বিচারের দাবিতে অনড়, কুয়েটে ভিসির কার্যালয়ে শিক্ষকদের অবস্থান
Published: 19th, May 2025 GMT
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) তিন মাসে আগের সংঘর্ষ ও শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় বিচারিকপ্রক্রিয়া বিলম্বিত করায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এর প্রতিবাদ ও দ্রুত ক্লাস শুরুর দাবিতে আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষক সমিতির সদস্যরা। দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ওই কর্মসূচি চলে।
এর আগে গতকাল রোববার শিক্ষক সমিতি সব ধরনের প্রশাসনিক কাজ থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দেয়। ৪ মে থেকে শিক্ষকেরা একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা থেকেও বিরত রয়েছেন। সমিতির অভিযোগ, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না এবং স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না।
আজকের অবস্থান কর্মসূচি শেষে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন বলেন, ফেব্রুয়ারির অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুয়েটে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর কাজ শুরু করেছিল। এরপর হঠাৎ মাঝপথে থেমে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম জিম্মি হয়ে আছে বলে মনে হচ্ছে। এই জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ও স্বাভাবিক পরিবেশে ফেরার জন্য শিক্ষকেরা উদ্বিগ্ন। শিক্ষার্থীরাও আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচির সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য কার্যালয়ে ছিলেন না। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলছে, উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়–সংক্রান্ত কাজে ঢাকায় গেছেন। আগামীকাল মঙ্গলবারও উপাচার্যের কার্যালয়ে আবারও শিক্ষক সমিতি অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বলে জানিয়েছেন সমিতির সভাপতি অধ্যাপক সাহিদুল ইসলাম।
গতকাল অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মেনে শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে শোকজের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে।
সমিতির নেতারা মনে করেন, নিয়ম অনুযায়ী শৃঙ্খলা কমিটির সভা আহ্বান করে বিচারকার্য সম্পন্ন করাই এখন একমাত্র স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কোনো একক ব্যক্তির সিদ্ধান্তে এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বন্ধ করা সমীচীন নয়। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষক সমিতি আজ দুপুর ১২টার মধ্যে বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার জোর দাবি জানিয়েছিল। অন্যথায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু না হওয়া ও পরবর্তী যেকোনো পরিস্থিতির জন্য ভিসিকেই সম্পূর্ণ দায়ভার বহন করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয় সমিতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে, ৫ মে অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া অপ্রত্যাশিত ও শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে সাত কর্মদিবসের মধ্যে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬ মে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষক সমিতির দাবির সঙ্গে সংগতি রেখে প্রশাসন কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ পাঠানো হয়। শিক্ষক সমিতি প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও সাধারণ শিক্ষার্থীরা এটিকে প্রহসনমূলক পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
পরবর্তী সময়ে একাডেমিক কার্যক্রম আবার চালু করা, একটি নতুন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা এবং আগে ঘোষিত পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নের একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা ঘোষণার দাবিতে গত বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা তাঁদের দাবির বিষয়ে জানান, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে জোর করে প্রহসনমূলক শাস্তি আরোপের জন্য যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে এবং ১৮ ফেব্রুয়ারির হামলা ও শিক্ষকদের ওপর সংঘটিত সব ধরনের শারীরিক নিগ্রহের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তাঁরা আরও দাবি জানান, নতুন তদন্ত কমিটি তাঁদের নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষার পাশাপাশি কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য শৃঙ্খলা কমিটির সভা আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তের কথা আন্দোলনকারীদের জানান। উপাচার্যের এই সিদ্ধান্ত শিক্ষক সমিতিকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। এর ফলে শিক্ষক সমিতি আরও কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
এসব বিষয়ে কুয়েটের অন্তর্বর্তী উপাচার্য অধ্যাপক মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ক ষকদ র র অবস থ ন উপ চ র য প রক র য় র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সিনিয়র ফুটবলারদের আরেকটা সুযোগ দেওয়া উচিত: ঋতুপর্ণা চাকমা
বাংলাদেশের ফুটবলের পোস্টার গার্ল ঋতুপর্ণা চাকমা। রাঙামাটির মগাছড়ি গ্রামের ঋতু, ফুটবলবোদ্ধাদের চোখে বাংলাদেশের মেসি। আগামী মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় নারী এশিয়ান কাপ ফুটবলে বাংলাদেশ যে টিকিট কেটেছে, তার মূল কারিগর ২১ বছর বয়সী এ উইঙ্গার। মিয়ানমারে এএফসি উইমেন্স এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে দৃষ্টিনন্দন ৫ গোল করেন তিনি। যদিও কারও সঙ্গে তুলনায় যেতে চান না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনে অধ্যয়নরত ঋতু। মিয়ানমার থেকে ফিরে সোমবার সকালে ভুটান গেছেন লিগে খেলতে। সেখান থেকে নিজের পারফরম্যান্স, বাংলাদেশের অর্জন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়
সমকাল: চারদিক থেকে প্রশংসায় ভাসছেন। কেমন লাগছে, প্রথমবার এশিয়ান কাপে খেলতে যাচ্ছেন?
ঋতুপর্ণা চাকমা: প্রথমবারের মতো নারী এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করেছি– এটা আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন। অনেক ভালো লাগার বিষয়। এর আগে দু’বার আমরা সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এবার লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে এশিয়ার বড় মঞ্চে খেলার। সেই স্বপ্ন আমাদের পূরণ হয়েছে। দুটি সাফ চ্যাম্পিয়ন দলেরই সদস্য ছিলাম। সেই হিসেবে এবার এশিয়ান কাপে যাওয়াটা আমার জন্য বিশেষ কিছু।
সমকাল: এমন অর্জনের উদযাপন কি কম হলো? রাতে ঢাকায় পৌঁছে সকালেই ভুটান গেলেন।
ঋতুপর্ণা: হাতিরঝিলে এমন সংবর্ধনা অপ্রত্যাশিত ছিল। বাফুফে এত কষ্ট করে মধ্যরাতে আমাদের জমকালো সংবর্ধনা দিয়েছে। সে জন্য তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আসলে হাতে সময় ছিল না; ভুটানে লিগ খেলতে আসতে হয়েছে।
সমকাল: মিয়ানমারের বিপক্ষে বাঁ পায়ে দ্বিতীয় গোলটি করেছিলেন। ভেবেছিলেন, গোল হবে?
ঋতুপর্ণা: আমি যে গোলগুলো করি, প্রায় সবই ডি-বক্সের বাইরে থেকে। এই পজিশন থেকে গোল করতে আমার ভালো লাগে। ফলে আত্মবিশ্বাস তো ছিলই।
সমকাল: মাঝে কোচ পিটার বাটলারের সঙ্গে আপনিসহ সিনিয়র খেলোয়াড়দের একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। সাবিনাসহ বেশ কয়েকজন মিয়ানমারে ছিলেন না। তাতে খেলায় কোনো প্রভাব পড়েছে?
ঋতুপর্ণা: আমি চাই, আমাদের ক্যাপ্টেন (সাবিনা খাতুন) এবং বাকি যে সিনিয়র ফুটবলাররা আছেন, তাদের আবার দলে নেওয়া হোক। একটা সুযোগ দেওয়া হোক। পুরো সিনিয়র টিম যদি থাকে, তাহলে আমাদের জন্য ভালো হবে। আমাদের বন্ডিংটা অনেক ভালো। এই যে আমরা এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করলাম, আমি মনে করি তাদেরও (সিনিয়র) টিমে থাকার দরকার ছিল।
সমকাল: মিয়ানমারে আপনার করা গোলগুলো দর্শনীয় ছিল। নিজের গোলের ভিডিও দেখেন?
ঋতুপর্ণা: হাজারবার দেখেছি। ম্যাচ শেষ করে রুমে এসে গোলের ভিডিও ক্লিপগুলো দেখেছি। নিজেও অবাক হয়েছি (হাসি...)।
সমকাল: অনেকেই আপনাকে বাংলাদেশের মেসি সম্বোধন করেন...
ঋতুপর্ণা: আমি আসলে কারও সঙ্গে নিজেকে তুলনা করি না। মেসি তো মেসিই। তাঁর সঙ্গে কারও তুলনা হয় না। এটা বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। এই ফাঁকে একটা কথা বলি, আমি কিন্তু সিআর সেভেনের (ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো) ভক্ত। তাঁর মতো স্পট কিক নিতে আমার ভালো লাগে।
সমকাল: এশিয়ান কাপের বাকি ১০ মাস। এই সময়টা কতটা চ্যালেঞ্জের?
ঋতুপর্ণা: এই সময়টা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। অস্ট্রেলিয়ায় এশিয়ান কাপে ভালো করতে হলে আমাদের এই কয়েক মাস কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। বড় বড় দেশের সঙ্গে ম্যাচ খেলতে হবে। প্রীতি ম্যাচ খেলতে পারলে আমাদের শক্তি ও দুর্বলতাগুলো বুঝতে পারব। অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে দুয়েকটা টিমের সঙ্গে ম্যাচ খেলতে পারলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হতো। আর তা যদি র্যাঙ্কিংয়ে বড় কোনো দলের বিপক্ষে খেলতে পারি, তাহলে খুবই ভালো।
সমকাল: এশিয়ান কাপ থেকে আটটি দলের বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ থাকবে। নিজেদের সম্ভাবনা দেখছেন?
ঋতুপর্ণা: এটা এখনও বলতে পারছি না। পরিস্থিতি কখন কোনো দিকে যাবে, সেটা সময়ই বলে দেবে। আমরা সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। এখন যেভাবে সেরাটা দিয়ে যাচ্ছি, ভবিষ্যতেও তা দিয়ে যাব। এশিয়ান কাপে প্রতিপক্ষ কারা হবে, তা এখনও জানি না। শুধু এশিয়ান কাপ নয়, বাংলাদেশকে অলিম্পিকের মতো বিশ্বমঞ্চে নিয়ে যেতে চাই।
সমকাল: মিয়ানমার ম্যাচের পর কোচ বলেছিলেন, ভুটান লিগের চেয়েও বড় লিগে খেলার যোগ্য আপনি ...
ঋতুপর্ণা: ভুটানের লিগ খারাপ না। ভুটানে লিগ হয়, আমাদের দেশে তো সেটাও হয় না। ভুটানে ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে সংগঠক সবাই পেশাদার। কোচ বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে কিংবা ইউরোপে খেলার যোগ্য আমি। তাঁর প্রশংসায় আমি খুশি। তবে কোনো প্রস্তাব পাইনি (হাসি ...)।
সমকাল: এশিয়ান কাপের আগে বাফুফের কাছে কোনো প্রত্যাশা আছে?
ঋতুপর্ণা: আমাদের আবাসন ব্যবস্থাপনার উন্নতি দরকার। পাশাপাশি ট্রেনিং সুবিধা বাড়ানো উচিত। বিদেশে গিয়ে ক্যাম্প করলে সবচেয়ে ভালো হয়। যেমন, ভাইয়েরা (পুরুষ জাতীয় দল) ম্যাচের আগে বিদেশি গিয়ে ক্যাম্প করেন। আমাদের কখনও নিয়ে যাওয়া হয়নি। যে কোনো দেশে নিয়ে গেলে মেয়েদের মনের শক্তি ও স্পিরিট বেড়ে যাবে বলে মনে করি।
সমকাল: খেলার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, মানিয়ে চলতে পারছেন?
ঋতুপর্ণা: সমস্যা কিছুটা তো হয়ই। খেলার জন্য নিয়মিত ক্লাস করতে পারি না। রাতে ক্যাম্পে একটু সুযোগ পাই পড়ার। সত্যি করে বললে, খেলাধুলা আর পড়াশোনা একসঙ্গে চালিয়ে যাওয়া খুব কষ্টের (হাসি ...)।
সমকাল: শুনেছি মায়ের জন্য আপনার মন খারাপ ...
ঋতুপর্ণা: খেলার আগে কিংবা পরে যখনই সময় পাই মায়ের সঙ্গে কথা বলি। মা ছয়-সাত মাস ধরে অসুস্থ। কিন্তু আমার মা জানে না তাঁর কী রোগ। তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমি মাঠে নামি আমার মায়ের জন্য, দেশের জন্য। মায়ের কথা চিন্তা করেই খেলি।
সমকাল : আপনার মায়ের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ঋতুপর্ণা: সমকালকেও ধন্যবাদ।