সাবেক এমপি বাহার ও তার মেয়ে সূচনাসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
Published: 28th, May 2025 GMT
কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৫ আগস্ট মামুন আহমেদ রাফসান নামে এক হোটেল কর্মচারি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে কোতোয়ালি মডেল থানায় এ মামলা হয়। মামলায় আসামি হিসেবে কুমিল্লা সদর আসনের সাবেক এমপি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসিন বাহার সূচনাসহ ১৪৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও ১০০-১৫০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়।
মামলার বাদী মো.
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে জেলার আদর্শ সদর উপজেলার ক্যান্টনমেন্ট ওভারব্রিজের নিচে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিল চলছিল। এ সময় তৎকালীন এমপি বাহার ও তার মেয়ে সূচনার হুকুমে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা পিস্তল, একনালা বন্দুক, শটগান, রাইফেল, হাতবোমা, ককটেলসহ দেশিয় অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালান। তারা এলোপাতাড়ি গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করেন। হাতবোমা ও ককটেল বিস্ফোরণসহ গুলিতে বেশ কয়েকজন আহত হন। এ সময় আন্দোলনে অংশ নেওয়া ক্যান্ট মার্কেটের একটি হোটেলের কর্মচারি মামুন আহমেদ রাফসান (১৮) গুলিবিদ্ধ হয়ে সড়কে লুটিয়ে পড়েন। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় ক্যান্টনমেন্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মামলায় আলোচিত আসামিরা হচ্ছেন- আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম টুটুল, সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাবলু, বুড়িচং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আখলাক হায়দার, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম রিন্টু প্রমুখ।
মামলার বাদী মো. রানু মিয়া বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের দোসররা প্রকাশ্যে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালায়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আমার ভাই নিহত হন।’ তিনি অবিলম্বে আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. মহিনুল ইসলাম জানান, আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ মামুন হাসপাতালে মারা যাওয়ার পর তার স্বজনরা খবর পেয়ে মরদেহ হবিগঞ্জ নিয়ে দাফন করেন। পরে পরিবার মামলা করতে আসেনি। সম্প্রতি সরকারি গেজেটে শহীদ তালিকায় ওই ব্যক্তির নাম আসায় পরিবারের পক্ষ তার ভাই মামলাটি দায়ের করেন। তদন্ত করে আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, এ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলা ও হত্যা-গুলিসহ বিভিন্ন অভিযোগে সাবেক এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় ১২টি মামলা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন হত ল ইসল ম উপজ ল আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
অ্যাপ্রোচে মাটি না দেওয়ায় অকেজো ৪০ লাখের সেতু
মানিকগঞ্জের সিংগাইরে সেতুর অ্যাপ্রোচে মাটি না দেওয়ায় স্থানীয় লোকজনের কাজে আসছে না। ছয় মাস আগে নির্মাণ শেষ হলেও যাতায়াতের উপযোগী না করায় ঠিকাদার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের গাফিলতিকে দুষছেন তারা। ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুর অ্যাপ্রোচে মাটি দিতে ঠিকাদারকে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় কৃষক সারেং আলীর ভাষ্য, সেতু নির্মাণের আগে কষ্ট হলেও রাস্তাটি ব্যবহার করা যেত। নির্মাণের পর এতে ওঠার জন্য মাটি দেয়নি। এতে হাট-বাজারে কৃষিপণ্য নিতে অনেক ঘুরে যেতে হচ্ছে। কয়েক দিন পর বর্ষা শুরু হবে। তার আগে দুই পাশে মাটি দেওয়া না হলে তখন যাতায়াতের জন্য নৌকা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
জানা গেছে, উপজেলার বায়রা ইউনিয়নের দেহানখিলায় খালের ওপর দিয়ে ১১ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস দরপত্র আহ্বান করে। কাজটি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাজ এন্টারপ্রাইজ। অবকাঠামো ও দুই পাড়ে সংযোগ সড়কের সঙ্গে অ্যাপ্রোচ নির্মাণে চুক্তি হয় ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গত নভেম্বর মাসে সেতুর অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ করে। কিন্তু অ্যাপ্রোচে মাটি না দেওয়ায় তা দিয়ে যাতায়াত করতে পারছেন না লোকজন। দেহানখিলার বাসিন্দা মোবারক হোসেনের ভাষ্য, অনেক তদবির করে সেতুটি নির্মাণ হয়েছে। এর দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে মসজিদ ও মক্তবখানা এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। উত্তরে লোকালয়। সংযোগ সড়ক সংস্কার না হওয়ায় যাতায়াত করতে অনেক ঘুরতে হচ্ছে।
সংযোগ সড়ক না হওয়ায় দুর্ভোগ আগের চেয়ে বেশি হচ্ছে জানিয়ে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দেওয়ান মো. জিকরুল ইসলাম বলেন, খালের ওপাড়ে রয়েছে দেহানখিলা কবরস্থান। কেউ মারা গেলে বিকল্প রাস্তা দিয়ে কবরস্থানে নিতে হয়। বর্ষায় লাশ নৌকায় করে নিতে হবে। অন্য পাড়ের শিক্ষার্থীদেরও স্কুলে আসতে কষ্ট হচ্ছে।
কলেজছাত্র আতিক হাসানের ভাষ্য, সেতু নির্মাণ হলেও দুই পাশে মাটি না দেওয়ার জন্য ঠিকাদার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের গাফিলতি রয়েছে। বর্ষার আগেই দুই পাড়ে মাটি দিয়ে চলাচলের উপযোগী করতে হবে। তা না হলে এত টাকার সেতুটি কোনো কাজে আসবে না।
সেতু নির্মাণের জন্য খালের দুই পাশে মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল জানিয়ে রাজ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মাহফুজুর রহমান তুহিন বলেন, সেই মাটি দিয়ে সেতুর অ্যাপ্রোচ নির্মাণের কথা ছিল। এলাকায় মানুষজন খাল তাদের দাবি করে মাটি কাটতে দেননি। বিকল্পভাবে কিছু ফেলা হয়েছিল, এলাকায় গ্রুপিংয়ের কারণে তাও বন্ধ। লোকজন সহযোগিতা করলে মাটি ফেলা হবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আহাদি হোসেন বলেন, সেতুটির দুই পাড়ে ঠিকাদার মাটি রাখলেও স্থানীয় লোকজন নিতে দেয়নি। ঠিকাদারকে বলা হয়েছে দ্রুত কাজ শেষ করতে। মাটি না দেওয়ায় ঠিকদার চূড়ান্ত বিল নিতে পারেনি।