শিবির ছাত্র রাজনীতির পরিবেশকে টক্সিক করে তুলেছে: উমামা ফাতেমা
Published: 28th, May 2025 GMT
৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে ছাত্রশিবির দেশের ছাত্ররাজনীতির পরিবেশকে টক্সিক করে তুলেছে বলে অভিযোগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা।
মঙ্গলবার (২৭ মে) রাতে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে তিনি এ অভিযোগ করেন।
সেখানে তিনি লেখেন, “যারা এতদিন ছাত্রলীগের মধ্যে মিশে 'সার্ভাইভ' করার ভং ধরে সেই ছাত্র সংগঠন কিনা এখন আরেকজনরে ট্যাগ দিতে আসে। গত ১৫ বছর ছাত্রলীগের হয়ে এদের অনেকে হলে হ্যাডম দেখাত। ছাত্রশিবির ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির পরিবেশকে টক্সিক করে তুলেছে। এদের 'সাধারণ ছাত্র' ভং ধরে বারংবার ছাত্রদের সাবোটেজ করার কারণে আসল সাধারণ ছাত্রদের কথা বলার পরিবেশ সংকুচিত হয়েছে। অন্যদিকে ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্ররাজনীতির নতুন ধারা নিয়ে কোনো প্রকার সুস্থ আলাপ শুরু করা যায়নি এদের ডিস্টার্বেন্সের কারণে। ”
মাগুরার আলোচিত শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যার বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় শিবিরের অবস্থান উল্লেখ করে তিনি লেখেন, “একটা অদ্ভুত বিষয় আমি খেয়াল করেছিলাম, গত ৮ মার্চ আছিয়া ধর্ষণের বিচারের দাবিতে সুফিয়া কামাল হল থেকে আমরা মেয়েরা মিছিল বের করে গোটা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করি। হলপাড়ায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আমরা স্লোগান দিচ্ছিলাম। কিন্তু কোনো 'সাধারণ শিক্ষার্থী' হলপাড়া থেকে বের হচ্ছিল না। এই হচ্ছে এদের সাধারণ শিক্ষার্থীগিরির নমুনা। পান থেকে চুন খসলে যেখানে এরা মিছিল বের করে সেখানে আছিয়ার জন্য এরা মিছিলে যুক্ত হতে পারে না।”
আরো পড়ুন:
অভ্যুত্থানবিরোধীদের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইবি উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি
নাম পরিবর্তনের দাবিতে বেরোবির জিডিএস বিভাগে তালা
“সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করব, এসব পার বাটপারদের থেকে সাবধান থাকুন। ছাত্রলীগের আমলে লীগের বিরুদ্ধে মিনিমাম সংগ্রাম এরা করেনি, উল্টা অন্য ছাত্রদের উপর নির্যাতনকে হালাল করেছে। আর এখন যাকে তাকে লীগের দোসর ট্যাগ দিয়ে নিজের পলিটিকাল এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে এই বাটপাররাই।”
তিনি লেখেন, “আমার খুব পরিষ্কার মনে আছে, ২০২৪ সালের ডামি ইলেকশনের বিরুদ্ধে আমরা ৩১ জানুয়ারি থেকে রাজু ভাস্কর্যে ডামি নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলন করছিলাম। এ রকম ভয়াবহ পরিস্থিতিতে তৎকালীন লীগের আড়ালে থাকা কিছু ভাইব্রাদার আন্দোলন করছিল ঢাবিতে ট্রান্সজেন্ডার কোটা বাতিলের জন্য। আমরা তখন তাদেরকে আমন্ত্রণ জানাই আমাদের আন্দোলনে যোগ দেয়া জন্য। এরা ২০২৪ নির্বাচনের পুরোটা সময় মুখ ফুটে একটা শব্দও বের করেনি। মানে কি বলব! যাদের কাছে একটা দেশে দিনে দুপুরে ভোটডাকাতির টপিক থেকে শেখ হাসিনার তৈরি প্রশাসনের আনা ট্রান্সজেন্ডার কোটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল এরা এখন জুলাই এর ঠিকাদারি ব্যবসা করে। এই ঠিকাদারদের হাতে জুলাইও নিরাপদ না।”
ঢাকা/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র পর ব শ র জন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
এমএফএসে খরচ ব্যাংকের ৭ থেকে ১৫ গুণ বেশি
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, বাংলাদেশে মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবা (এমএফএস) পেতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের চেয়ে ৭ থেকে ১৫ গুণ বেশি খরচ হয়। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায়ও বাংলাদেশে এমএফএস সেবার খরচ বেশি। ‘মোবাইল আর্থিক সেবা খাতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক টিআইবির এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নগদ উত্তোলনে এমএফএসে খরচ প্রতি ২৫ হাজার টাকায় ২০০ থেকে ৪৬২ টাকা। যেখানে ব্যাংকের খরচ সর্বোচ্চ ২৯ টাকা। ‘সেন্ড মানি’ করতে এমএফএসে ২৫ হাজার টাকায় সর্বােচ্চ খরচ ১৫০ টাকা। অথচ ব্যাংকে কোনো খরচ নেই। ২০২৪ সালে সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা ‘ক্যাশ আউট’-এর ক্ষেত্রে গ্রাহকদের থেকে কমপক্ষে ৪ হাজার ৪১০ কোটি টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে। যেখানে সমপরিমাণ নগদ উত্তোলনে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আয় করেছে মাত্র ৬৩৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশে এমএফএসে খরচের হার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের তুলনায় অস্বাভাবিক।
প্রতিবেদনে এমএফএস মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণা ও অর্থ পাচার হয় বলে উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এমএফএস ব্যবহার করে জালিয়াতি, প্রতারণা, ঘুষের অর্থ লেনদেন, অনলাইন জুয়ার অর্থ লেনদেন ও পাচারের উদ্বেগজনক চিত্র গবেষণায় উঠে এসেছে। অনলাইন জুয়ায় প্রায় ১ হাজার ১০০ এমএফএস এজেন্ট শনাক্ত করা হয়েছে। শুধু ২০২২ সালেই প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে এমএফএস ব্যবহার করে।
তিনি উল্লেখ করেন, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বৈদেশিক রেমিট্যান্সের রেকর্ড বেড়েছে। এর অন্যতম কারণ হলো, এমএফএস ব্যবহার করে অবৈধ হুন্ডি লেনদেন নিয়ন্ত্রিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে (বিকাশ) ২৫ হাজার টাকা নগদ উত্তোলনে ৩৭২ টাকা ৫০ থেকে ৪৬২ টাকা ৫০ পয়সা আদায় করা হয়। যেখানে সমপরিমাণ টাকা উত্তোলনে পাকিস্তানে (ইজি প্যায়সা) ৩৫৫ টাকা ৭০ পয়সা এবং মিয়ানমারে (ওয়েভ পে) ২৩১ টাকা ৩০ পয়সা সেবামূল্য হিসেবে আদায় করা হয়। ভারতে (ফোন পে) এ ধরনের সেবায় কোনো সেবামূল্য আদায় করা হয় না।
ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, এমএফএস খাত করায়ত্ত করার জন্য রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষ করে ‘নগদ’-কে বিশেষ অনৈতিক সুযোগ দেওয়া হয়েছে। জনগণকে আর্থিকভাবে শোষণ, রাষ্ট্রের অর্থ আত্মসাতের পাশাপাশি ঘুষ লেনদেন ও অর্থ পাচারের জন্যও এ খাতকে ব্যবহার করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ‘নগদ’-এর পরিচালনাকারী চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান থার্ড ওয়েভ নিয়ম লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত প্রায় ৬৪৫ কোটি টাকার ই-মানি তৈরি করেছে। প্রভাব বিস্তার করে সুরক্ষা ভাতা ও উপবৃত্তির অর্থ বিতরণের সুবিধা গ্রহণ, আন্তঃলেনদেন প্ল্যাটফর্ম (বিনিময়) সম্পর্কিত অনিয়ম-দুর্নীতি এবং অর্থ পাচার ও অবৈধ বৈদেশিক লেনদেনের মতো ঘটনা পাওয়া গেছে। তথ্য বলছে, ২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা নগদের শেয়ারহোল্ডারদের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হয়েছে।
মোবাইল আর্থিক সেবা খাতে বিদ্যমান সুশাসনের চ্যালেঞ্জ উত্তরণে ১৩ দফা সুপারিশ প্রস্তাব করেছে টিআইবি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে এমএফএস খাতের জন্য স্বতন্ত্র আইন প্রণয়ন, লেনদেন খরচ কমানো এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আন্তঃলেনদেন ব্যবস্থা সহজ ও সাশ্রয়ী করা, আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার আলোকে এ পরিচালন ও ব্যবস্থাপনা কাঠামো নিশ্চিত করা, এজেন্ট ও পরিবেশকদের কমিশনের সীমা নির্ধারণ, তদারকি নিশ্চিত করা ইত্যাদি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির রিসার্চ ফেলো মোহাম্মদ নূরে আলম এবং রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট কাজী আমিনুল হাসান।