বিসিবির বিরুদ্ধে টেন্ডার অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তালিকার বাইরে থেকে ভেন্ডরদের কাজ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। গত বিপিএলে এডুটেকস লিমিটেড ও ইন্টারঅ্যাকটিভ লিমিটেডকে নিয়মবহির্ভূতভাবে কাজ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এডুটেকস বিপিএলের থিম সং তৈরি ও টুর্নামেন্টে ডিজের কাজ পেয়েছিল। আর ইন্টারঅ্যাকটিভকে কাজ দেওয়া হয় পাঁচ ক্যাটেগরিতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই দুটি কোম্পানি বিসিবির বিজ্ঞাপনে বেঁধে দেওয়া সময়ে তালিকাভুক্ত হয়নি। পরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ১৩ সেপ্টেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত বিজ্ঞাপন অনুযায়ী তিন বছরের ভেন্ডর তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যে তালিকায় না থাকলেও আটটি ক্যাটেগরিতে কাজ দেওয়া হয় দুটি প্রতিষ্ঠানকে।
বিপিএল একাদশ আসরের বিভিন্ন কাজের জন্য ভেন্ডর তালিকাভুক্ত করার বিজ্ঞাপন অনুযায়ী এনলিস্টেড হওয়ার শেষ সময় ছিল ১৪ অক্টোবর। কোনো অজানা কারণে এক দিন বাড়িয়ে ১৫ অক্টোবর করা হয় বিজ্ঞাপন দিয়ে। সে অনুযায়ী ৬৯টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয় বিপিএলের কাজ পাওয়ার জন্য। এই তালিকা থেকে ডিজাইন, প্রিন্টিং, চিত্রকর্ম, বিজ্ঞাপন, ক্রিয়েটিং সার্ভিস, আইটি সাপোর্ট, ব্র্যান্ডিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, বিজ্ঞাপন তৈরির কাজগুলো দেওয়ার কথা। অথচ কাজ দেওয়া হয় নিবন্ধিত তালিকার বাইরের দুই কোম্পানিকে। এ দুই কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিতে মার্কার দিয়ে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়। ২১ নভেম্বর এডুটেকস আর ৮ ডিসেম্বর ইন্টারঅ্যাকটিভ প্রতিটি ক্যাটেগরির জন্য ১৫ হাজার টাকা জমা দেয় ওয়ান ব্যাংকে।
অনিয়মতান্ত্রিক ভেন্ডর নিয়োগ এবং কাজ দেওয়ার পেছনে কার হাত আছে, জানতে চাওয়া হলে বিসিবির টেন্ডার অ্যান্ড পারচেজ কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল আনাম বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর যে তালিকা পেয়েছি, সেখানে এডুটেকস ও ইন্টারঅ্যাকটিভ আছে।'
বিসিবির এ পরিচালক জানেন না দেওয়ার কথা। অথচ কাজ দেওয়া হয় নিবন্ধিত তালিকার বাইরের দুই কোম্পানিকে। এ দুই কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিতে মার্কার দিয়ে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়। ২১ নভেম্বর এডুটেকস আর ৮ ডিসেম্বর ইন্টারঅ্যাকটিভ প্রতিটি ক্যাটেগরির জন্য ১৫ হাজার টাকা জমা দেয় ওয়ান ব্যাংকে। অনিয়মতান্ত্রিক ভেন্ডর নিয়োগ এবং কাজ দেওয়ার পেছনে কার হাত আছে, জানতে চাওয়া হলে বিসিবির টেন্ডার অ্যান্ড পারচেজ কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল আনাম বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর যে তালিকা পেয়েছি, সেখানে এডুটেকস ও ইন্টারঅ্যাকটিভ আছে।'
বিসিবির এ পরিচালক জানেন না নিয়মবহির্ভূতভাবে ভেন্ডর তালিকাভুক্তির বিষয়টি। এ ব্যাপারে বিসিবি সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, 'প্রশাসনিক বিভাগ তালিকা করে থাকে। তারা ভালো বলতে পারবে। আমাদের কাছে যে তালিকা আছে, তাতে কাজ পাওয়া দুটি কোম্পানি নিবন্ধিত।' তিনি নির্ধারিত সময়ের পরে ভেন্ডর তালিকাভুক্তির বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি।
গত সেপ্টেম্বরে টেন্ডার অ্যান্ড পারচেজ বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। এডুটেকস ও ইন্টারঅ্যাকটিভ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, 'আমরা সবাই মিলে বোর্ডে কয়েকটি ভেন্ডরকে তালিকাভুক্ত করেছি। যে দুই কোম্পানির কথা বলা হচ্ছে, তারা আগে থেকেই বিসিবিতে কাজ করত। এ কারণে কাজ পেয়েছে।'
এ ব্যাপারে বিসিবি পরিচালকদের কাছে জানতে চাওয়া হলে দু'জন বলেন, ‘এই কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয়েছে প্রেজেন্টেশন দেওয়ার সময়। কীভাবে তালিকাভুক্ত হয়েছে, তা জানা নেই।'
বিসিবির একজন কর্মকর্তা জানান, সভাপতি তাঁর ক্ষমতাবলে কয়েকটি ভেন্ডর তালিকাভুক্ত করেছেন। যদিও বিসিবির গঠনতন্ত্রে সভাপতিকে অতীব জরুরি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, তিন কার্যদিবস থাকলে যে কোনো সিদ্ধান্ত পরিচালনা পর্ষদের সভায় অনুমোদন করতে হবে। ন্যূনতম সময় থাকলে তিনজন পরিচালকের উপস্থিতিতে জরুরি সভা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিপিএলের ভেন্ডর তালিকাভুক্তকরণ বা কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব প এল ত ল ক ভ ক ত কর ব প এল র অন য ম র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় পার্টির নিয়ন্ত্রণ নিতে তৎপর আনিসুল, ঠেকাতে সক্রিয় জিএম কাদের
নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর জি এম কাদের এবং সম্মেলন অনুষ্ঠানের পর আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির (জাপা) দুই পক্ষই তৎপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায়। দুই পক্ষই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দ্বারস্থ হয়েছে।
সম্মেলন করে নতুন কমিটি গঠন করার পর আনিসুল ইসলামরা গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনের ‘স্বীকৃতি’, অর্থাৎ দলের নিবন্ধন ও ‘লাঙ্গল’ প্রতীক ব্যবহারের অধিকার চাইছে। অন্যদিকে জি এম কাদের সম্মেলন অনুষ্ঠান, কমিটি গঠনসহ পুরো প্রক্রিয়াকে অবৈধ বলে ইসিকে জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, আনিসুল ইসলামের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির ‘দশম কাউন্সিল’–এর পর নবনির্বাচিত নেতৃত্বের তথ্য দিয়ে ইসি সচিবের বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে তারা দলীয় গঠনতন্ত্রের বিতর্কিত ধারা ২০/১/ক বাতিল করার কথা বলেছে। এ ধারায় চেয়ারম্যানকে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ধারাটি সংশোধন করে আনিসুল ইসলামরা দলের কোনো কেন্দ্রীয় সদস্যকে বহিষ্কার বা অব্যাহতি এবং জেলা ও ইউনিটি বাতিল করার আগে প্রেসিডিয়ামের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বাধ্যবাধকতার কথা উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া চেয়ারম্যান কাউকে বহিষ্কার বা অব্যাহতি দিলেও প্রেসিডিয়াম সভায় তাঁর অনুমোদন নেওয়ার কথাও যুক্ত করেছে। গঠনতান্ত্রিকভাবে সম্মেলনের মাধ্যমে এসব সংশোধনী আনার কথা উল্লেখ করে তারা ইসির স্বীকৃতি চেয়েছে।
সম্মেলনের পরদিন ১০ আগস্ট আনিসুল ইসলামদের নেতৃত্বাধীন নবনির্বাচিত কমিটির শীর্ষ চার নেতার তালিকা কমিশনে জমা দেওয়া হয়। এ কমিটিকে জাতীয় পার্টির ‘মূলধারা’ দাবি করে তারা বলেছে, ‘লাঙ্গল’ প্রতীক ব্যবহারের বৈধ অধিকার কেবল তাদের কমিটির আছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এখন তারা জাতীয় পার্টির কার্যালয় ও দলীয় তহবিল বুঝিয়ে দিতে এবং দলের নিবন্ধন নম্বর ১২ ব্যবহার না করতে জি এম কাদেরকে আইনি নোটিশ পাঠানোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।
এদিকে আজ বুধবার জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির একজন নেতা রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে চিঠি দিয়েছেন। জানা গেছে, ওই চিঠিতে দলের গঠনতন্ত্রের বিভিন্ন ধারা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, যাঁরা সম্মেলন আহ্বান করেছেন, তাঁরা দল থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত। চেয়ারম্যান ছাড়া অন্য কারও সম্মেলন ডাকার এখতিয়ার নেই। ফলে এ সম্মেলন ও কমিটি গঠনের পুরো প্রক্রিয়া অবৈধ, বেআইনি।
৯ আগস্ট রাজধানীর গুলশানের একটি মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির ‘দশম কাউন্সিল’ করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক (চুন্নু)। সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম চেয়ারম্যান, মুজিবুল হক নির্বাহী চেয়ারম্যান, কাজী ফিরোজ রশীদ সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও এ বি এম রহুল আমিন হাওলাদার মহাসচিব নির্বাচিত হন। জি এম কাদের তাঁদের জাতীয় পার্টির প্রাথমিক সদস্য পদসহ অন্যান্য পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জি এম কাদের ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমকে বিবাদী করে আনিসুল ইসলামসহ ১০ নেতা ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা করেন। আদালত দুজনের সাংগঠনিক কার্যক্রমের ওপর ১২ আগস্ট পর্যন্ত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন। এ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে (৯ আগস্ট) আনিসুল ইসলামরা সম্মেলন করে নতুন কমিটি করেন।
১২ আগস্ট ছিল জি এম কাদেরের ওপর আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার শেষ দিন। সেদিনই বাদীপক্ষ মামলাটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার আবেদন করে। এদিকে মামলার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বিব্রতবোধ করায় ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত থেকে ১১ আগস্ট মামলাটি ষষ্ঠ যুগ্ম জেলা জজ আদালতে বদলি করা হয়। পরদিন (১২ আগস্ট) বিচারক মামলা প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুর করেন। ফলে জি এম কাদেরসহ দুজনের সাংগঠনিক কার্যক্রমের ওপর দেওয়া অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আর থাকছে না।
এ বিষয়ে জি এম কাদেরের জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এতে আমরা আনন্দিত। এর ফলে চেয়ারম্যানের সাংগঠনিক কার্যক্রমের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আইনগতভাবে নেই। এখন তিনি মুক্তভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারবেন।’
আনিসুল ইসলামসহ ১০ নেতা হঠাৎ কেন মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করলেন, তা নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন তো তিনি (জি এম কাদের) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নন। আমরা সম্মেলন করে নতুন কমিটি করেছি, মামলা থাকবে কেন? মামলা থাকলে তো তাঁকে চেয়ারম্যান স্বীকার করা হয়।’