আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। আওয়ামী লীগের বিচার ত্বরান্বিত করার দাবি জানিয়ে দলটি বলেছে, যে ফ্যাসিবাদের পতন ২০২৪ সালে হয়েছে, তা আর কখনো ফিরে আসার সুযোগ নেই। যারাই নতুন করে ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চাইবে, গুম–খুন–লুটের মতো অপকর্ম করবে, তারাই আওয়ামী লীগের মতো ভাগ্যবরণ করবে।

রোববার বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগরে এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এক ‘অভিনন্দন অভিযাত্রা’ বের করে দলটি। অভিযাত্রায় এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান (মঞ্জু) বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের মাধ্যমে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার ও দলীয় কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় সরকারকে অভিনন্দন জানাই। জাতিসংঘঘোষিত গণহত‍্যাকারী দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাহী আদেশে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না দিয়ে আমরা চাইছিলাম বিচারিক প্রক্রিয়ায় পদক্ষেপ নেওয়ার জন‍্য। আওয়ামী লীগ যে সীমাহীন অন‍্যায়, জুলুম ও লুটপাট করেছে, তাতে এই দলের বিরুদ্ধে জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে ফুঁসে উঠেছে। অতএব এই পদক্ষেপ যুক্তিযুক্ত এবং এতে নাগরিকদের প্রত‍্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে।’

দীর্ঘদিন ধরেই এ নিয়ে আন্দোলন করে আসছিলেন উল্লেখ করে মজিবুর রহমান বলেন, ‘কিন্তু এক অজানা কারণে আমাদের দাবি মেনে নিতে অন্তর্বর্তী সরকার গড়িমসি এবং কালক্ষেপণ করে। শেষ পর্যন্ত ফ‍্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র–জনতাকে রাজপথে নেমে দাবি আদায় করতে হয়েছে।’ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ও সমর্থন দানকারী সবার প্রতি শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

অভিযাত্রার আগে একটি সমাবেশ হয়। সেখানে সভাপতিত্ব করেন এবি পার্টির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান ওহাব মিনার। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসাইন সমাবেশ সঞ্চালনা করেন। সেখানে দলটির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সর্বদলীয় কনভেনশনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি করেছিলাম। আওয়ামী লীগ হাজার হাজার মানুষকে খুন করেছে, গুম করেছে, দিনের পর দিন বিনা বিচারে মানুষকে আটকে রেখে বাংলাদেশকে একটি শ্মশানে পরিণত করেছিল। আমাদের দেশের লাখ লাখ টাকা পাচার করে কানাডায় বেগমপাড়া নামে স্বর্গরাজ্য তৈরি করেছে। আমাদের প্রতিটি টাকার পাই পাই হিসাব দিতে হবে এবং প্রতিটি টাকা ফেরত আনতে হবে। এখানে দাঁড়িয়ে আমরা বলেছিলাম, বাংলার মানুষ যখন জাগবে তখন আওয়ামী লীগ পালানোর পথ পাবে না! আমাদের প্রতিটি বক্তব্য সত্যে পরিণত হয়েছে।’

সভাপতির বক্তব্যে ওহাব মিনার বলেন, যে ফ্যাসিবাদের পতন ২০২৪ সালে হয়েছে, তা আর কখনো ফিরে আসার সুযোগ নেই। যারাই নতুন করে ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চাইবে, গুম-খুন-লুটের মতো অপকর্ম করবে, তারাই আওয়ামী লীগের মতো ভাগ্যবরণ করবে। পতিত স্বৈরাচারের বিচার ত্বরান্বিত করার দাবি জানান তিনি। পাশাপাশি ৫ আগস্ট যে ঐক্য হয়েছিল, তা ধরে রাখার আহ্বানও জানান তিনি।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন এবি পার্টির নেতা লে.

কর্নেল (অব.) হেলাল উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন রানা, সানি আবদুল হক, নাসরিন সুলতানা মিলি প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

নিম্নমানের খাবার, তাও কম

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকা রোগীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে পরিমাণেও দেওয়া হচ্ছে কম। দুর্ভোগের মুখে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও তাদের স্বজনরা এসব অভিযোগ করেন।
সরেজমিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে গিয়ে কথা বলে জানা যায়, রোগীদের খাবার সরবরাহ করার জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জুনেদ জাহিদ ট্রেডার্স নামে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইজিপি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দ্বিতীয় স্থান হওয়ার পরও সেই ঠিকাদার খাবার সরবরাহের দায়িত্ব পায়।
স্থানীয় সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে হাসপাতালে তোলপাড় শুরু হয়। গত মঙ্গলবার সেখানে গেলে সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। হাসপাতালের প্রধান ডা. জাকির হোসেন রোগীদের খাবারের উপকরণ পরিমাপ করেন। পরে উপকরণটি বাবুর্চিকে বুঝিয়ে দেন ঠিকাদার মুক্তার আহমদ। এদিকে গত এপ্রিল মাসে হবিগঞ্জ সমন্বিত কার্যালয় থেকে দুদকের একটি টিম হাসপাতাল পরিদর্শন করে খাবার পরিমাণে কম দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পায়।  
জানা গেছে, হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ বিভাগে ভর্তিরত রোগীদের ওষুধের পাশাপাশি প্রতিদিন সরকারিভাবে প্রতি বেলা ১৭৫ টাকা মূল্যের ৩ বেলা (সকালে নাশতা, দুপুরে ও রাতে ভাত) খাবার দেওয়া হয়। বিশেষ দিবসে তা ২০০ টাকা নির্ধারণ করা থাকে। টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী, হাসপাতালটিতে সপ্তাহে তিন দিন দুপুরে ও রাতে ১৭৫ গ্রাম করে ৩৫০ গ্রাম ভাত, মুরগির মাংস ৭৫ গ্রাম করে ১৫০ গ্রাম দেওয়ার কথা। এর মাঝে মাংস পরিমাণমতো দেওয়া হচ্ছে না। সপ্তাহে চার দিন দুপুরে ও রাতে ৩৫০ গ্রাম ভাত, মাছ ৭৫ গ্রাম করে ১৫০ গ্রাম দেওয়ার কথা। প্রতিদিন রোগীদের সকালে দুটি পাউরুটি, একটি সিদ্ধ ডিম, দুটি পাকা কলা দেওয়ার কথা থাকলেও ছোট কলা ও নিম্নমানের পাউরুটি দেওয়া হচ্ছে। মাছ-মাংসসহ মোটা চালের ভাত, বাসি তরকারিসহ নিম্নমানের খাবার পরিমাণে কম সরবরাহ করা হচ্ছে।
হাসপাতালের বাবুর্চি সাজিয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিন রোগীদের খাবারে সব ধরনের উপকরণ কম দেওয়া হয়। মাছ-মাংস একজন রোগীর প্লেটে দুপুরে ও রাতে ১৫০ গ্রাম দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম। সকালে নিম্নমানের পাউরুটি, ছোট সাইজের কলা দেওয়া হয়। 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মচারী জানান, এখানে জুনেদ জাহিদ ট্রেডার্সের মুক্তার আহমদ কাগজে-কলমে খাবার সরবরাহের দায়িত্ব পেলেও হাসপাতালের প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক আলমাছুর রহমান তাঁকে সহযোগিতা করছেন। তাদের দু’জনের যোগসাজশে নিম্নমানের খাবার দিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে।
ভর্তিরত রোগী উপজেলার রাউৎগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা ইউছুফ আলী বলেন, পাঁচ দিন ধরে শ্বাসকষ্ট ও পেটের ব্যথা নিয়ে ভর্তি আছি। হাসপাতালে দু’বার সামান্য ভাত, আলু এক পিস, ছোট সাইজের মাছ-মাংস দেওয়া হয়। মাছ-মাংস পুরোপুরিভাবে রান্না করা হয় না।
পৌর এলাকার বাসিন্দা আকলু মিয়া জানান, চার দিন ধরে তাঁর স্ত্রী ছমরুন বেগম ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি। খাবারের মান খুবই নিম্নমানের। একই কথা জানালেন পৌর এলাকার বাসিন্দা শাহেদা আক্তার। তিনি বলেন, আমার ১১ মাসের মেয়ে মরিয়ম নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত। হাসপাতালের খাবার নিম্নমানের হওয়ায় বাইরে থেকে এনে খাওয়াতে হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে মেসার্স শিউলী এন্টারপ্রাইজের আবু তালেব মুকুল ১৭ লাখ ৪৪ হাজার ২৯ টাকা পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিল উত্তোলন করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জুনেদ জাহিদ ট্রেডার্সের মুক্তার আহমদ ১৮ লাখ ৩৫ হাজার ৬৫০ টাকার বিল উত্তোলন করেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জুনেদ জাহিদ ট্রেডার্সের মুক্তার আহমদ ৩১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৫০ টাকার বিল উত্তোলন করেন। এক বছরের ব্যবধানে ১৩ লাখ ২০ হাজার ৮০০ টাকা অতিরিক্ত বিল উত্তোলন করা হয়েছে। চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি ইজিপি টেন্ডারে দু’জন ঠিকাদার অংশগ্রহণ করেন। সেখানে এক বছরের জন্য সর্বনিম্ন ২০ লাখ ৭৪ হাজার ৮৯৮ টাকার দর দেন শিউলী এন্টারপ্রাইজ। অন্যদিকে জুনেদ জাহিদ ট্রেডার্স ৩০ লাখ ৪১ হাজার টাকা দর দেন। ইজিপি টেন্ডারের নিয়ম অনুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতা শিউলী এন্টারপ্রাইজ কাজ পাওয়ার কথা থাকলেও কাগজপত্র সঠিক নয় বলে হাসপাতালের আলমাছ আহমদের সহায়তায় জুনেদ জাহিদ ট্রেডার্সকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ঠিকাদার মুক্তার আহমদ খাবারের পরিমাণ কম দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, খাবারে কিছুটা ত্রুটি থাকবে কারণ ভ্যাট রয়েছে। ব্যবসায়ী হয়ে দেখেন কত হিসাব। খাবারে মাছ-মাংস পরিমাণ থেকে কম দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন তিনি। 
হাসপাতালের প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক আলমাছুর রহমান জানান, তিনি ঠিকাদারের অংশীদার নন। যে কেউ এটা বলতে পারে কারও মুখ তো বন্ধ করা যায় না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ