ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে তীব্র যানজট, ভোগান্তি
Published: 1st, May 2025 GMT
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার মেঘনা-গোমতী সেতু থেকে চান্দিনা উপজেলার বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ৩১ কিলোমিটারজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল বুধবার রাত দুইটার দিকে চান্দিনার নূরতলা এলাকায় দুর্ঘটনার পর যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। এরপর দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার দিকে মেঘনা-গোমতী সেতু থেকে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটারে পৌঁছেছে। এর আগে সকাল আটটা থেকে যানবাহন চলাচল প্রায় থমকে যায়।
গতকাল রাত দুইটায় চান্দিনার নূরতলা এলাকায় চট্টগ্রামগামী একটি কাভার্ড ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কে আড়াআড়ি হয়ে যায়। এতে প্রায় এক ঘণ্টা মহাসড়কের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এতে কুমিল্লা অংশে প্রায় ৩১ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানা-পুলিশ রেকার এনে কাভার্ড ভ্যানটি সরিয়ে নিলে পুনরায় যান চলাচল শুরু হয়। তবে যান চলাচল শুরুর পর কিছু চালক উল্টো পথে গাড়ি চালাতে থাকেন। এতে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। ঢাকা ও চট্টগ্রামগামী লেনে যানবাহন চলাচল আটকে থাকে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি অংশে মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজা দিয়ে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলার মানুষ ঢাকায় যাওয়া-আসা করেন। একসঙ্গে অসংখ্য যানবাহন পারাপারের কারণে টোল প্লাজায় যানবাহন পারাপারে ধারণক্ষমতার বাইরে চলে যায়। সেখানেও যানজট তৈরি হয়। বেলা ১১টায় মহাসড়কের দাউদকান্দির স্বল্পপেন্নাই এলাকায় ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী প্রাইভেট কারের চালক আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘ভোর পাঁচটায় স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দিই। ঢাকার শনির আখড়ার পর থেকেই যানজটে পড়ি। দাউদকান্দি অংশে পৌঁছে পুরোপুরি যানজটে আটকা পড়ি। গাড়ি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে এক ঘণ্টার পথ ছয় ঘণ্টায় অতিক্রম করতে হয়েছে।’
আরও পড়ুনকুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৩৭ কিলোমিটারজুড়ে যানজট৩০ এপ্রিল ২০২৫কুমিল্লার হোমনা সদরে যাবেন হাসিনা আক্তার। দাউদকান্দির গৌরীপুর এলাকায় হাঁটতে হাঁটতে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ছেলের বউ তানিয়া আক্তার, তিন বছরের নাতনি ফাতেমা আক্তার, চার বছরের নাতনি মরিয়ম আক্তারকে নিয়ে ঢাকা থেকে ভোর পাঁচটায় রওনা দিয়েছেন। যানজটে বাসে দীর্ঘ সময় বসেছিলেন। এখন মালামাল মাথায় নিয়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন। প্রচণ্ড গরমে অনেক কষ্ট হয়েছে।
ঢাকা থেকে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জগামী কাভার্ড ভ্যানের চালক লিটন মিয়া বলেন, ভোররাত চারটায় ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে পথে পথে যানজটে আটকা পড়েন। এক ঘণ্টার পথ সাত ঘণ্টায়ও অতিক্রম করতে পারছেন না। যানবাহনের কিছু চালক ঘুমিয়ে পড়ায় এবং উল্টো পথে যানবাহন চলাচলের কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
যানজটে আটক পড়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন চালকের সহকারী। আজ সকাল ১০টার দিকে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর এলাকায়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র দ উদক ন দ উপজ ল র এল ক য় য নজট
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)