জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ঢাকায় গুলিবর্ষণের তথ্য দিয়েছেন মাত্র ৭ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট
Published: 20th, May 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে (১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট) ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলার বিভিন্ন এলাকায় ৯৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের মধ্যে মাত্র সাতজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিবর্ষণের তথ্য দিয়েছেন।
ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়ের নথি পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তকাজে সহায়তায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ জানুয়ারি ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয় এই নথি পাঠায়।
নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলার বিভিন্ন এলাকায় ৯৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের মধ্যে সাতজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজেদের আওতাধীন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিবর্ষণের তথ্য দিয়েছেন। অন্যরা ‘গুলিবর্ষণ হয়ে থাকলে সংখ্যা, অস্ত্রের ধরন’-সংক্রান্ত তথ্যে ‘না’ উল্লেখ করেছেন।
যে সাতজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গুলিবর্ষণের তথ্য দিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে প্রথম আলো। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের দাবি, তাঁরা গুলিবর্ষণের অনুমতি দেননি। ঘটনার কয়েক দিন পর তাঁদের কাছ থেকে গুলিবর্ষণের অনুমতিসংক্রান্ত কাগজে সই নেওয়া হয়। আর তখন সই না দিয়ে তাঁদের কোনো উপায় ছিল না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর অনুমতি ছাড়াই দায়িত্বের আওতাধীন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলির ঘটনা ঘটেছিল। তবে এতে কোনো আহত-নিহত ছিল না। ঘটনার দিন কয়েক পরে তিনি গুলির অনুমতির কাগজে সই করেছিলেন।
আরেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলন চলাকালে তিনি দুই দিন দায়িত্ব পালন করেছেন। গুলিবর্ষণের অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
উল্লিখিত পাঁচজনের বাইরে আরেকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, নথিতে নাম থাকলেও আন্দোলন চলাকালে তিনি মাঠে ছিলেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি ফোন ধরেননি। তাঁর মুঠোফোন খুদে বার্তা পাঠালে সাড়া দেননি।
হাজারো গুলি
ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়ের নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা সাত ধরনের তথ্য চায়।
যেসব তথ্য চাওয়া হয়, সেগুলো হলো, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নাম ও পরিচিতি নম্বর। কর্তব্যে নিয়োজিত হওয়ার তারিখ, সময় ও স্থান। গুলিবর্ষণ হয়ে থাকলে সংখ্যা ও অস্ত্রের ধরন। অস্ত্র ব্যবহারকারী সদস্যের নাম ও পরিচিতি। হতাহত হয়ে থাকলে তার বিবরণ। নির্বাহী তদন্ত হয়ে থাকলে তার প্রতিবেদনের অনুলিপি। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়ের নথিতে ১ হাজার ১৩২টি গুলি ছোড়ার তথ্যের উল্লেখ আছে। তবে হতাহত হওয়ার কোনো তথ্য নেই।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একটি সূত্র বলছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময়ে ডিএমডির বিভিন্ন থানায় করা ২৮টি মামলার এজাহারে ৪ দিনেই প্রায় ২৫ হাজার গুলি ছোড়ার তথ্য পাওয়া যায়।
ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়ের নথির তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে রামপুরা এলাকায়। বাকি গুলির ঘটনা ঘটেছে যাত্রাবাড়ী, আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, মহাখালী, বিজয় সরণি ও সংসদ ভবন এলাকায়। এসব স্থানে যাঁরা গুলি করেছেন, তাঁদের নাম নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে। গুলির ধরন হিসেবে উল্লেখ আছে এসএমজি ও আরএফএল।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ডিএমপির একটি থানায় দায়িত্ব পালককারী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ১৮ জুলাই থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এরপরই পুলিশের শীর্ষ পর্যায় থেকে গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ম প রক শ ন প রথম আল ক ন এল ক য় উল ল খ তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
মে মাসেই বোনাস দিতে হবে গার্মেন্টসকর্মীদের, জুনের শুরুতে বেতন: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
চলতি মে মাসেই গার্মেন্টসকর্মীদের ঈদ বোনাস দিতে হবে এবং জুনের ১ থেকে ৩ তারিখের মধ্যে বেতন দিয়ে দিতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সোমবার পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘গার্মেন্টস কর্মীদের বোনাস মে মাসের ভেতরেই দিয়ে দিতে হবে। আর বেতন জুনের ১ থেকে ৩ তারিখের মধ্যে দিয়ে দিতে হবে। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি অবশ্যই মেনে নিতে হবে। তবে অযৌক্তিক দাবির জন্য রাস্তাঘাট ঘেরাও করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’
তিনি বলেন, ‘ঈদ সামনে রেখে কোনো বাস, ট্রেন, নৌযান অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে পারবে না। একই নিয়ম থাকবে পশু আনা নেওয়ার ক্ষেত্রেও।
উপদেষ্টা বলেন, ‘মানুষের নানা দাবি থাকবেই। আমরা আহ্বান করব সব মন্ত্রণালয় যেন যৌক্তিক দাবি মেনে নেয়। তবে কেউ যেন অযৌক্তিক দাবি না করে। আর সবাই যেন তাদের নিজেদের কমপ্লেক্সে দাবির জন্য দাঁড়ায়। রাস্তা বন্ধ করে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি যেন তারা না করে।’