মুন্সিগঞ্জে স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ
Published: 17th, May 2025 GMT
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় সেলিনা বেগম (৩৫) নামে এক নারীকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তাঁর স্বামী সুজন মোল্লার (৪৩) বিরুদ্ধে। গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার আধারা ইউনিয়নের দেওয়ানকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত সেলিনা বেগমের বাড়ি একই ইউনিয়নের বকুলতলা গ্রামে। তিনি গোলাম মোস্তফার মেয়ে। সুজন মোল্লার বাড়ি দেওয়ানকান্দি গ্রামে। এক বছর আগে পারিবারিকভাবে তাঁদের বিয়ে হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, সুজন মোল্লা মাদকাসক্ত ছিলেন এবং প্রায়ই রাত করে বাড়ি ফিরতেন। বিয়ের পর থেকে স্ত্রীর পরকীয়া সন্দেহে নিয়মিত মারধর করতেন তিনি। এ নিয়ে দম্পতির মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। এক সপ্তাহ আগে বড় ধরনের ঝগড়ার পর সেলিনা বেগম বাবার বাড়ি চলে যান। কয়েক দিন আগে দুই গ্রামের মুরুব্বিদের মধ্যস্থতায় তিনি স্বামীর বাড়ি ফেরেন।
নিহতের পরিবারের দাবি, শুক্রবার রাতে সুজন ও সেলিনার মধ্যে ঝগড়া হয়। সুজন একপর্যায়ে সেলিনাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
সেলিনা বেগমের বোন শিল্পী আক্তার বলেন, বিয়ের পর থেকে বোনের জীবনে কোনো শান্তি ছিল না। স্বামী প্রায়ই মারধর করতেন। এক সপ্তাহ আগে বোন বাড়ি চলে এসেছিলেন। মানুষ কী বলবে, এই ভয়ে আবার স্বামীর বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত বোনকে প্রাণটাই দিতে হলো। তিনি সেলিনা হত্যার বিচার দাবি করেন।
পুলিশ জানায়, ঘটনার পর সুজন মোল্লা টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড় এলাকা থেকে আটক হন। বর্তমানে তিনি মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মুন্সিগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক মিল্টন বলেন, সুজন মোল্লা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। পরকীয়া সন্দেহ থেকেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটান তিনি। সেলিনাকে হত্যার পর সুজন নিজেও বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তবে তিনি বেঁচে যান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স জন ম ল ল হত য র
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।