কুমিল্লায় সাবেক এমপি বাহাউদ্দীন, তাঁর মেয়েসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
Published: 28th, May 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে কুমিল্লায় মামুন আহমেদ ওরফে রাফসান (১৮) নামের এক হোটেল কর্মচারীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলায় কুমিল্লার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার ও তাঁর মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের অপসারিত মেয়র তাহসিন বাহার ওরফে সূচনাসহ ১৪৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া ১০০ থেকে ১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা করা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
মামলায় অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম (টুটুল), কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই (বাবলু), বুড়িচং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আখলাক হায়দার, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ (খোকন), মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (সহিদ) ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম (রিন্টু)।
মামলার বাদী মো. রানু মিয়া বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের দোসররা প্রকাশ্যে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করেছিল। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আমার ভাই নিহত হন। আমি খুনিদের বিচার চাই।’
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট বেলা তিনটার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার ক্যান্টনমেন্ট পদচারী–সেতুর নিচে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিল চলছিল। এ সময় তৎকালীন সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার ও তাঁর মেয়ে সূচনার হুকুমে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা পিস্তল, একনলা বন্দুক, শটগান, রাইফেল, হাতবোমা, ককটেলসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। তারা এলোপাতাড়ি গুলি ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে। হাতবোমা, ককটেল বিস্ফোরণসহ গুলিতে বেশ কয়েকজন আহত হন। আন্দোলনে অংশ নেওয়া ক্যান্টনমেন্ট মার্কেটের একটি হোটেলের কর্মচারী মামুন আহমেদ গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে ক্যান্টনমেন্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি মো. মহিনুল ইসলাম বলেন, এ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলা, হত্যাচেষ্টা ও হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে সাবেক এমপি আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারের বিরুদ্ধে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় ১২টি মামলা হলো। এ ছাড়া আদালতে আরও বেশ কিছু মামলা হয়েছে।
আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার ও তাঁর মেয়ে তাহসিন বাহার ৫ আগস্ট থেকে আত্মগোপনে আছেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ম ন আহম দ ল ইসল ম উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।