ভিজিএফ কার্ড বিতরণ নিয়ে দ্বন্দ্ব, বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষে আহত ৭
Published: 25th, May 2025 GMT
জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে ভিজিএফের কার্ড বিতরণ নিয়ে দ্বন্দ্বে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে সাতজন আহত হয়েছেন। রোববার উপজেলার আলমপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে।
আলমপুর ইউপি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে আলমপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১ হাজার ৫১২টি বিশেষ ভিজিএফ কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে বিতরণের জন্য বিএনপি, জামায়াত ও ছাত্রনেতাদের কিছু কার্ড দেওয়া হয়। বাকি কার্ড বিতরণের জন্য ইউপি সদস্যদের দেওয়া হয়। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল মতিন মারা যাওয়ায় ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আম্মাদ হোসেনকে ওই ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৫০ জন সুবিধাভোগীর তালিকা করে ইউনিয়ন পরিষদে জমা দেন। ভিজিএফের সুবিধাভোগীদের ওই তালিকা সঠিকভাবে করা হয়নি বলে অভিযোগ তোলেন জামায়াতের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। এ বিষয়ে তাঁরা রোববার সকালে ইউপি কার্যালয় এসে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোছা.
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন ছাত্রশিবিরের ক্ষেতলাল উপজেলা সভাপতি মোহাম্মদ আলী (২৫) ও আলমপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জুয়েল ফকির (৪৫)। আহত অন্যরা হলেন রাজু (২৫), মাসুদ (৩৭), ছাব্বির হোসেন (১৮), শিহাব (১৮) ও আবু কাশেম (৪৭)। তাঁদের দলীয় পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ছাত্রশিবিরের নেতা মোহাম্মদ আলীকে গুরুতর আহত অবস্থায় বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান মোছা. হোসনে আরা বলেন, ঈদুল আজহার জন্য ১ হাজার ৫১২টি বিশেষ ভিজিএফের কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়। তাঁরা স্থানীয় প্রশাসনের পরার্মশে কিছু কার্ড বিএনপি, জামায়াত ও ছাত্রনেতাদের নিয়ে সমন্বয় করেছেন। তিনি বলেন, রোববার জামায়াতের লোকজন ইউপি কার্যালয়ে এসে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে সঠিকভাবে কার্ড বিতরণ হয়নি বলে দাবি করেন। তাঁরা বিতরণের জন্য কার্ড দাবি করেন। এরপর ইউপি কার্যালয়ের বাইরে বিএনপি ও জামায়াতের লোকজনের মধ্য মারামারির ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি শুনেছেন।
ক্ষেতলাল উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি শামীম হোসাইন বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে ইউপি কার্যালয় থেকে বাইরে আসার পর বিএনপির নেতা-কর্মীরা আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। এতে আমাদের সাত নেতা-কর্মী আহত হন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আম্মাদ হোসেন বলেন, কার্ড বিতরণ নিয়ে জামায়াতের নেতা–কর্মীরা খবরদারি করায় ঝামেলা হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আলমপুর ইউনিয়নে ভিজিএফের কার্ড বিতরণ নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পায়নি। এ ঘটনায় কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ করেনি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক র ড ব তরণ ন য় কর ম দ র ভ জ এফ র ব এনপ র র জন য র ইউপ
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে বছর শেষে বাড়ছে ডেঙ্গু, কমেছে চিকুনগুনিয়া
চট্টগ্রামে বছরের শেষে এসে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম দুই দিনেই ৮৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা একটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪১ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গত বছরও এই সময়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছিল। এদিকে বছরের শেষ দিকে এসে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ কমেছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শূন্য।
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া—দুটিই মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। দুটিই এডিস মশার কামড়ে হয়। এডিসের বংশ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, নভেম্বরের শুরুতে লঘুচাপের কারণে বৃষ্টি হতে পারে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
চট্টগ্রামে বছরের শুরু থেকে গতকাল বেলা একটা পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৯২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে গত অক্টোবর মাসে। পুরো জেলায় ওই মাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৯০ জন। এর আগের মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩৫। চলতি নভেম্বর মাসে এ সংখ্যা নির্ভর করছে বৃষ্টির ওপর। কারণ, শীত শুরু হলে এডিসের বংশবৃদ্ধির আশঙ্কা কম। তবে বৃষ্টি হলে সেটি বাড়তে পারে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।এদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত কমেছে। গতকাল পর্যন্ত জেলায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৬৯। তবে চিকুনগুনিয়ায় মাসভিত্তিক তথ্য দেয়নি সিভিল সার্জন কার্যালয়। যদিও প্রতিদিনের আক্রান্তের হিসাব দেয় তারা। প্রাথমিক হিসাবে, গত সেপ্টেম্বর মাসে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭০৪। গত অক্টোবর মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২১ জন। এ মাসে কেবল একজন।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।
এদিকে গত বছরের তুলনায় এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের উপসর্গগুলোও কিছুটা ভিন্ন বলে জানা গেছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৪১ জন রোগী জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জন ভর্তি হয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) এবং ১২ জন ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।এ এস এম লুৎফুল কবির, মেডিসিন বিভাগের প্রধান, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালচিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা গেছে। তবে এ বছর যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যে শক সিনড্রোম বেশি। পাশাপাশি ডায়রিয়ার উপসর্গও আছে। শক সিনড্রোম হলে রোগীর রক্তচাপ বোঝা যায় না। এই দুটি উপসর্গ গুরুতর। কারণ, সময়মতো ফ্লুইড (তরল খাবার) না পেলে রোগীর অবস্থা আরও গুরুতর হতে পারে।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান এ এস এম লুৎফুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।’
চলতি বছর এপ্রিল থেকে মোটামুটি বৃষ্টি হচ্ছে। জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হলেও পরের মাসগুলোয় স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়। আর থেমে থেমে বৃষ্টির সঙ্গে গরম কিন্তু কমেনি। এই বৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রা চলতি বছর ডেঙ্গুর বিস্তারে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদেরা। তবে সংক্রমণ কমাতে সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
নগরের ২৫টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও ২৫টি এলাকাকে চিকুনগুনিয়ার জন্য হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর মধ্যে বন্দর, ইপিজেড, হালিশহর, কোতোয়ালি, বায়েজিদ, পাহাড়তলী, কাট্টলী, খুলশী, ডবলমুরিং, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁও, দেওয়ানহাট, আন্দরকিল্লা, মুরাদপুর, সদরঘাট—এসব এলাকায় ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এসব এলাকায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।
সিটি করপোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সরফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিশেষ দল করা হয়েছে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার জন্য। নিয়ম করে এলাকা ভাগ করে রুটিন অনুযায়ী ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।’
চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত বৃষ্টি হওয়ার ২৮ দিন পর্যন্ত মশার প্রকোপ থাকে বলে ধারণা করা হয়। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এ মাসে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ডেঙ্গু বাড়তে পারে।