়াকান্দি খালের পাশে ১০–১২টি বাড়ির মাটির দেয়াল ভেঙে পড়েছে।
মান্ডইল নলপুকুর গ্রামের বিশ্বনাথ সরেন জানান, তার বাড়ির দুটি ঘর ধসে পড়েছে।
জালে বড় মাছ উঠায় খুশি স্থানীয় এক বাসিন্দা
রিশিকুল এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, “আমাদের এলাকায় এমন বন্যা হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। তারপর এত বৃষ্টি ও বন্যা হয়নি। এবার প্রথম।”
এলাকাবাসী জানান, পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রান্নাবান্না সম্ভব হচ্ছে না। স্বেচ্ছাসেবীরা খিচুড়ি রান্না করে বাড়ি বাড়ি বিতরণ করছেন। গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট, আলোকছত্র হয়ে তানোরের সরনজাই ও কালীগঞ্জ এলাকায় মাঠের পর মাঠের ধান শুয়ে পড়েছে।
কালীগঞ্জের কৃষক সাবিয়ার রহমান বলেন, “আমার ১২ বিঘা জমির ধান শেষ। আধাপাকা ধান ঘরে তুলতেও লোক পাওয়া যাবে না।”
এবার মাঠ তলিয়ে যাওয়ায় আলু ও শীতকালীন সবজি চাষে বিলম্ব হবে। পার্শ্ববর্তী মোহনপুর ও বাগমারায় ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি ঢুকে যাওয়ায় পানবরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দুই পাশের জমি প্লাবিত করে বৃষ্টির পানি সড়কে উঠেছে
শনিবার বাগমারার বাসুপাড়ায় নুর মোহম্মাদ নামের এক পানচাষির মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়দের ধারণা, বরজে পানি ঢুকে যাওয়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গিয়ে থাকতে পারেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন দাবি করেছেন, “ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি।” তিনি বলেন, “৫০০ হেক্টর ধানের ক্ষতির প্রতিবেদন আমরা দিচ্ছি। ধান শুয়ে পড়লেই কিন্তু ক্ষতি হবে না। মাঠে যাচ্ছি, দেখছি।”
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “কিছু উপজেলা থেকে পুকুর ভেসে যাওয়ার খবর পেয়েছি। মাছ বেরিয়ে গেছে। এটি অপরিকল্পিত পুকুর খননের কারণে হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানার জন্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি।”
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ