পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চলমান আন্দোলনকে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা বলে মনে করে বিদ্যুৎ বিভাগ। এই আন্দোলনের সঙ্গে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিবেদিত কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কোনো সম্পর্ক নেই বলেও মনে করে এই বিভাগ।

বিদ্যুৎ বিভাগ এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে বলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ওই বিজ্ঞপ্তি সংবাদমাধ্যমে পাঠানো হয়।

বিবৃতিতে বিদ্যুৎ বিভাগ বলেছে, ‘পল্লী বিদ্যুৎ সংস্কার’ বিষয়টিকে অজুহাত হিসেবে সামনে এনে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কিছু কর্মচারী দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন, যা অভিপ্রেত নয়। দেশব্যাপী নিয়োজিত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিবেদিত কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সঙ্গে এ আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই।

এতে আরও বলা হয়, তথাকথিত ‘বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশন’ নামের অনিবন্ধিত একটি সংগঠনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সরকারের নজরে এসেছে। এমন সংগঠন বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কোনো বৈধ সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব করে না।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, সরকার এই আন্দোলনকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি সুষ্ঠুভাবে সমাধানের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তাই সরকার আশা করছে, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলনকারী কর্মচারীরা তাঁদের রাষ্ট্রীয় কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনতা ও দায়বদ্ধতা থেকে এবং দেশের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফেরত যাবেন এবং অহেতুক সভা–সমাবেশ থেকে বিরত থাকবেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভূমিকা ও কাঠামোগত সংস্কারের জন্য সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে। আসন্ন ঈদুল আজহার ছুটির আগেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে এ কমিটির একটি উপস্থাপনার মাধ্যমে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মচারীদের সঙ্গে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কর্মচারীদের পদমর্যাদার বিষয়টি একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় আনার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি কাজ করছে এবং আগামী সপ্তাহেই এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করা হবে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।

এতে আরও বলা হয়, শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে যাঁরা নাশকতামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত নন, তাঁদের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আরইবির ক্রয়, নিয়োগ ও পদোন্নতিপ্রক্রিয়ায় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে এবং অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যাঁরা নিয়োজিত, তাঁরা বাংলাদেশের বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ী বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন। গত আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের মধ্যে ৬ হাজার ২৫ জনকে নিয়মিত করা হয়েছে এবং এই প্রক্রিয়া আরইবিতে চলমান রয়েছে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কিছু কর্মচারীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা করা হয়েছে। সেগুলো আদালতে বিচারাধীন। মামলার আসামিরা আদালতের বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্দোষ প্রমাণিত হতে পারেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পাঁচ দিন ধরে শহীদ মিনারে অবস্থান করছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা

সারা দেশের গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে সরকারি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস)। এসব সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে সাত দফা দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। ২১ মে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণার পর পাঁচ দিন ধরে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা হাজারো কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, গ্রাহকসেবা অব্যাহত রেখেই শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। যাঁরা এখনো কর্মরত আছেন, তাঁরাও নিজ নিজ সমিতির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছেন।

প্রতিদিন নতুন নতুন কর্মকর্তা-কর্মচারী শহীদ মিনারে এসে আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন। এতে বিদ্যুৎ বিতরণ কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কেউ তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেনি। তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এসে সংহতি প্রকাশ করেছেন। সাত দফা দাবিতে বুধবার সকাল থেকে শহীদ মিনারে অবস্থান নেন তাঁরা।

তাঁদের দাবির মধ্যে রয়েছে এক ও অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আরইবি ও পবিস একীভূত করে অন্য বিতরণ সংস্থার মতো পুনর্গঠন করা। মিটার রিডার, লাইন শ্রমিক এবং পোষ্য কর্মীদের চাকরি নিয়মিত করা। মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করে চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহাল করা। হয়রানি ও শাস্তিমূলক আদেশ বাতিল এবং বরখাস্ত ও সংযুক্ত কর্মীদের অবিলম্বে পদায়ন।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা চলমান মামলা প্রত্যাহার ও চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবিতে তাঁরা এরই মধ্যে দুই দফায় স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন।

গত ২১ জানুয়ারি ও ২৬ এপ্রিল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টার কাছে ওই স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এর সঙ্গে ২৮ হাজার ৩০৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বাক্ষর সংযুক্ত করা হয়েছিল।

শহীদ মিনারে আন্দোলনরত কর্মীরা বলছেন, তাঁরা নিয়মিত বঞ্চনার শিকার হয়ে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন। আরইবি নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত, কিন্তু গ্রাহক তাঁদের ক্ষোভ ঝাড়েন সমিতির কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ওপর।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) নিম্নমানের যন্ত্রাংশ দিয়ে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে অভিযোগ তুলে কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লাইন শ্রমিক আইনুদ্দীন আল আজাদ বলেন, ‘আরইবি অনিয়মের মাধ্যমে এসব যন্ত্রাংশ কেনে। গ্রাহক পর্যায়ে এসব যন্ত্রাংশ রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্বে থাকি আমরা। তাই গ্রাহক আমাদের হয়রানি ও বিভিন্ন সময় হামলা করে। আমরা এই হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে চাই। আমাদের সাতটি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

এর আগে গত বছরের জানুয়ারি থেকে দুই দফা দাবিতে টানা কর্মবিরতিসহ বিভিন্ন সময় নানা কর্মসূচি পালন করেছেন সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এবার সাত দফা দিয়েছেন তাঁরা।

একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের একজনের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে গত অক্টোবরে বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেন তাঁরা। এর পর থেকেই কারও কারও বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাসহ বিভিন্ন রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে থাকে আরইবি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাত দফা দাবিতে পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীদের কর্মবিরতি, শহীদ মিনারে অবস্থান
  • ঝুঁকিতে পল্লী বিদ্যুৎ সরবরাহ
  • পাঁচ দিন ধরে শহীদ মিনারে অবস্থান করছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা