অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে জরুরি সাক্ষাৎ, কী ঘটছে বিএসইসির চেয়ারম্যানের ভাগ্যে?
Published: 18th, May 2025 GMT
দেশের শেয়ারবাজারে ক্রমাগত ধসে সমালোচনা মুখে পড়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মকসুদ। সাধারণ বিণিয়োগকারীরা ইতোমধ্যে তার পদত্যাগের দাবি তুলেছেন। এ অবস্থায় সোমবার (১৯ মে) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সঙ্গে দেখা করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মকসুদ অর্থ উপদেষ্টা সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চাইলে তাকে ১০ মিনিটের সময় দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী সকাল ৯-৫০ মিনিটে বিএসইসি চেয়ারম্যান অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করবেন। এ সময়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগের পত্র অর্থ উপদেষ্টার কাছে দিতে পারেন। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে এ পদে তার আর থাকা সম্ভব হচ্ছে বলে তিনি পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করতে পারেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
গত বছরের ১৮ আগস্ট রাশেদ মকসুদকে বিএসইসি চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। এরপর থেকে তিনি কঠোর হস্তে বিএসইসি অসৎ কর্মকর্তাদের অপসারণ করেন। চলতি বছরই তিনি বিএসইসি ১৬ কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেন। এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। তাদের অনেকে বিএসইসি সাবেক চেয়ারম্যান বর্তমানে দুর্নীতি অভিযোগে কারাগারে থাকা শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের ঘনিষ্ঠও ছিলেন।
আরো পড়ুন:
সরকার পুঁজিবাজারের সমস্যা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছে: ড.
এপেক্স ট্যানারির প্রয়াত উদ্যোক্তার শেয়ার হস্তান্তর
এদিকে, পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের প্রতিবাদে কফিন নিয়ে রাস্তায় বিক্ষোভ করেছেন দেশের শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা।
রবিবার (১৮ মে) রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে এ ব্যতিক্রমী বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভকালে বিএসইসি চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি করেন আন্দোলনকারীরা।
বিক্ষোভের আয়োজক বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে বিনিয়োগকারীরা প্রথমে কফিন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে জড়ো হন। সেখান থেকে একটি মিছিল বের হয়ে হাটখোলা মোড় হয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে তারা প্রতীকী কফিন নিয়ে গায়েবানা জানাজা পড়েন।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া বিনিয়োগকারীরা বলেন, শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক দরপতনের কারণে লাখো বিণিয়োগকারী পথে বসেছেন। মাকসুদের নেতৃত্বে বাজার থেকে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা মূলধন উধাও হয়েছে। তারা অভিযোগ করেন, পুঁজি হারিয়ে অনেক বিণিয়োগকারী হতাশায় পড়েছেন।
বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ পুঁজিবাজার বোঝেন না, তার নেতৃত্বে বাজারে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।
তারা আরো বলেন, গতকাল (শনিবার) এক বৈঠকে তিনি অংশীজনদের হুমকি দিয়েছেন, যাতে পুঁজিবাজার সম্পর্কে নেতিবাচক তথ্য গণমাধ্যমে না আসে এবং তার বিরুদ্ধে কেউ আন্দোলন না করে। বিনিয়োগকারীদের মতে, এই মানসিকতা দায়িত্বশীল পদে থাকা কারো হতে পারে না।
এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের পুঁজিবাজার রক্ষা করা আমাদের কাজ নয়- মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিক্ষোভকারীরা। তাদের মতে, অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এ খাতকে রক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব সংস্থার দায়িত্ব রয়েছে।
বিণিয়োগকারীরা বলেন, সামনে কোরবানির ঈদ। এর আগে বাজারের এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে আরো অনেক বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হবে।
তারা বলেন, বাধ্য হয়ে কফিন নিয়ে রাস্তায় নামতে হয়েছে। এখন যদি পরিবর্তন না আসে, তাহলে আন্দোলনের মাত্রা আরো বাড়ানো হবে। তাদের একটাই দাবি, বাজার বাঁচাতে হলে খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে দ্রুত অপসারণ করতে হবে।
ঢাকা/হাসনাত/বকুল
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
আরো পড়ুন:
সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি।
এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/এনটি/বকুল