ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বে বাড়িঘরে লুটপাট-আগুন, এক পক্ষ এলাকাছাড়া
Published: 20th, May 2025 GMT
রাস্তা-সংলগ্ন বাড়ি দুটির ফটকে তালা ঝুলছে। রাস্তা থেকে বসতঘরের খোলা জানালা দিয়ে আগুনে পোড়া আসবাবসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র দেখা যাচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের ছলিমের বাড়ির মুজিবুর রহমানের ঘরের চিত্র এটি।
গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বে মুজিবুরের ঘরসহ ছলিমের বাড়ির গোষ্ঠীর ৩০টি বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের পর আগুন দেওয়া হয়। ঘটনার পর ছলিমের বাড়ির লোকজন গ্রামছাড়া। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিপক্ষ চান্দের বাড়ির লোকজন এই হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে।
১৪ মে পূর্ববিরোধ ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে মিয়াজুল হোসেন (৫০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। তিনি নাটাই গ্রামের তোতা মিয়ার ছেলে এবং চান্দের বাড়ির গোষ্ঠীর লোক। তিনি সদর উপজেলা থেকে আশুগঞ্জের লালপুর পর্যন্ত সড়কে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশা পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ছিলেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, ঘটনার পর ১৫ ও ১৬ মে চান্দের বাড়ি গোষ্ঠীর লোকজন প্রতিপক্ষ ছলিমের বাড়ির গোষ্ঠীর বাড়িঘরে হামলা-লুটপাট চালায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদরের নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের চান্দের বাড়ি ও ছলিমের বাড়ি গোষ্ঠীর মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে অনেক বছর ধরে বিরোধ চলে আসছে। চান্দের বাড়ি গোষ্ঠীর নেতৃত্বে আছেন সাবেক ইউপি সদস্য তকদির হোসেন ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোবারক হোসেন। ছলিম বাড়ির গোষ্ঠীর নেতৃত্বে আছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ বাহার, সাবেক ইউপি সদস্য গোলাম মিয়া, সাইদ মিয়া ও স্থানীয় বিএনপি নেতা কামাল হোসেন।
আরও পড়ুনব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে অটোরিকশা মালিক সমিতির নেতা নিহত১৪ মে ২০২৫গত শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, নাটাই মধ্যপাড়া, পশ্চিম পাড়া ও পূর্ব পাড়ায় ছলিমের বাড়ির লোকজনের অধিকাংশ বাড়িঘর ফাঁকা। নারী-পুরুষ কেউ নেই। বাড়িঘরে তালা ঝুলছে। বাইরে থেকে আগুনে পোড়া, লুটপাট ও ভাঙচুরের অবশিষ্ট অংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। মধ্যপাড়ায় কয়েকজন বৃদ্ধ নারীকে দেখা যায়। তাঁদের একজন মুজিবুর রহমানের বাড়ির ফটকের তালা খুলে দিলে ভেতরে ঢুকে বসতঘরে আগুনে পোড়া আসবাব ও তোশক থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। কয়েকজন জানান, তাঁদের ৪২ ভরি স্বর্ণালংকার লুট হয়েছে। এ ছাড়া ৯ জনের ৩৭টি গরু নিয়ে গেছে হামলাকারীরা।
নাটাই মধ্যপাড়ার জামাল মিয়ার স্ত্রী সুমি বেগম বলেন, গত বুধবার রাত নয়টার দিকে চান্দের বাড়ির লোকজন অতর্কিতে হামলা চালায়। কোলের তিন মাস বয়সী ছেলেকে টানাহেঁচড়া করেছে। বসতঘরের পাঁচটি কক্ষে তারা আগুন দিয়েছে। আগুনে সব পুড়ে গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা–লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগ করা হয়। গত শনিবার সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় র ব ড় র ল কজন ল টপ ট ব ড় ঘর
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।