ভারতে মন্দিরে পদদলিত হয়ে ছয়জনের মৃত্যু, আহত ৬০
Published: 3rd, May 2025 GMT
ভারতের গোয়া রাজ্যের লাইরাই দেবী মন্দিরে শনিবার ভোরে পদদলিত হয়ে অন্তত ৬ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন ৬০ জন। সেখানকার শিরগাঁওয়ের একটি মন্দিরে বার্ষিক লৈরাই দেবী যাত্রা (মিছিল) চলার সময় এ ঘটনা ঘটে। আহতদের কাছাকাছি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। খবর-এনডিটিভি
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে প্রায় এক হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। ভিড়ের গতিবিধি নজরে রাখার জন্য ড্রোনও রাখা হয়েছিল। তবে পদদলিত হওয়ার কারণ এখনও জানা যায়নি। এ ঘটনার পর সকালে মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিশ্বজিৎ রানে জানিয়েছেন, দুই পুরুষ ও দুই নারীসহ নিহতদের মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। আমরা জরুরি সেবা ১০৮ এর মাধ্যমে পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। প্রয়োজনীয় সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রতি বছর উত্তর গোয়ার শিরগাও গ্রামে লৈরাই দেবী যাত্রা উৎসব উদযাপিত হয়। যাকে ঘিরে এই উৎসব সেই দেবী লৈরাইকে দেবী পার্বতীর একটি রূপ এবং সাত বোন দেবীর একজন বলে বিশ্বাস করা হয়। এ উৎসবের বিশেষত্ব হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ‘ধোঁদাচি যাত্রা’ সেখানে ভক্তরা খালি পায়ে জ্বলন্ত কয়লার ওপর দিয়ে হেঁটে যান।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
২০০ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে ভোলার বৈষা দধি
ভোলার ভ্যাপসা গরম, দুপুর গড়াতে না গড়াতেই সদর রোডজুড়ে তীব্র যানজট নাগরিক জীবনকে ব্যস্ত করে ফেলে। গরমে হাঁসফাঁস করা মানুষ একটু স্বস্তি খোঁজে। আর সেই স্বস্তি এনে দিতে পারে ভোলার বিখ্যাত বৈষা দধি।
দুপুরের আগেই সব দোকানের হাঁড়ি ফাঁকা হয়ে যায়। মহিষের কাঁচা দুধে পাতানো এই দই ভোলার স্বাদ, ইতিহাস ও গর্বের এক অনন্য বহিঃপ্রকাশ।
ভোলার দোকানগুলোতে প্রতিদিন মণকে মণ বৈষা দধি তৈরি হয়। এই দইয়ের বিশেষত্ব হলো, মহিষের কাঁচা দুধ দিয়ে এটি পাতা হয়। বাজারে সচরাচর যে দই পাওয়া যায়, সেসব তৈরি হয় গরুর দুধ দিয়ে এবং দুধ জ্বালিয়ে গাঢ় করে। কিন্তু ভোলার বৈষা দধি হয় মহিষের কাঁচা দুধ দিয়ে।
জলবেষ্টিত দ্বীপ জেলা ভোলার এক অমূল্য সম্পদ মহিষ। পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে তেঁতুলিয়া, উত্তরে ইলিশা আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর—এই চার নদী ও সমুদ্রবেষ্টিত চরাঞ্চলে ঘুরে বেড়ায় হাজার হাজার মহিষ। সরকারি হিসাবে এই সংখ্যা দেড় লাখের কাছাকাছি, তবে স্থানীয় লোকজনের মতে তা দুই লাখ ছাড়িয়েছে। এই মহিষের দুধই বৈষা দধির প্রাণ।
প্রায় দুই শতাব্দী ধরে এ অঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় থাকে এই দই। এ ছাড়া অতিথি আপ্যায়নের অন্যতম প্রধান উপাদান এটি। উৎসব-পার্বণ, বিয়েশাদি কিংবা যেকোনো সামাজিক আয়োজনে বৈষা দধি ছাড়া যেন ভোলার কোনো উৎসব পরিপূর্ণতা পায় না।
মুহাম্মদ শওকাত হোসেনের ‘ভোলা জেলার ইতিহাস’ বই থেকে জানা যায়, দুই শ বছর আগে থেকে ভোলায় চর জাগতে শুরু করে। বসতি হয়, মহিষ পালন শুরু হয়। দুধ সংরক্ষণের উপায় ছিল না বলে স্থানীয় বাসিন্দারা দই বানাতেন। সেখান থেকেই বৈষা দধির যাত্রা শুরু, যা পরে ছড়িয়ে পড়ে পুরো অঞ্চলে।
ভোলার মানুষের খাদ্যসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে এই দই। এটি ভাতের সঙ্গে খাওয়া হয়, চিড়া-মুড়ির সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি হয় মুখরোচক খাবার, আবার গরমের দিনে দই, পানি ও চিনি মিশিয়ে তৈরি করা হয় ঘোল—যা শরীরকে শীতল রাখে। শীতকালে হাঁসের মাংসের সঙ্গে টক দই ও খেজুরের গুড়—ভোলার ভোজনরসিকদের কাছে এক অনন্য স্বাদ। পান্তাভাতের সঙ্গে দই ও খেজুরের গুড় এই অঞ্চলের জনপ্রিয় একটি খাবার।
বর্তমানে প্রতি কেজি বৈষা দই বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। তবে ঈদে দাম বেড়ে যায়। ঈদের আগেই বিক্রেতারা দুধ জমাতে শুরু করেন এবং এ সময়ে প্রতিদিন ৮০০–৯০০ কেজি পর্যন্ত দই বিক্রি হয়।
ভোলার দোকানগুলোতে প্রতিদিন মণকে মণ বৈষা দধি তৈরি হয়