রাষ্ট্রের সম্ভাব্য রাজনৈতিক সংকট ও জটিল পরিস্থিতিতে ড. ইউনূসের পদত্যাগ নয় বরং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব পক্ষকে সমঝোতামূলক সমাধানে পৌঁছার আহ্বান জানিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি)। আজ শুক্রবার বিকেল ৪টায় বিজয় নগরের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান দলটির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। 

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের আগ্রহ প্রকাশকে কেন্দ্র করে জাতির মধ্যে যে উদ্বেগ, উৎকন্ঠা, অনিশ্চয়তা ও জটিল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে, এর পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে এবি পার্টি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কাসেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হেলাল উদ্দিন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলি, আমিনুল ইসলাম, শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, সাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী) সাইয়েদ নোমান, সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল) গাজী নাসির ও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ লোকমান।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মঞ্জু বলেন, গত কয়েক মাস ধরে দেশে যে পরিস্থিতি ঘুরপাক খাচ্ছিল এবং সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন পক্ষের যে দূরত্ব দৃশ্যমান হচ্ছিল; তাতে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম। আমরা বলেছিলাম, এটা বন্ধ না হলে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি জটিল হবে এবং সংকট দেখা দেবে। প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ নেই বলেও আমরাও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। গত কয়েকদিনে বিএনপি ও এনসিপি’র পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, ছয়জন উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি, যমুনা অবরোধ করে গত কয়েক মাসের নানা দাবি আন্দোলন এবং সবশেষ সোশ্যাল মিডিয়া ও কিছু সংবাদপত্রে সেনাপ্রধানের অফিসার্স অ্যাড্রেসে প্রদত্ত বক্তব্যের প্রচার ব্যাপক ধুম্রজাল তৈরি করেছে। 

সরকারের সঙ্গে বিএনপি ও এনসিপি’র সম্পর্কের স্পষ্ট অবনতি লক্ষ্য করা গেছে। সেনাপ্রধানের নামে প্রচারিত বক্তব্য থেকে বোঝা গেছে, সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সমন্বয়গত ঘাটতি রয়েছে- এসব বিষয়কে অনাকাঙ্ক্ষিত আখ্যায়িত করে মঞ্জু বলেন, গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র-সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য সরকারের উপদেষ্টারা কোনো উদ্যোগ নেননি। কোনো কোনো উপদেষ্টার তৎপরতা ও কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পর সংহতি ও জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হয়েছে। ছাত্রদের সমন্বয়ে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি কিছু কিছু বিষয়ে অহেতুক বিবাদে লিপ্ত হয়ে নিজেদের ইমেজ ও গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। 

সংবাদ সম্মেলনে এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপিসহ বড় কয়েকটি রাজনৈতিক দল সংস্কার, বিচার, নির্বাচন এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধকরণ প্রসঙ্গে একেকবার একেক রকম বক্তব্য দিয়েছেন। বড় দুটি দল নিজেদের ক্ষমতাকেন্দ্রিক বিভেদে লিপ্ত হয়ে প্রশাসনকে অকার্যকর ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটিয়েছে। এসব বিষয়ে সরকারের অবস্থান ছিল অস্পষ্ট ও দুর্বল। নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসায় এবং সরকার অনির্দিষ্ট মেয়াদে দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকতে চান- এ রকম একটি সন্দেহ সংশয় কোন কোন রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রকটভাবে দেখা দিয়েছ। এসব বিষয়ে আমরা বার বার অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও বিবাদমান পক্ষগুলো বসে ভুল বোঝাবুঝি দূর করার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। 

সেনাবাহিনী প্রধানের সর্বশেষ বক্তব্য প্রসঙ্গে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, উনার বক্তব্যটা আমরা সোশ‍্যাল মিডিয়া ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে জেনেছি। কোনো সরকারি তথ্যসূত্র বা সংস্থার অফিসিয়াল বক্তব্য আকারে পাইনি। বিস্তারিত বক্তব্যটা আইএসপিআর বা সরকারি তথ্যসূত্রের আলোকে এলে ভালো হতো। সেনাপ্রধান এর আগেও ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছিলেন। বিডিআর বিদ্রোহের বিচার, ইনক্লুসিভ ইলেকশন ও সংস্কার বিষয়ে তিনি খোলামেলা কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, আমরা যতটুকু জানি সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ ধরনের সরকার, যেখানে সেনাবাহিনী ও সরকার নিবিড়ভাবে কাজ করছে। অতএব সরকার ও সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নাই। বুধবার (২১ মে) তিনি (সেনাপ্রধান) করিডর, চট্টগ্রাম বন্দর ইজারা ইস্যুসহ যেসব বিষয়ে কথা বলেছেন তাতে সরকারের মতের সঙ্গে তার দ্বিমত পরিলক্ষিত হয়েছে। এটা জাতির কাছে ভুল বার্তা পৌঁছায় এবং জটিলতায় নতুন মাত্রা যোগ করে। সরকারের উচিত সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটা সমাধানের পথ বের করা।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, গতকাল এনসিপি প্রধান নাহিদ ইসলামের বরাত দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের আগ্রহ সংক্রান্ত যে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে তা নিয়ে দেশবাসী ভীষণরকম উদ্বিগ্ন। সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য আমরা পাইনি। আমরা মনে করি, দেশের একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে সবারই নানা ভুল ভ্রান্তি ও অস্বস্তিকর আচরণ আজকের জটিল পরিস্থিতির জন্য দায়ী। প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ এর কোনো সমাধান নয়, বরং তা ভয়াবহ অনিশ্চয়তার জন্ম দেবে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানে সব পক্ষকে সমঝোতামূলক ঐকমত্যে পৌঁছাতে আহ্বান জানান মঞ্জু।

সংবাদ সম্মেলনে অন্য নেতাদের মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব সেলিম খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হালিম খোকন, আনোয়ার ফারুক, গণপরিবহনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মতিয়ার রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র র প উপদ ষ ট র র পদত য গ ন উপদ ষ ট পর স থ ত র বর ত এনস প

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন নিরপেক্ষ বিচারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে

একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং কার্যকর বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। বিচার বিভাগ পরিচালনার জন্য একটি স্বতন্ত্র ‘বিচার বিভাগীয় সচিবালয়’ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা পুনরায় জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হয়।

শুক্রবার বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে চট্টগ্রাম বিভাগের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. হাসানুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ জজ মো: আমিরুল ইসলাম। চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার বিভিন্ন স্তরের বিচারকরা এ সভায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।

আলোচনায় বক্তারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরেন। বিচারকার্য পরিচালনায় অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা এবং অপর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দকে বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ প্রেক্ষাপটে বক্তারা জেলা আদালতের বিচারকদের প্রশাসনিক নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের আওতায় আনার ওপর জোর দেন।

সভায় ‘মাসদার হোসেন মামলার’ ৬ নম্বর নির্দেশনার আলোকে বিচারকদের জন্য একটি পৃথক ও স্বাধীন পে-কমিশন গঠনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়। বক্তারা বলেন, বিচারকগণ সংবিধান রক্ষার গুরু দায়িত্ব পালন করেন বিধায় তাদের আর্থিক সুবিধা ও সম্মানি সেই দায়িত্বের গুরুত্ব ও মর্যাদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া উচিত। এই লক্ষ্যে বিদ্যমান বেতন কাঠামোর অতিরিক্ত ৩০% হারে বিচারিক ভাতা বকেয়াসহ প্রদানের এবং একটি নতুন পে-কমিশন গঠন করে শতভাগ বিচারিক ভাতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়।

উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জেলা আদালতের বিচারকদের প্রতি যে বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়, তা নিরসনের প্রয়োজনে জ্যেষ্ঠতা, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে জেলা আদালতের বিচারকদের উচ্চ আদালতে ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানান।

বিচার বিভাগের আধুনিকায়ন ও স্বাধীনতা রক্ষায় অ্যাসোসিয়েশনকে একটি সক্রিয় ও কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গগে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। এ প্রেক্ষাপটে বক্তারা ‘ইয়ং জাজেস ফোরাম’-এর সাহসী ও গতিশীল ভূমিকাকে আন্তরিকভাবে স্বীকৃতি দেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

সভায় সর্বসম্মতিক্রমে প্রত্যাশা জানানো হয় যে, বর্তমান অর্ন্তবতীকালীন সরকার বিচার বিভাগের কাঠামোগত ও প্রশাসনিক সংস্কারে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। বক্তারা বলেন, বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা ছাড়া রাষ্ট্রের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। সে প্রেক্ষাপটে প্রধান বিচারপতির ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ দ্রæত বাস্তবায়ন এবং একটি পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠায় সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ