মাগুরায় ছাত্রাবাস থেকে উদ্ধার পাঁচ ব্যবসায়ী, আটক ১
Published: 29th, May 2025 GMT
মাগুরা সদরে অপহরণের শিকার পাঁচ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে একটি ছাত্রাবাস থেকে উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। সাজিয়াড়া গ্রামের এসএম ছাত্রাবাসে আটকে রাখা ওই ব্যবসায়ীদের বুধবার রাত ১০টার দিকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার হোতা ইসতিয়াক আহমেদ শান্তকেও আটক করা হয়েছে।
শান্ত মাগুরা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তানজেল হোসেনের বড় ভাই। তার বাবার নাম রফিকুল ইসলাম। শান্ত ৫ আগস্টের পর ওই ছাত্রাবাসটি দখলে নেয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সেখানে নিয়মিত মাদকের আসর বসানোর পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তিকে আটকে নির্যাতন করার অভিযোগও করেন তারা।
উদ্ধার ৫ ব্যবসায়ী হলেন– রাজীব সরদার, হৃদয় সরদার, বাবু শেখ, ওসমান শেখ ও রিয়াদ ইসলাম। তাদের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বরফা গ্রামে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, ওই পাঁচ ব্যবসায়ী ইলেক্ট্রনিক পণ্য ফেরি করে বিক্রির উদ্দেশ্যে গত ২১ মে মাগুরা এসে শান্তর খপ্পরে পড়েন। সন্ধ্যায় শান্ত তাদেরকে কৌশলে ওই ছাত্রাবাসে নিয়ে আটকে রেখে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। ব্যবসায়ীরা ওই টাকা দেওয়া সামর্থ্য নেই জানালে শান্ত আরও কয়েকজনকে নিয়ে সারারাত পালাক্রমে তাদের ওপর নির্যাতন চালায়।
স্থানীয়রা জানান, সাজিয়াড়ার হুরাইরা নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে ছাত্রাবাসটি পরিচালনা করে আসছিলেন মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার মহসিন। গত ৫ আগস্টের পর শান্ত ছাত্রাবাসটির ভাড়াটিয়াদের উচ্ছেদ করে কক্ষে কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দখলে দেন। এরপর থেকে নিয়মিত বন্ধুদের নিয়ে মাদকের আড্ডা বসাতেন তিনি। এ ছাড়া এটি টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করতেন।
মাগুরা সদর থানার ওসি আইয়ুব আলী জানান, ছাত্রাবাসটি থেকে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য জব্দ করেছেন সেনা সদস্যরা। উদ্ধার ব্যবসায়ীদের রাতেই সদর থানা পুলিশের হেফাজতে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের আটকের চেষ্টা চলছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস য়
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।