মামলা না নেওয়ায় ওসিকে চাকরি ছাড়তে বললেন বিএনপি নেতা
Published: 2nd, May 2025 GMT
মামলা না নেওয়ায় মোবাইল ফোনে ওসিকে চাকরি ছাড়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জামালপুরের বকশীগঞ্জ পৌর বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আনিছুজ্জামান গামা বকশীগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি ও জামালপুর জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি)।
গত ১ মে জামালপুরের বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদ ও বিএনপি নেতা আনিছুজ্জামানের কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ওসি শাকের আহমেদ ও বিএনপি নেতা আনিছুজ্জামান গামার কথোপকথনে শোনা যায়, একটি মামলা রুজু না করাকে কেন্দ্র করে ওসিকে শাসাচ্ছেন ওই বিএনপি নেতা। এমনকি মামলা নেওয়ার জন্য ওসিকে চাপ প্রয়োগ করেন তিনি। বিএনপি নেতা ওসিকে হুমকি দিয়ে বলেন, মামলা নিতে না পারলে চাকরি ছেড়ে চলে যান।
জবাবে ওসিকে বলতে শোনা যায়- হুমকি দিয়েন না, আমি আপনারে ডরাই না, আমি আপনারে ডরাই না। আপনি বিএনপির নাম ভাঙ্গায়ে কোর্টে গিয়ে আওয়ামী লীগের লোকগুলারে বিএনপি বানায়ে জামিন করাচ্ছেন। আপনার তো অনেক ক্ষমতা, আদালতে গিয়ে মামলা করেন।
এ বিষয়ে বকশীগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি আনিছুজ্জামান গামা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক এমপি এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত ও উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য ও গালাগালি করার প্রতিবাদ করায় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকে মারধর করা হয়। দলের ছেলে মাইর খেয়েছে তাই মামলা নিতে বলেছি। তিনি মামলা নিতে গড়িমসি করছিলেন এবং আদালতে মামলা করতে বলেন। মামলা নিতে তাকে কোনও চাপ প্রয়োগ করা হয়নি। তিনি রেকর্ড করে তা ছড়িয়ে দিয়েছেন। এতে আমি বিচলিত নই, অন্যায়ের সঙ্গে কোনও আপস নয়।
হুমকির ঘটনায় ওসি শাকের আহমেদ জানিয়েছেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, দেশ ও জনগণের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। মামলা না নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। তিনি সিনিয়র একজন আইনজীবী ও বিএনপি নেতা হয়ে পুলিশের সাথে এমন আচরণ করতে পারেন না। তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে চাকরি ছাড়তে বলেন। তার আচরণ সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্ন হওয়ার শামিল। বিষয় লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’
স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, “জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম প্রধান অংশীদার ও পরীক্ষিত বন্ধু। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-এর মাধ্যমে দেশটি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে আসছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে।”
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত Saida Shinichi-এর সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, ২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামাতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’তে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, কৃষি বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ সংস্কার, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যু সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “জাপান বাংলাদেশের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আগামী দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।”
উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামা'তে ‘আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’ অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক এ এক্সপো'তে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ।”
উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আর জাপান কৃষি খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারী দেশ। তাই জাপান বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা করতে পারে।”
তিনি বলেন, “জাপান বাংলাদেশের কৃষি পণ্য সংরক্ষণে আধুনিক হিমাগার স্থাপন ও কুলিং ভ্যান সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে পারে। তাছাড়া জাপান আমাদেরকে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করতে পারে।”
তিনি এসময় রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “কৃষি বিষয়ক দু'দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সর্বশেষ সভা ২০২৪ সালের মে মাসে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্রুত এ সংক্রান্ত পরবর্তী সভা আয়োজন করা দরকার।”
উপদেষ্টা জানান, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী সভা এ বছরের অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সভা আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। তবে এটির আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং আমরা এ ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো সুযোগ নেই, বরং দিন দিন এটির উন্নতি ঘটবে বলে আমি আশা করছি।”
পুলিশের সামর্থ্য ও গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতির তুলনায় বর্তমানে পুলিশের সামর্থ্য, মনোবল ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি বেড়েছে।”
তিনি এসময় আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জাপানের সহায়তা কামনা করেন। তাছাড়া তিনি নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডকে পেট্রোল ভেসেল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সহযোগিতা এবং অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে জাপানে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রেরণের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন।
রাষ্ট্রদূত জানান, আগামী ইন্টারপোল নির্বাচনে নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে জাপানের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হবে। উপদেষ্টা এ পদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস প্রদান করেন।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাপান দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এস