জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির প্রতিবাদে চলমান কলম-বিরতি কর্মসূচি আগামীকাল মঙ্গলবার একদিনের জন্য স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব পাওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

সোমবার বিকেলে রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতারা এ ঘোষণা দেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে এনবিআরের কর ও শুল্ক বিভাগের ১০ থেকে ১২ জন প্রতিনিধি অংশ নেবেন।

শুল্ক ক্যাডারের উপ-কমিশনার ইমাম গাজ্জালি বলেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার আহ্বান পেয়েছি। আলোচনা ইতিবাচক হবে এমন প্রত্যাশায় আমরা কলম বিরতি কর্মসূচিতে সাময়িক বিরতি দিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, বরাবরই বলে আসছি, আলোচনার দরজা খোলা। আলোচনা কতটা অগ্রগতি অর্জন করতে পারে, তার ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কর বিভাগের উপ-কমিশনার সাইফুর রহমানও। তিনিও সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উল্লেখ্য, গত বুধবার থেকে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কলম বিরতি কর্মসূচি পালন করে আসছেন। এর ফলে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানির শুল্ক কার্যক্রমেও বিঘ্ন ঘটেছে।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, এনবিআরকে ভেঙে রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি আলাদা সত্তা গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা এনবিআর সংস্কার কমিটির সুপারিশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তারা দাবি করছেন, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে রাজস্ব ব্যবস্থাপনার কার্যকারিতা ও স্বচ্ছতা হুমকির মুখে পড়বে।

আন্দোলনকারীরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন গঠিত এনবিআর সংস্কার কমিটির সুপারিশগুলো যথাযথভাবে বিবেচনায় নিয়ে পুনর্গঠন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে।

আলোচনার অগ্রগতি সন্তোষজনক হলে আন্দোলন স্থায়ীভাবে প্রত্যাহারের সম্ভাবনাও রয়েছে বলে আন্দোলনকারীরা ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে সেজন্য মঙ্গলবারের বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনব আর সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য

দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।

আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।

লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।

আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা।

কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ