ফরিদপুরে ফারুক তালুকদার (৩৬) নামে একজন ইজিবাইক চালককে হত্যা মামলার রায়ে ৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো দুইমাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাদের ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং বিশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রমের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দুপুর ১টার দিকে ফরিদপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ ২য় আদালতের বিচারক অশোক কুমার দত্ত এ রায় ঘোষণা করেন।

মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- রাজবাড়ী জেলার খানখানাপুর গ্রামের আনিস মল্লিক, ঢেকিগাড়িয়া গ্রামের মো.

শহীদ শেখ, বালিয়াডাঙ্গী গ্রামের মো. শাহজাহান শেখ ও বারুইপাড়া গ্রামের মো. শামীম ওরফে ভাগ্নে শামীম। 

রায় ঘোষণার সময় আসামী আনিস মল্লিক ও মো. শহীদ শেখ আদালতে হাজির ছিলেন। অন্য দুই আসামি মো. শাজাহান শেখ ও মো. শামীম ওরফে ভাগ্নে শামিম পলাতক রয়েছেন। 

আদালত সূত্রে জানা যায়, নিহত ইজিবাইক চালক ফারুক তালুকদার (৩৬) রাজবাড়ী জেলার সদর উপজেলার পাচুরিয়ার গোপ্ত মানিক গ্রামে মৃত সিদ্দিক তালুকদারের ছেলে। ২০২০ সালের ৬ মার্চ ফরিদপুরের সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের ফতেপুর শ্মশানঘাট এলাকা থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এসময় বিভিন্ন জিনিসের পাশাপাশি একটি খেলনা পিস্তল জব্দ করে পুলিশ। 

এ ঘটনায় নিহতের ভাই হান্নান তালুকদার বাদী হয়ে ফরিদপুরের কোতয়ালী থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন ।

মামলায় বলা হয়, ইজিবাইক চালক ফারুককে রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুরে যাওয়ার কথা বলে যাত্রী সেজে ভাড়া করে দুর্বৃত্তরা। এরপর ঘটনাস্থলে এনে তাকে হত্যা করে তার ইজিবাইক ও মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। ওই রাতেই স্থানীয়রা লাশটি দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়।

মামলায় নিযুক্ত সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের এপিপি অ্যাডভোকেট রকিবুল ইসলাম জানান, দীর্ঘ সাক্ষ্য শুনানি শেষে আদালত মামলার রায় ঘোষণা করেন। এ রায়ের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ঢাকা/তামিম/টিপু

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য

দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।

আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।

লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।

আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা।

কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ