৫০ বছরের অপেক্ষা শেষে বোলোনিয়ার ইতিহাস, রোমে উল্লাস
Published: 15th, May 2025 GMT
রোমের অলিম্পিকো স্টেডিয়ামের বাতাসে বুধবার রাতে ভেসে বেড়িয়েছে বোলোনিয়ার জয়ধ্বনি। দীর্ঘ ৫১ বছরের তৃষ্ণা মিটিয়ে ইতালিয়ান কাপের শিরোপা জিতে নিল ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবটি। ফাইনালে তারা ১-০ গোলে হারিয়েছে এসি মিলানকে, রচনা করেছে এক নতুন অধ্যায়ের।
১৯৭৪ সালের পর এই প্রথম কোনো বড় শিরোপার মুখ দেখল বোলোনিয়া। যে সময়টাতে পুরো একটি প্রজন্ম কখনো এমন উৎসব দেখেনি, সেই ক্লাবের আকাশ এবার রঙিন করল একমাত্র গোলদাতা ড্যান নডোয়ে। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের ৫৩ মিনিটে তার করা একমাত্র গোলেই নিশ্চিত হয় বোলোনিয়ার ইতিহাস গড়া জয়।
কোচ ভিনচেনজো ইতালিয়ানোর জন্য এই জয় যেন এক মধুর প্রতিশোধ। ফিওরেন্টিনার ডাগআউটে দাঁড়িয়ে তিনবার ফাইনালে হারার কষ্ট আজ মুছে গেল বোলোনিয়াকে চ্যাম্পিয়ন বানিয়ে। থিয়াগো মোটতার উত্তরসূরি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে তিনি দলটিতে এনেছেন সংগঠিত রূপ আর দৃঢ় মানসিকতা। তার কোচিংয়ের ফলস্বরূপ বোলোনিয়া পেল বহু প্রতীক্ষিত সাফল্যের স্বাদ।
আরো পড়ুন:
গোল বন্যার ম্যাচে নিষ্প্রভ মেসি, জয়বঞ্চিত মায়ামি
বার্সার অপেক্ষা বাড়িয়ে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখলো রিয়াল
ম্যাচ শেষে খেলোয়াড়দের বুকে জড়িয়ে ধরা ইতালিয়ানোর চোখে জল ছিল গর্বের, আর গ্যালারিতে তখন হাজারো সমর্থকের নাচে-কান্নায় মিলেছে আবেগের বিস্ফোরণ। অনেকেই বলছিলেন, এমন মুহূর্ত হয়তো আর কখনো জীবনে দেখবেন না।
এক সময়ের ইউরোপ দাপানো এসি মিলানের জন্য আবারও হতাশার রাত। শেষবার তারা এই কাপ ছুঁয়েছিল ২০০৩ সালে। যে বছর তারা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল। সেই স্মৃতিময় সময় আজ শুধুই অতীত। বর্তমান মিলান যেন পথ হারানো এক জাহাজ, যার গন্তব্য স্পষ্ট নয়।
এই হারের ফলে তাদের ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় খেলার সম্ভাবনাও অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। সিরি’আ লিগের টেবিলে তারা এখন অষ্টম। ইউরোপা কনফারেন্স লিগে জায়গা করে নিতে হলে তাদের আগামী ম্যাচে রোমার বিপক্ষে জিততেই হবে।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
দেখতে চাইলে দেখো, না চাইলে চোখ ফিরিয়ে নাও: ফ্লোরেন্স পিউ
অনেক বছর আগের কথা। ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড শহরে শিশিরভেজা জানালার পাশে বসে এক ছোট্ট মেয়ে গুনগুন করে গান গাইছিল। তার গলায় ছিল অদ্ভুত এক সুর। তখন কেউ কল্পনাও করেনি, মেয়েটি একদিন হলিউডের আলো ঝলমলে দুনিয়ায় এসে দাঁড়াবে এবং এমনভাবে দাঁড়াবে যেন সে কখনও নতুন ছিল না; বরং সবসময়ই এ জায়গার জন্যই তৈরি ছিল। মেয়েটি আর কেউ নন এ সময়ের অন্যতম প্রতিশ্রুতিশীল অভিনেত্রী ফ্লোরেন্স পিউ।
২০১৪ সালে তাঁকে প্রথম দেখা যায় ‘দ্য ফলিং’ সিনেমায়। সেই ফ্লোরেন্স অভিনয় করেছিলেন ছোট্ট এক চরিত্রে। তখন তাঁকে দেখে অনেকে বলেছিল, ‘এত পরিণত কীভাবে সম্ভব?’
ফ্লোরেন্সের ক্যারিয়ারে সত্যিকার আলো এসে পড়ে ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘লেডি ম্যাকবেথ’ সিনেমার মাধ্যমে। এ ছবির মাধ্যমে পুরো বিশ্বে নজর কাড়েন ফ্লোরেন্স। এক নিঃস্ব নারীর বিদ্রোহ, প্রেম আর অপরাধের মাঝে ডুবে থাকা এ গল্পে ফ্লোরেন্স যেন চরিত্রটিকে নিজের ভেতরে টেনে নিয়েছিলেন। ছবিটির জন্য ব্রিটিশ ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডও জেতেন। এরপর টেলিভিশন সিনেমা ‘কিং লিয়ার’ ও মিনি সিরিজ ‘দ্য লিটল ড্রামার গার্ল’ দিয়ে অভিনেত্রী হিসেবে সমালোচকদের সমীহ আদায় করে নেন। পরেরটির জন্য বাফটায় সেরা নবাগত তারকার মনোনয়নও পান। ফ্লোরেন্সকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৯ সাল ছিল ফ্লোরেন্সের উজ্জ্বলতম বছর।
ফ্লোরেন্স পিউ। ছবি: ইন্সটাগ্রাম
২০১৯ সালে তিনি ‘ফাইটিং উইথ মাই ফ্যামিলি’ সিনেমার জন্য রেসলার হলেন, ‘মিডসোমার’-এ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত প্রেমিকা হলেন আর সাহসী ‘এমি মার্চ’ রূপে হাজির হলেন ‘লিটল ওম্যান’-এ। একই বছরে তিনটি আলাদা ঘরানার তিন চরিত্র এবং তিনবারই একেবারে নিখুঁত। ‘এমি’ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি অস্কার মনোনয়ন পেলেন, আর ‘মিডসোমার’-এ তাঁর কান্না দর্শক হৃদয়ে কাঁপন ধরিয়ে দিল। তারপরে এল মার্ভেলের ‘ব্ল্যাক উইডো’।
এ সিনেমায় যখন ফ্লোরেন্স এলেন ‘ইলেনা’ হয়ে, তখনই বোঝা গেল ফ্লোরেন্স কেবল শিল্প ঘরানার অভিনেত্রী নন, বড় মঞ্চের পারফরমারও। তাঁর সংলাপে যেমন রসবোধ, তেমনি চোখে ছিল হারানোর ভয়। ‘সুপারহিরো’ চরিত্রকে তিনি মানবিক করে তুললেন। ফ্লোরেন্সের সবচেয়ে বড় শক্তি, তিনি নিজেকে কোনো ছাঁচে ফেলতে রাজি নন।
যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর শরীর নিয়ে কটাক্ষ হলো, তখন তিনি সোজাসুজি বললেন, ‘আমি যেমন আছি, তেমনটাই সুন্দর। তুমি দেখতে চাইলে দেখো, না চাইলে চোখ ফিরিয়ে নাও। আমি বদলাবো না।’ এমন নির্ভীক কণ্ঠস্বরের কারণে বলা যায় ফ্লোরেন্স পিউ কেবল একজন অভিনেত্রী নন; বরং নতুন প্রজন্মের সাহসী, সৃজনশীল ও আত্মবিশ্বাসী নারীর প্রতিচ্ছবি।
ফ্লোরেন্স পিউ। ছবি: এন্টারটেইনমেন্ট টু-নাইট
সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে এ অভিনেত্রীর ‘থান্ডারবোল্টস’। আগের ‘ব্ল্যাক উইডো’ সিনেমায় তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। এবার যেন তিনি আরও পরিণত হয়েছেন। তাঁর চরিত্রে যেমন আছে হাস্যরস, ঠিক তেমনি যন্ত্রণার ছাপ। এখন ফ্লোরেন্সের বয়স ২৯, সামনে আরও দীর্ঘ পথ। তবু মনে হয়, তিনি যেন বহু পথ পেরিয়ে এসেছেন। তাঁর প্রতিটি চরিত্রে থাকে অভিজ্ঞতার গন্ধ, থাকে আবেগের ছাপ। অভিনয় তাঁর কাছে পেশা নয়; বরং আত্মার অভিব্যক্তি।