নোয়াখালী সদর উপজেলায় পল্লিচিকিৎসকের ছুরিকাঘাতে আবুল হোসেন ওরফে রাফি (১৮) নামের এক কলেজছাত্র গুরুতর আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সদর উপজেলার অশ্বদিয়া ইউনিয়নের চাঁন মিয়ার মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আহত আবুল হোসেন অশ্বদিয়া ইউনিয়নের অলিপুর গ্রামের মো. আজাদের ছেলে। তিনি কবিরহাট সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত পল্লিচিকিৎসক মো.

শাহীন (৫৫) একই এলাকার বাসিন্দা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার আগে বিকেলে অশ্বদিয়া ইউনিয়নের সোলেমান উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ফুটবল খেলছিলেন আবুল হোসেন ও তাঁর বন্ধুরা। খেলতে গিয়ে মো. সায়েম নামের এক শিক্ষার্থীর হাতে লেগে অপর বন্ধু রুমনের ঠোঁট ফেটে যায়। পরে তাঁরা রুমনকে চিকিৎসার জন্য চাঁন মিয়ার মোড়ের পল্লিচিকিৎসক মো. শাহীনের কাছে নিয়ে যান।

আবুল হোসেনের বন্ধু সায়েম বলেন, চিকিৎসক শাহীন রুমনকে চিকিৎসা দিতে রাজি হননি। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা–কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কি হয়। একপর্যায়ে শাহীন পাশের চায়ের দোকান থেকে একটি ছুরি এনে আবুল হোসেনের গলার নিচে আঘাত করেন। এতে তিনি মারাত্মক আহত হন।

তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে নোয়াখালী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. শাহরিয়ার বলেন, আহতের গলার ভেতরে তিন ইঞ্চির মতো গভীর কেটে গেছে এবং ধমনি ছিঁড়ে গেছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছুরিকাঘাতে এক কলেজছাত্র আহত হওয়ার ঘটনা আমরা জেনেছি। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। অভিযুক্ত পল্লিচিকিৎসক পলাতক রয়েছেন। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে ঘরে ঘরে শিশুদের তীব্র জ্বর

সানজিদা ইসলাম মাইসুনের বয়স ৩ বছর। সারাদিন স্বাভাবিক ছিল তার শারীরিক অবস্থা। প্রতিদিনের মতো খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। মধ্যরাতে বিছানায় তার মধ্যে অস্থিরতা দেখতে পান মা তন্বি ইসলাম। দেখেন ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলছে। জ্বর ১০৪ ডিগ্রির ওপরে। সকালে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। স্থানীয় চিকিৎসক দেখিয়ে ওষুধ খাওয়ালেও কমেনি জ্বর। চার দিনেও জ্বর না কমায় মাইসুনকে ভর্তি করাতে হয় হাসপাতালে।

মাইসুনের মতো তীব্র জ্বরে হঠাৎ কাবু হচ্ছে অনেক শিশু। চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসক চেম্বারের তথ্য বলছে, কিছুদিন ধরে চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের ৬০ শতাংশই তীব্র জ্বরে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে ২ থেকে ৮ বছর বয়সীই বেশি। চার মাস থেকে এক বছরের শিশুও রয়েছে। একই পরিবারে আক্রান্ত হচ্ছে একাধিক শিশু। অনেককে ভর্তি হতে হচ্ছে হাসপাতালে। শয্যার চেয়ে রোগী বেশি হওয়ায় এক বিছনায় একাধিক শিশুকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। 

কয়েকদিন জ্বরে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা কয়েক গুণ হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। সূত্র বলছে, শিশু ওয়ার্ডের ৮০ শয্যার বিপরীতে কয়েকদিন ধরে রোগী ভর্তি থাকছে ২০০ জনের ওপরে। গত ১৮ মে এক দিনে সর্বোচ্চ ২৭২ রোগী ভর্তি ছিল। সেদিন নতুন রোগী ভর্তি হয় ৬৭ জন। ১৯ মে রোগী ভর্তি ছিল ২৪১, নতুন রোগী ৫৮ জন। ১৭ মে ২৪০ রোগী ভর্তি ছিল। ২১ মে এক দিনেই রোগী ভর্তি ছিল ২১৬ জন। ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা ও নতুন ভর্তি হওয়া শিশুর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই জ্বর নিয়ে এসেছে বলে জানান চিকিৎসকরা। জ্বরে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেড়েছে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, মা ও শিশু হাসপাতাল, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পার্কভিউ, মেট্রোপলিটন, সিএসসিআর, ম্যাক্স, ন্যাশনাল, ডেলটাসহ প্রায় সব হাসপাতালে। চিকিৎসকের চেম্বারে আসা ৫০ থেকে ৬০ জনের মধ্যে জ্বরে আক্রান্ত মিলছে ৩৫ জনের ওপরে। 

চমেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চকবাজারের বাসিন্দা টিংকু দাশ বলেন, ‘আমার শিশুর জ্বরের মাত্রা অনেক বেশি। আছে কাশিও। সারাক্ষণ কান্নাকাটি করছে।’ একই শয্যায় চিকিৎসাধীন ছয় মাসের অংকনের দাদি সবিতা রানী বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে ওর জ্বর থাকছে ১০৩-এর ওপরে। চিকিৎসকরা বেশ কিছু পরীক্ষা দিয়েছেন।’ 

ওয়ার্ডে ব্যস্ত সময় পার করছেন দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স সোমা দাশ। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ভর্তি হওয়াদের বেশির ভাগ শিশু জ্বর নিয়ে আসছে। যাদের পরে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিলতা মিলছে।’ 

শিশু বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মুসা বলেন, ‘ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় এক শয্যায় একাধিক শিশুকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। শিশুর মধ্যে সামান্য অস্বাভাবিকতা দেখা দিলেই চিকিৎসক দেখাতে হবে।’

পার্কভিউ হাসপাতালের তৃতীয় ফ্লোরে বসা প্রত্যেক শিশু বিশেষজ্ঞের চেম্বারের সামনে শিশুদের নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে অভিভাবককে। যাদের মধ্যে বেশির ভাগই তীব্র জ্বরে আক্রান্ত। এদের কেউ চার দিন ধরে, আবার কারও জ্বর এক সপ্তাহ। এদেরই একজন খাজা রোডের বাসিন্দা জিন্নাত আরা। সাড়ে তিন বছরের মেয়ে সুমাইয়াকে নিয়ে আসা জিন্নাত বলেন, ‘চার দিন ধরে মেয়েটি তীব্র জ্বরে ভুগছে। দিনের বেলায় কিছুটা কম থাকলেও রাতে জ্বরের তাপমাত্রা উঠছে ১০৩-এর ওপরে। কিছু খাচ্ছেও না।’ 

চট্টগ্রামের শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. মুসলিম উদ্দিন সবুজ বলেন, দিনে গরমের তীব্রতা বেশি থাকছে ও রাতে কিংবা ভোরের দিকে বৃষ্টির কারণে কিছুটা ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। পরিবেশের এমন তারতম্য শিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এই সময়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া শিশুদের ঘরের বাইরে না নেওয়া উচিত।’ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ