পুঁজিবাজারে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফু-ওয়াং ফুডস লিমিটেডের ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক হিসাবের অসঙ্গতি ও অন্যান্য বিষয় অনুসন্ধান করে খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই লক্ষ্যে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

গত ১৭ মে সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়টি ফু-ওয়াং ফুডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।

বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এই তথ্য দিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

সহায়তা তহবিলের আকার বাড়ানোসহ বিএমবিএর ৯ দাবি

৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ কোম্পানিতে বসবে স্বতন্ত্র পরিচালক

গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ রকিবুর রহমান, উপ-পরিচালক মো.

শাহনেওয়াজ ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ডেপুটি ম্যানেজার বদরুল ইসলাম।

আগের সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকা ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কোম্পানিটির বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ ছিল। তাই সার্বিক বিষয় অনুসন্ধান করে খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি।’

বিএসইসির তদন্তের আদেশ

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে যে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে ফু-ওয়াং ফুডস লিমিটেডের ২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক বিবরণী যাচাই, ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়ে তদন্ত পরিচালনা করা প্রয়োজন। তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নং XVII) এর সেকশন ২১ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন আলোচ্য বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। উক্ত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিএসইসি ও ডিএসইর তিনজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলো। তদন্ত কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন এবং কমিশনে একটি প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হলো।

যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি

২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত হিসাব বছরের ফু-ওয়াং ফুডস লিমিটেডের আর্থিক প্রতিবেদন ও অন্যান্য বিষয় অনুসন্ধান করে খতিয়ে দেখবে।

এদিকে কোম্পানিটির আর্থিক বিবরণীতে সম্পদ, দায়, শেয়ারধারীদের মূলধন (ইকুইটি), মুনাফা ও নগদ প্রবাহের সত্য ও সঠিক চিত্র উপস্থাপন করেছে কি না এবং আর্থিক প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএএস), আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস) এবং আন্তর্জাতিক অডিটিং স্ট্যান্ডার্ডের (আইএসএ) সঙ্গে সামঞ্জস্যতা, প্ল্যান্ট অ্যান্ড মেশিনারিজ, যন্ত্রপাতি ও ভবন, ভূমি ও ভূমি উন্নয়ন ইত্যাদির মালিকানা, প্রকৃত অস্তিত্ব যাচাই করা হবে বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা

২০২৩ ও ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত হিসাব বছরে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ফু-ওয়াং ফুডস লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। সর্বশেষ ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সমাপ্ত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ০.৫০ শতাংশ অন্তবর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে কোম্পানিটি।

এদিকে চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ, ২০২৫) কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে ০.০৮ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.০১ টাকা। এদিকে নয় মাসে বা তিন প্রান্তিক (জুলাই-মার্চ) মিলে কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ০.৩৩ টাকা। আগের বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ০.৩১ টাকা। ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ শেষে কোম্পানির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২.৩১ টাকা।

ব্যবসায়িক পরিস্থিতি

২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি ফু-ওয়াং ফুডসের মালিকানার ৭.৬১ শতাংশ শেয়ার কিনে নেওয়ার অনুমোদন পায় মিনোরি বাংলাদেশ। এ প্রতিষ্ঠানটি এমারেল্ড অয়েলের মালিকানায় রয়েছে। মালিকানা বদলের পরও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তালিকাভুক্ত এ কোম্পানি। উল্টো বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও পরিচালনা পর্ষদের দুর্নীতি, অর্থ-আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে কোম্পানিটি আরো দুর্বল হয়ে গেছে। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিয়া মামুনের বিরুদ্ধে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এদিকে বিএসইসির আইন অনুযায়ী মিনোরি বাংলাদেশ ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণেও ব্যর্থ হয়েছে।

২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ফু-ওয়াং ফুডস লিমিটেড। ‘বি’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধন ১১০ কোটি ৮৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১১ কোটি ৮ লাখ ৩৯ হাজার ২৮৪টি। চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের হাতে ৭.৮৫ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৯.৫৭ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.০১ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৮২.৫৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

ঢাকা/এনটি/ফিরোজ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ২০২৪ স ল র ৩০ জ ন হ স ব বছর র র ব যবস থ ব এসইস র র আর থ ক সমন ব ত তদন ত ক

এছাড়াও পড়ুন:

১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

আরো পড়ুন:

নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা

সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন 

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।

বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।

অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • ১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা