পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কিছু কর্মচারী দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন: বিদ্যুৎ বিভাগ
Published: 27th, May 2025 GMT
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চলমান আন্দোলনকে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা বলে মনে করে বিদ্যুৎ বিভাগ। এই আন্দোলনের সঙ্গে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিবেদিত কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কোনো সম্পর্ক নেই বলেও মনে করে এই বিভাগ।
বিদ্যুৎ বিভাগ এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে বলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ওই বিজ্ঞপ্তি সংবাদমাধ্যমে পাঠানো হয়।
বিবৃতিতে বিদ্যুৎ বিভাগ বলেছে, ‘পল্লী বিদ্যুৎ সংস্কার’ বিষয়টিকে অজুহাত হিসেবে সামনে এনে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কিছু কর্মচারী দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন, যা অভিপ্রেত নয়। দেশব্যাপী নিয়োজিত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিবেদিত কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সঙ্গে এ আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই।
এতে আরও বলা হয়, তথাকথিত ‘বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশন’ নামের অনিবন্ধিত একটি সংগঠনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সরকারের নজরে এসেছে। এমন সংগঠন বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কোনো বৈধ সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব করে না।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, সরকার এই আন্দোলনকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি সুষ্ঠুভাবে সমাধানের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তাই সরকার আশা করছে, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলনকারী কর্মচারীরা তাঁদের রাষ্ট্রীয় কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনতা ও দায়বদ্ধতা থেকে এবং দেশের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফেরত যাবেন এবং অহেতুক সভা–সমাবেশ থেকে বিরত থাকবেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভূমিকা ও কাঠামোগত সংস্কারের জন্য সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে। আসন্ন ঈদুল আজহার ছুটির আগেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে এ কমিটির একটি উপস্থাপনার মাধ্যমে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মচারীদের সঙ্গে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কর্মচারীদের পদমর্যাদার বিষয়টি একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় আনার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি কাজ করছে এবং আগামী সপ্তাহেই এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করা হবে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।
এতে আরও বলা হয়, শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে যাঁরা নাশকতামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত নন, তাঁদের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আরইবির ক্রয়, নিয়োগ ও পদোন্নতিপ্রক্রিয়ায় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে এবং অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যাঁরা নিয়োজিত, তাঁরা বাংলাদেশের বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ী বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন। গত আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের মধ্যে ৬ হাজার ২৫ জনকে নিয়মিত করা হয়েছে এবং এই প্রক্রিয়া আরইবিতে চলমান রয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কিছু কর্মচারীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা করা হয়েছে। সেগুলো আদালতে বিচারাধীন। মামলার আসামিরা আদালতের বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্দোষ প্রমাণিত হতে পারেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’
অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি বরাবর অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।