নেত্রকোনায় চলন্ত ট্রেন থেকে বগি বিচ্ছিন্ন, যাত্রীদের ভোগান্তি
Published: 17th, May 2025 GMT
নেত্রকোনায় চলন্ত ট্রেন থেকে বগি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে সদর উপজেলার চল্লিশা সেতু এলাকায় আন্তনগর মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে এ ঘটনা ঘটে। নেত্রকোনা বড় স্টেশনের সহকারী স্টেশনমাস্টার গুলনাহার ডেইজি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ঘটনার পর চালক বিষয়টি বুঝতে না পারায় বগিগুলো রেখে ইঞ্জিনের সঙ্গে একটি বগি নিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে চলে যান। পরে বুঝতে পেরে চালক ইঞ্জিন থামান। এরপর নেত্রকোনা বড় স্টেশনে গিয়ে একটি বগি রেখে ইঞ্জিন ঘুরিয়ে বগিগুলো টেনে আনার প্রক্রিয়া চলছে। রাত সাড়ে নয়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ট্রেনের বগি এখনো আনা হয়নি। ট্রেনটি দীর্ঘ সময় ধরে আটকে থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কমলাপুর স্টেশন থেকে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি আজ বেলা ১টা ১৫ মিনিটে মোহনগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সন্ধ্যা সাতটার দিকে মোহনগঞ্জ স্টেশনে পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু নেত্রকোনা সদর উপজেলার চল্লিশা সেতু এলাকায় পৌঁছানোর পর চলন্ত ট্রেনটির ইঞ্জিন বগি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। লোকোমাস্টার বিষয়টি বুঝতে না পারায় বগি থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ইঞ্জিনটি নিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে চলে যান। পরে বুঝতে পেরে ইঞ্জিন থামানো হয়। এরপর নেত্রকোনা বড় স্টেশনে পৌঁছে ইঞ্জিন ঘুরিয়ে ওই স্থানে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা বগিগুলো নেত্রকোনা স্টেশনে টেনে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
সহকারী স্টেশনমাস্টার গুলনাহার ডেইজি প্রথম আলোকে বলেন, ইঞ্জিন ও বগির মাঝখানে সংযোগকারী হুক ভেঙে যাওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। ট্রেনটিতে ১৩টি বগি আছে। বগিগুলোতে প্রায় দেড় হাজার যাত্রী। তবে কেউ হতাহত হননি। তিনি জানান, বিচ্ছিন্ন বগিগুলো ইঞ্জিনের সঙ্গে জোড়া লাগানোর চেষ্টা চলছে। ট্রেনটি আটকে থাকায় ময়মনসিংহ-মোহনগঞ্জ রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম হনগঞ জ ন ত রক ন ট র নট
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
প্রতিদিনের মতো কাজ শেষে গতকাল সোমবার বাসায় ফিরছিলেন নাজমা বেগম। ঢাকার টঙ্গী এলাকায় থাকেন তিনি। পরিচিত এক ব্যক্তি তাঁকে হঠাৎ ফোন করে জানান, তাঁর নিখোঁজ ছেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। দ্রুত ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেন নাজমা। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিও দেখান নাজমাকে। সে ভিডিওতে দেখতে পান, তাঁর ১০ দিন ধরে নিখোঁজ ছেলে আবদুল্লাহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।
ছেলের খোঁজ পেয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ছুটে আসেন তিনি। রেলস্টেশন থেকে সরাসরি চলে আসেন চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে। এখানেই ৮ দিন ধরে ভর্তি আবদুল্লাহ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৮ সেপ্টেম্বর আহত অবস্থায় আবদুল্লাহকে হাসপাতালে আনা হয়। সে সময় তার নাম-ঠিকানা কিছুই জানা যায়নি। অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবেই হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে নেওয়া হয় তাকে। পরদিন তার অস্ত্রোপচার হয়। গত শনিবার আবদুল্লাহর জ্ঞান ফেরে। এরপর নিজের ও বাবা-মায়ের নাম আর বাসার ঠিকানা জানায় সে।
চিকিৎসকেরা সেই সূত্রে ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানাভাবে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন। ফেসবুকে আবদুল্লাহর ছবি দিয়ে খোঁজ চাওয়া হয় বাবা-মায়ের। সেই ছবি পরিচিতদের মাধ্যমে দেখেন নাজমা বেগম। এরপর ছুটে আসেন চট্টগ্রামে। হাসপাতালে এসেই নার্সদের সহায়তায় যান নিউরোসার্জারি বিভাগে। সেখানে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ)চিকিৎসাধীন আবদুল্লাহকে দেখেন।
আজ বিকেলে হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের সামনে কথা হয় আবদুল্লাহর মা নাজমা বেগমের সঙ্গে। সকালেই চট্টগ্রাম পৌঁছেছেন তিনি। জানালেন, তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে ১০ বছর বয়সী আবদুল্লাহ সবার বড়। ছোট মেয়ের বয়স পাঁচ ও আরেক ছেলের বয়স দুই। আবদুল্লাহ সুস্থ আছে জেনে স্বস্তি পেলেও দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। কারণ, এটিই প্রথমবার নয়, এর আগেও কয়েকবার ঘর থেকে কিছু না বলে বেরিয়ে যায় সে।
নাজমা বেগম বলেন, প্রায়ই আবদুল্লাহ ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এদিক–সেদিক চলে যায়। পরে আবার ফিরে আসে। এর আগেও ঢাকার আশপাশে এদিক-সেদিক চলে গিয়েছিল সে। ৬ সেপ্টেম্বর সে ভাত খাওয়া থেকে উঠে হঠাৎ চলে যায়। সে ফিরে আসবে এই আশায় থানায় যাননি। কিন্তু ১০ দিন হয়ে যাওয়ায় এদিক–সেদিক খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। ঢাকায় বিভিন্ন স্টেশনে ছেলের খোঁজে গেছেন বলে জানান নাজমা।
চমেক হাসপাতালে চিকিৎসকেরা আবদুল্লাহর বরাত দিয়ে জানান, বাসা থেকে বেরিয়ে সে কক্সবাজার যাচ্ছিল। পথে চট্টগ্রামে ট্রেন থামলে সে ট্রেন থেকে পড়ে যায়। চিকিৎসার পর এখন সুস্থ হয়ে উঠছে সে।
চিকিৎসকেরা জানান, আবদুল্লাহকে যখন আনা হয় তার মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল। তার মাথার এক পাশের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। ট্রেন থেকে পড়ার কারণে মাথায় আঘাত লাগে। হাড়ের কিছু অংশ মস্তিষ্কের ভেতরে গেঁথে যায়। অস্ত্রোপচারও সফল হয়েছে। তবে জ্ঞান না ফেরায় তার পরিচয় জানা যায়নি। জ্ঞান ফেরার পর তার তথ্য নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়।
শুরু থেকে আবদুল্লাহর অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউরোসার্জারি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক মু. ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘তার হাড় ভেঙে মস্তিষ্কের ভেতরে চলে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর স্বাভাবিকভাবে সেটি জোড়া দেওয়া হয়েছে। এখন সে পুরোপুরি সুস্থ। তাকে আমরা আজ-কালের মধ্যে ডিসচার্জ করে দেব। শিশুকে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিতে পেরে আমরাও আনন্দিত।’