৩ দাবিতে ‘লং মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি জবি শিক্ষার্থীদের
Published: 13th, May 2025 GMT
আবাসন সংকট ও বাজেট ঘাটতির প্রতিবাদে তিন দফা দাবিতে বুধবার (১৪ মে) ‘লং মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১৩ মে) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গঠিত প্ল্যাটফর্ম ‘জবি ঐক্য’ এই কর্মসূচির ঘোষণা দেয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সকাল ১১টায় শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার উদ্দেশ্যে পদযাত্রা করবেন। প্রয়োজনে সেখানে অবস্থান ও অবরোধ কর্মসূচিও ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
আরো পড়ুন:
‘রিটার্নিং টু লার্নিং’ প্রকল্প
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ফিরেছে প্রায় শতভাগ ঝরে পড়া শিক্ষার্থী
শিক্ষার্থীর বিকাশে শিক্ষকের বিকল্প নেই : উপদেষ্টা
জানা যায়, সোমবার (১২ মে) শিক্ষার্থীদের দাবির পক্ষে ক্যাম্পাসে এক ছাত্র-শিক্ষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মঙ্গলবার জবির শিক্ষক প্রতিনিধি ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন। তবে বৈঠক থেকে প্রত্যাশিত ফল না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ফয়সাল মুরাদ বলেন, “আমরা বাজেট ১৫৪ কোটি থেকে ৩০৫ কোটিতে উন্নীত করার দাবি জানিয়েছিলাম। ইউজিসি আমাদের দাবি যৌক্তিক বলে স্বীকার করলেও জানায়, তারা কিছু করতে পারবে না।”
তিনি আরও বলেন, “অনশন কর্মসূচির সময় দেওয়া প্রতিশ্রুতি আজো বাস্তবায়ন হয়নি। তাই আমাদের শেষ ভরসা—প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ। সেজন্যই আমরা যমুনার পথে লং মার্চের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবিগুলো হলো- আবাসন সংকট নিরসন না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি চালু করতে হবে, যা ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকেই কার্যকর করতে হবে; ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কোনো কাটছাঁট ছাড়াই অনুমোদন করতে হবে; জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্প পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে হবে।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ব্যাংকব্যবস্থা থেকে কম ঋণ নেবে সরকার
বাজেট–ঘাটতি মেটাতে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে কম ঋণ নেবে সরকার। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এ লক্ষ্যমাত্রা মোট বাজেটের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। আগামী অর্থবছরেও তা-ই থাকছে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার হতে পারে। এ বাজেট থেকেই ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আগামী অর্থবছরে আড়াই লাখ কোটি টাকার নিচে নামিয়ে আনা হচ্ছে। দেশি-বিদেশি উৎস থেকে এ ঋণ নেওয়া হবে। বাজেট প্রণয়নের মূল দায়িত্বে থাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাজেট–ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি অর্থবছরেই মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশের আশপাশে রাখা হয়। কখনো ৫ শতাংশের একটু বেশি থাকে বাজেট–ঘাটতি, কখনোবা ৫ শতাংশের কম। তবে আগামী অর্থবছরে বাজেট–ঘাটতি ৪ দশমিক ২ শতাংশ রাখা হতে পারে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। এ বাজেট–ঘাটতি পূরণে অবশ্য বেশির ভাগ ঋণই নেওয়া হবে দেশের ব্যাংকব্যবস্থা থেকে।
চলতি অর্থবছরে সরকারের মোট ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার মধ্যে নিট বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯০ হাজার ৭০০ কোটি এবং দেশি বা অভ্যন্তরীণ ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে। বাকি ঋণ সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য উৎস থেকে নেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের।
ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের বেশি ঋণ নিলে তাতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আবার ব্যাংকঋণের সুদ বাবদও বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়, যা মূলত রাজস্ব সংগ্রহের অর্থ। আগামী অর্থবছরে এসব বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।—মোস্তাফিজুর রহমান, সম্মাননীয় ফেলো, সিপিডি।চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আগামী অর্থবছরে তা বাড়িয়ে ২০ হাজার কোটি টাকা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে আগামী অর্থবছরে মোট ঋণের মধ্যে নিট বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা একটু বাড়িয়ে ধরা হচ্ছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১ লাখ ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে দেশি ঋণ। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে সর্বোচ্চ ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের দেশি-বিদেশি ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩২ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত জুন শেষে অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ২০ হাজার ২০৫ কোটি টাকায়। ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এর পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ২৩ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া গত বছরের জুন শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ১২ হাজার ৭৭ কোটি টাকায়, চার বছর আগে যার পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে চার বছরের ব্যবধানে বিদেশি ঋণ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশি-বিদেশি ঋণের স্থিতি বেশি হওয়ার কারণে সুদ পরিশোধ বাবদ বড় অঙ্কের বরাদ্দ রাখতে হচ্ছে আগামী বাজেটেও। আগামী অর্থবছরে ঋণের সুদ পরিশোধে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে এক লাখ টাকা কোটি টাকার বেশি, যার বড় অংশই ব্যয় হবে দেশি ঋণের সুদ পরিশোধে।
জানতে চাইলে সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের মূল সমস্যা রাজস্ব আদায়ে। রাজস্ব আদায় বাড়ানো গেলে সরকারকে এত বেশি ঋণ নিতে হতো না। আমার ধারণা, ব্যাংকব্যবস্থা থেকে আগামী অর্থবছরে সরকার বেশি ঋণ নেবে না; বরং সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি থেকে ভালো অর্থ সংগ্রহ করবে। গত জানুয়ারি থেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বেড়েছে। তাই মানুষ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন।’
ব্যাংকঋণের লক্ষ্যমাত্রা স্বস্তির কারণবাজেট–ঘাটতি পূরণে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার দুইভাবে ঋণ নেয়। একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে, অন্যটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমে যায় ব্যাংকগুলোর। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতি বাড়ে। তাতে ভোগান্তি বাড়ে সাধারণ মানুষের। অর্থনীতিরই সূত্র এটি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী গত এপ্রিলে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির জন্য ব্যাংকঋণ অন্যতম কারণ হলেও সরকারের হাতে তেমন বিকল্প নেই। তবে আশার কথা হচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রার পুরো সরকার ঋণ ব্যাংকব্যবস্থা থেকে নেয় না।
উদাহরণস্বরূপ, চলতি অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সংশোধিত বাজেট তা কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের আট মাসে সরকার ব্যাংক খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার ১৭ শতাংশ ঋণ নিয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের বেশি ঋণ নিলে তাতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আবার ব্যাংকঋণের সুদ বাবদও বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়, যা মূলত রাজস্ব সংগ্রহের অর্থ। আগামী অর্থবছরে এসব বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেট যদি ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে রাখা হয় তাহলে মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় তা যথেষ্টই ছোট হচ্ছে। আমাদের মূল নজর দিতে হবে রাজস্ব সংগ্রহে। বিশ্বের সর্বনিম্ন রাজস্ব–জিডিপির হার বলেই অতি জরুরি প্রয়োজন মেটাতে ব্যাংকব্যবস্থার ওপর সরকারকে নির্ভর করতে হচ্ছে। একই কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকার ভালো বরাদ্দ রাখতে পারছে না।