এপ্রিলে অনলাইনে ২৯৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত করল রিউমর স্ক্যানার, ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি
Published: 2nd, May 2025 GMT
গত এপ্রিল মাসে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ২৯৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে বাংলাদেশের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার।
গতকাল বৃহস্পতিবার তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। এর আগের মাসে (মার্চ) ২৯৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছিল রিউমর স্ক্যানার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে এপ্রিলে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেক থেকে গণনাকৃত সংখ্যার মধ্যে জাতীয় বিষয়ে সবচেয়ে বেশি (১০১) ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ মিলেছে, যা মোট ভুল তথ্যের ৩৪ শতাংশ। এ ছাড়া রাজনৈতিক বিষয়ে ৯৫টি, আন্তর্জাতিক বিষয়ে ৩৮টি, ধর্মীয় বিষয়ে ২৭টি, বিনোদন ও সাহিত্য বিষয়ে ৮টি, শিক্ষা বিষয়ে ৭টি, প্রতারণা বিষয়ে ১০টি, খেলাধুলা বিষয়ে ৯টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে এপ্রিলে।
রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মাসের এসব ঘটনায় তথ্যকেন্দ্রিক ভুল ছিল সবচেয়ে বেশি, ১৩৮টি, ভিডিওকেন্দ্রিক ভুল ছিল ১০৫টি ও ছবিকেন্দ্রিক ভুল ছিল ৫৩টি। শনাক্ত হওয়া ভুল তথ্যগুলোর মধ্যে মিথ্যা হিসেবে ১৭৯টি, বিভ্রান্তিকর হিসেবে ৬৬টি ও বিকৃত হিসেবে ৪৮টি ঘটনাকে সাব্যস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া সার্কাজম বা কৌতুক হিসেবে হাস্যরসাত্মক ঘটনাকে বাস্তব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক করা হয়েছে তিনটি।
প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গত মাসে ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, সংখ্যার হিসাবে তা ২৭৬টি। এ ছাড়া ইউটিউবে ৫৪টি, ইনস্টাগ্রামে ৪৮টি, এক্সে (সাবেক টুইটার) ৪৪টি, টিকটকে ২৪টি, থ্রেডসে অন্তত ১৩টি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। ভুল তথ্য প্রচারের তালিকা থেকে বাদ যায়নি দেশের গণমাধ্যমও। ১৫টি ঘটনায় দেশের একাধিক গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যম ও ভারত থেকে পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভুয়া তথ্য প্রচারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এপ্রিলেও এই ধারাবাহিকতা লক্ষ করেছে রিউমর স্ক্যানার। গত মাসে ভারতীয় গণমাধ্যমে দুটি ঘটনায় বাংলাদেশকে জড়িয়ে অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও দুটি ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতীয় অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে বাংলাদেশকে নিয়ে ভুয়া তথ্যের প্রচার করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক অপতথ্য প্রচারের বিষয়টি কিছু মাস ধরেই আলোচনায় রয়েছে। এপ্রিলে এমন ১৬টি সাম্প্রদায়িক অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে ছয়টি ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতীয় পরিচয়ধারী অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে অপতথ্য প্রচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গত মাসে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে জড়িয়ে ১২টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। ভুল তথ্যগুলোর ধরন বুঝতে এগুলোকে রিউমর স্ক্যানার দুটি আলাদা ভাগে ভাগ করে। সরকারের পক্ষে যায়—এমন ভুল তথ্যের প্রচারকে ইতিবাচক এবং বিপক্ষে যায়—এমন অপতথ্যের প্রচারকে নেতিবাচক হিসেবে ধরে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, এসব অপতথ্যের প্রায় ৮৩ শতাংশ ক্ষেত্রেই সরকারকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনে বলা হয়, এপ্রিলে ২৯টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে, যা চলতি বছরের মাসগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে প্রায় ৮৩ শতাংশ ক্ষেত্রেই তাঁকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে জড়িয়ে তিনটি (সব কটি বিপক্ষে), আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়াকে জড়িয়ে দুটি (৫০ শতাংশ বিপক্ষে), সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে জড়িয়ে দুটি (সব কটি বিপক্ষে), আ ফ ম খালিদ হোসেনকে জড়িয়ে একটি (বিপক্ষে), শেখ বশিরউদ্দীনকে জড়িয়ে একটি (বিপক্ষে) ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে জড়িয়ে একটি (বিপক্ষে) ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত মাসে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) জড়িয়ে সবচেয়ে বেশি অপতথ্য (১৩টি) প্রচার করা হয়েছে। এসব অপতথ্যের সব কটিই দলটির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করার সুযোগ রেখেছে। এই সময়ে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে একটি (বিপক্ষে), ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে দুটি (৫০ শতাংশ বিপক্ষে) ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে ৯টি (সব কটিই বিপক্ষে) অপতথ্যের প্রচার করা হয়েছে। দলটির ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে জড়িয়ে এই সময়ে দুটি (সব কটিই বিপক্ষে) ও যুবদলকে জড়িয়ে একটি (বিপক্ষে) অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদন বলছে, গত মাসে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে জড়িয়ে ছয়টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। এসব অপতথ্যের সব কটিই দলটির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করার সুযোগ রেখেছে। নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) জড়িয়ে গত মাসে তিনটি অপতথ্য (সব কটিই বিপক্ষে) শনাক্ত করা হয়েছে। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে জড়িয়ে গত মাসে দুটি (সব কটিই বিপক্ষে) অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। এ ছাড়া দলটির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহকে জড়িয়ে তিনটি (সব কটিই বিপক্ষে), সারজিস আলমকে জড়িয়ে দুটি (সব কটিই বিপক্ষে), নুসরাত তাবাসসুমকে জড়িয়ে একটি (বিপক্ষে) অপতথ্যের প্রচার শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানার এপ্রিলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে জড়িয়ে ৬টিসহ এই বাহিনীকে নিয়ে ১৬টি ভুল তথ্য প্রচার শনাক্ত করেছে। এ ছাড়া গত মাসে বাংলাদেশ পুলিশের বিষয়ে ছড়ানো ৯টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।
ভুল তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার এই সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ১৯টি ভুয়া কনটেন্ট শনাক্ত করেছে। একই সময়ে ডিপফেক ভিডিও শনাক্ত করা হয়েছে তিনটি।
ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মসূচি দেওয়া হয়। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এপ্রিলে এ-সংক্রান্ত অন্তত ৩৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। অন্যদিকে গত মাসে কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১১টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকায় ২৬ এপ্রিল সুন্নি মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পাঁচটি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।
গত মাসে গণমাধ্যমের নাম, লোগো ও শিরোনাম এবং নকল ও ভুয়া ফটোকার্ড ব্যবহার করে ৫৮টি ঘটনায় দেশি-বিদেশি ২৫টি সংবাদমাধ্যমকে জড়িয়ে ৬২টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে বলে রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অপতথ য র প র দ র কর গত ম স ঘটন য় দলট র সবচ য় সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এপ্রিলে ২৯৬ ভুল তথ্য শনাক্ত: রিউমার স্ক্যানার
দেশের গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ও ভুল তথ্যের প্রবাহ শনাক্ত করে পাঠক, দর্শক ও জনগণকে সচেতন করতে কাজ করা প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার বলছে, প্রধান উপদেষ্টা, সেনাবাহিনী, পুলিশ থেকে আন্তর্জাতিক ইস্যুর বিভিন্ন বিষয়ে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে।
এপ্রিল মাসে শনাক্ত করা ভুল তথ্য নিয়ে বৃহস্পতিবার (১ মে) রিউমার স্ক্যানার নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। রাইজিংবিডি ডটকমের পাঠকের জন্য তাদের প্রতিবেদনটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
চলতি বছরের এপ্রিলে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ২৯৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে বাংলাদেশের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার। নিয়মিত ফ্যাক্টচেকের বাইরে গাজায় গণহত্যার মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জড়িয়ে পুরোনো গুজব ফিরে আসা সংক্রান্ত বিষয়ে একটি ফ্যাক্ট ফাইল এবং রাজনৈতিক অপতথ্য প্রচারের নতুন কৌশল ব্লগস্পটের ফ্রি ডোমেইন বিষয়ক রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গত মাসে। এর আগের মাস অর্থাৎ মার্চে শনাক্ত হয় ২৯৮টি ভুল তথ্য।
আরো পড়ুন:
ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামের মতো চলবে মিঠুর ‘সোশ্যাল জলি’
সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে সবাই সাংবাদিক হয়ে গেছে: আইনমন্ত্রী
রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে গত এপ্রিলে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেক থেকে গণনাকৃত এই সংখ্যার মধ্যে জাতীয় বিষয়ে সবচেয়ে বেশি (১০১) ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ মিলেছে, যা মোট ভুল তথ্যের ৩৪ শতাংশ। এছাড়া রাজনৈতিক বিষয়ে ৯৫টি, আন্তর্জাতিক বিষয়ে ৩৮টি, ধর্মীয় বিষয়ে ২৭টি, বিনোদন ও সাহিত্য বিষয়ে আটটি, শিক্ষা বিষয়ে সাতটি, প্রতারণা বিষয়ে ১০টি, খেলাধুলা বিষয়ে ০৯টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে এপ্রিলে।
এসব ঘটনায় তথ্য কেন্দ্রিক ভুলই ছিল সবচেয়ে বেশি, ১৩৮টি। এছাড়া ভিডিও কেন্দ্রিক ভুল ছিল ১০৫টি এবং ছবি কেন্দ্রিক ভুল ছিল ৫৩টি। শনাক্ত হওয়া ভুল তথ্যগুলোর মধ্যে মিথ্যা হিসেবে ১৮০টি, বিভ্রান্তিকর হিসেবে ৬৬টি এবং বিকৃত হিসেবে ৪৮টি ঘটনাকে সাব্যস্ত করা হয়েছে। এছাড়া, সার্কাজম বা কৌতুক হিসেবে হাস্যরসাত্মক ঘটনাকে বাস্তব দাবির প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক করা হয়েছে দুইটি।
প্লাটফর্ম হিসেবে গত মাসে ফেসবু্কে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে, সংখ্যার হিসেবে যা ২৭৬টি। এছাড়া ইউটিউবে ৫৪টি, ইনস্টাগ্রামে ৪৮টি, এক্সে ৪৪টি, টিকটকে ২৪টি, থ্রেডসে অন্তত ১৩টি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। ভুল তথ্য প্রচারের তালিকা থেকে বাদ যায়নি দেশের গণমাধ্যমও। ১৫টি ঘটনায় দেশের একাধিক গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।
গত বছর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যম এবং ভারত থেকে পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভুয়া তথ্য প্রচারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। গেল এপ্রিলেও এই ধারাবাহিকতা দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। গত মাসে ভারতীয় গণমাধ্যমে দুইটি ঘটনায় বাংলাদেশকে জড়িয়ে অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া আরো দুইটি ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে বাংলাদেশকে নিয়ে ভুয়া তথ্যের প্রচার করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক অপতথ্য প্রচারের বিষয়টি গেল কিছু মাস ধরেই আলোচনায় রয়েছে। এপ্রিলে এমন ১৬টি সাম্প্রদায়িক অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে ছয়টি ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় পরিচয়ধারী অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে অপতথ্য প্রচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গেল মাসে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে জড়িয়ে ১২টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। ভুলতথ্যগুলোর ধরণ বুঝতে এগুলোকে রিউমর স্ক্যানার দুইটি আলাদা ভাগে ভাগ করেছে৷ সরকারের পক্ষে যায় এমন ভুল তথ্যের প্রচারকে ইতিবাচক এবং বিপক্ষে যায় এমন অপতথ্যের প্রচারকে নেতিবাচক হিসেবে ধরে নিয়ে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, এসব অপতথ্যের প্রায় ৮৩ শতাংশ ক্ষেত্রেই সরকারকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এপ্রিলে ২৯টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়েও, যা চলতি বছরের মাসগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে প্রায় ৮৩ শতাংশ ক্ষেত্রেই তাকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে ড. আসিফ নজরুলকে জড়িয়ে তিনটি (সবগুলোই বিপক্ষে), আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে জড়িয়ে দুইটি (৫০ শতাংশ বিপক্ষে), সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে জড়িয়ে দুইটি (সবগুলোই বিপক্ষে), আ ফ ম খালিদ হোসেনকে জড়িয়ে একটি (বিপক্ষে), শেখ বশিরউদ্দীনকে জড়িয়ে একটি (বিপক্ষে) এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে জড়িয়ে একটি (বিপক্ষে) ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার গেল মাসের ফ্যাক্টচেকগুলো বিশ্লেষণে দেখেছে, এই সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) জড়িয়ে সবচেয়ে বেশি অপতথ্য (১৩টি) প্রচার করা হয়েছে। এসব অপতথ্যের সবগুলোই দলটির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করার সুযোগ রেখেছে। এই সময়ে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে একটি (বিপক্ষে), ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে দুইটি (৫০ শতাংশ বিপক্ষে) এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে নয়টি (সবগুলোই বিপক্ষে) অপতথ্যের প্রচার করা হয়েছে। দলটির ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে জড়িয়ে এই সময়ে দুইটি (সবগুলোই বিপক্ষে) এবং যুবদলকে জড়িয়ে একটি (বিপক্ষে) অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে।
এছাড়া, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে জড়িয়ে ছয়টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। এসব অপতথ্যের সবগুলোই দলটির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করার সুযোগ রেখেছে। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমানকে জড়িয়ে এই সময়ে দুইটি অপতথ্য (সবগুলোই বিপক্ষে) প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। দলটির ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে এই সময়ে ছয়টি (সবগুলোই বিপক্ষে) অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গত এপ্রিলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে জড়িয়ে আটটি অপতথ্য (৭৫ শতাংশই পক্ষে) শনাক্ত করা হয়েছে। এপ্রিলে দলটির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে জড়িয়ে একটি (বিপক্ষে) এবং যুবলীগকে জড়িয়ে তিনটি অপতথ্য (৬৭ শতাংশ পক্ষে) শনাক্ত করা হয়েছে। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে এই সময়ে ছয়টি অপতথ্য (৮৩ শতাংশই পক্ষে) প্রচারের প্রমাণ মিলেছে।
আলোচনায় থাকা নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিকে জড়িয়ে গত মাসে তিনটি অপতথ্য (সবগুলোই বিপক্ষে) শনাক্ত করা হয়েছে। এই দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে জড়িয়ে গত মাসে দুইটি (সবগুলোই বিপক্ষে) অপতথ্যের প্রচার করা হয়েছে গত মাসে। এছাড়া দলটির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহকে জড়িয়ে তিনটি (সবগুলোই বিপক্ষে), সারজিস আলমকে জড়িয়ে দুইটি (সবগুলোই বিপক্ষে), নুসরাত তাবাসসুমকে জড়িয়ে একটি (বিপক্ষে) অপতথ্য প্রচার দেখা গেছে।
ভুল তথ্যের রোষানল থেকে রক্ষা পায়নি রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোও। গেল মাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে জড়িয়ে ছয়টিসহ এই বাহিনীকে জড়িয়ে ১৬টি ভুল তথ্য প্রচার দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের বিষয়ে ছড়ানো ৯টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।
কোটা আন্দোলন থেকে সরকার পতনের সময়টায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ মার্চে দুইটি ভুল তথ্যের শিকার হয়েছে। এই সময়ে সংগঠনটির মুখপাত্র উমামা ফাতেমাকে জড়িয়ে একটি ভুল তথ্য প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।
গেল মাসের ভুল তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, এই সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ভুয়া কনটেন্ট শনাক্ত হয়েছে ১৯টি। একই সময়ে ডিপফেক ভিডিও শনাক্ত করা হয়েছে তিনটি।
এপ্রিলে ফিলিস্তিনের গাজায় “চলমান গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে” বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠে। ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে ঢাকায় ১২ এপ্রিল “মার্চ ফর গাজা” কর্মসূচির ডাক দেয়া হয়। এসব ঘটনাবলীকে কেন্দ্র করে রিউমর স্ক্যানার গেল মাসে এ সংক্রান্ত অন্তত ৩৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে। গেল মাসে কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১১টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া, ঢাকায় ২৬ এপ্রিল সুন্নী মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পাঁচটি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে।
গত মাসে গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ও ভুয়া ফটোকার্ড ব্যবহার করে ৫৮টি ঘটনায় দেশি ও বিদেশি ২৫টি সংবাদমাধ্যমকে জড়িয়ে ৬২টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে ভুল তথ্য প্রচারে মূল ধারার গণমাধ্যম যমুনা টিভির নাম সবচেয়ে বেশি (১২) ব্যবহার করা হয়েছে। গণমাধ্যমটির পর প্রথম আলো ও জনকণ্ঠ এর নাম বেশি (৮ বার করে) ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রিউমার স্ক্যানারের শনাক্ত করা ভুল তথ্য বা গুজবের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে রাইজিংবিডি ডটকম এই প্রবাহের অংশ নয়।
ঢাকা/হাসান/রাসেল