দুর্নীতির মামলায় মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ও ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান এবং তার স্ত্রী ডা. মির্জা নাহিদা হোসেনসহ ১০ জনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।

অন্যদের মধ্যে দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় গাজীপুরের সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী শফিকুল আলম, স্ত্রী জিনিয়া ফারজানা, দুই মেয়ে কাজী আরিয়া বিনতে শফিক ও কাজী আনুশা বিনতে শফিক, বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেডের (মিল্ক ভিটা) সাবেক চেয়ারম্যান শেখ নাদির হোসেন লিপু ও ভাইস চেয়ারম্যান শামসুল আরেফিন, সাবেক নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আ ন ম আহমাদুল বাশার ও তার স্ত্রী হাকিমুন নাহারের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।

এদের মধ্যে শেখ নাদির হোসেন লিপু, শামসুল আরেফিন, আহমাদুল বাশার ও তার স্ত্রী হাকিমুন নাহারের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্লকের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন:

বরখাস্ত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের যবিপ্রবিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

সাবের হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন জ্যেষ্ঠ বিশেষ বিচারক জাকির হোসেন গালিব দুদকের পৃথক চার আবেদনের প্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

দুদকের পক্ষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সংস্থার সহকারি পরিচালক মনজুরুল ইসলাম মিন্টু আব্দুর রহমান দম্পতির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়েছে, মির্জা নাহিদা হোসেন আব্দুর রহমানের মাধ্যমে অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৬ কোটি ৩০ লাখ ৮৯ হাজার ৮৮৭ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জন করেন। এ অর্থ দখলে রাখাসহ তার স্বামী আব্দুর রহমান অসদুপায়ে উপার্জিত অর্থ দ্বারা ডা.

মির্জা নাহিদা হোসেনের নামে এ টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে সহায়তা প্রদান করেছেন। তিনি নিজ নামে ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ১৬টি ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনকভাবে সর্বমোট ২৬ কোটি ৫৬ লাখ ৬ হাজার ৯৭৩ টাকা লেনদেন করে মানিলন্ডারিং সম্পৃক্ত অপরাধ ‘দুর্নীতি ও ঘুষ’ সংঘটনের মাধ্যমে পাওয়া অর্থ বা সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করার উদ্দেশ্যে তা রুপান্তর, স্থানান্তর ও হস্তান্তর করে অপরাধ করেছেন। এ কারণে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার তদন্তের স্বার্থে আসামিদের বিদেশ গমন রহিত করা প্রয়োজন।

সাবেক এসপি শফিক ও তার পরিবারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক খায়রুল হক।

আবেদনে বলা হয়, কাজী শফিকুল আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন ও বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়, শফিকুল আলম এবং তার পরিবারের সদস্যরা দেশ ছেড়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কাজ ব্যাহত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা একান্ত প্রয়োজন।

শেখ নাদির হোসেন লিপু এবং শামসুল আরেফিনের দেশত্যাগ নিষেধাজ্ঞা এবং এনআইডি ব্লকের আবেদনে সংস্থার সহকারী পরিচালক মো. সহিদুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেডের (মিল্ক ভিটা) চেয়ারম্যান ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানের বিষয়টি রাষ্ট্রের স্বার্থে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে অতীব গুরুত্বপূর্ণ।” 

অনুসন্ধানকালে গোপন সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগ সংশ্লিষ্টরা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার  সম্ভবনা রয়েছে। এজন্য তাদের বিদেশ গমন রহিত করা একান্ত প্রয়োজন। 

এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তর, আয়কর রিটার্ন দাখিল, পাসপোর্ট ইস্যু-নবায়ন, ব্যাংক হিসাব খোলা-পরিচালনাসহ যাবতীয় কার্যক্রম তথা নাগরিক সুবিধা যেহেতু জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে সম্পাদিত হয় সেহেতু অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রটি ব্লক করা হলে এই সমস্ত কাজ সম্পন্ন সম্ভব হবে না। তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্লক করাও একান্ত প্রয়োজন।

দুদকের সহকারি পরিচালক সহিদুর রহমান আহমাদুল বাশার দম্পতির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাসহ এনআইডি ব্লক চেয়ে আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়েছে, আহমাদুল বাশারের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য ও দলীয় পদ দেওয়ার নামে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনসহ অন্যান্য অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানের বিষয়টি রাষ্ট্রের স্বার্থে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

অনুসন্ধান চলাকালে গোপন সূত্রে জানা গেছে, তারা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য তাদের বিদেশ গমন রহিত করা একান্ত প্রয়োজন। এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তর, আয়কর রিটার্ন দাখিল, পাসপোর্ট ইস্যু-নবায়ন, ব্যাংক হিসাব খোলা-পরিচালনাসহ যাবতীয় কার্যক্রম তথা নাগরিক সুবিধা যেহেতু জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে সম্পাদিত হয় সেহেতু অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জাতীয় পরিচয়পত্রটি ব্লক করা হলে এ সমস্ত কাজ সম্পন্ন সম্ভব হবে না। এজন্য জাতীয় পরিচয়পত্র ব্লক করা একান্ত প্রয়োজন।

ঢাকা/এম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আহম দ ল ব শ র র ব দ শ গমন র দ শত য গ পর ব র র জ ঞ ত আয় র সহক র স থ বর র চ লক মন ত র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে

তাঁর নামে পুলিশের খাতায় কোনো মামলা নেই। পুলিশও তাঁকে ধরেনি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলার আসামি সেজে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। এরপর সাত দিন ধরে কারাগারে আছেন মো. রাকিব নামের এক যুবক। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে স্বেচ্ছায় প্রকৃত আসামি মো. সুমনের হয়ে জেল খাটতে আসেন রাকিব।

এ যেন জনপ্রিয় বাংলা চলচ্চিত্র ‘আয়নাবাজি’-এর কাহিনি। এই চলচ্চিত্রের মূল চরিত্র শরাফত করিম আয়না (চঞ্চল চৌধুরী) জাহাজে বাবুর্চির কাজ করেন। মাঝেমধ্যে দুই-তিন মাসের জন্য হাওয়া হয়ে যান তিনি। কোথায় যান? আসলে এ সময় তিনি সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের হয়ে টাকার বিনিময়ে জেল খাটেন।

আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট নগরের আকবর শাহ থানার কৈবল্যধাম এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে অভিযান চালিয়ে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে র‌্যাব। যার মূল্য ৪ লাখ টাকা। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িচালক রাহাত ইসলামকে। পালিয়ে যান চালকের সহকারী (হেলপার) মো. সুমন। এ ঘটনায় র‌্যাব কর্মকর্তা বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে রাহাত ইসলাম ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।

আদালত পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পলাতক আসামি সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরই মধ্যে সুমনের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। বিষয়টি জানতে পেরে সুমন নিজেকে কারামুক্ত রাখতে তাঁর পরিবর্তে নোয়াখালীর রাকিবকে আদালতে আত্মসমর্পণ করায় ১ জুলাই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা শুনানি শেষে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সুমনের হয়ে রাকিব আত্মসমর্পণের সময় তাঁর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ওয়াহিদ মুরাদ। তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ থাকায় একাধিকবার চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ‘আয়নাবাজি’, ধরা পড়েছে আঙুলের ছাপে০৮ নভেম্বর ২০২৩

আদালতে একের পরিবর্তে আরেকজন আত্মসমর্পণের বিষয়টি ধরা না পড়লেও কারাগারে গিয়ে ধরা পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের জুলাই পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা ১৬ জনের আঙুলের ছাপে শনাক্ত করা হয়।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে কারাগারে আসা প্রত্যেক নতুন আসামির আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। সেখানে আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আসল পরিচয় উঠে আসে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ‘সুমনের হয়ে কারাগারে আসা রাকিব স্বীকার করেছেন তিনি মাদক মামলার প্রকৃত আসামি নন। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।’

১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।মো. ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার

কারাগার থেকে চিঠি পাওয়ার পর মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান। একই সঙ্গে আসামিকে আত্মসমর্পণকারী আইনজীবী ওয়াহিদ মুরাদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির আবুল কালাম আজাদ।

আদালতের প্রসিকিউশন শাখার আকবর শাহ থানার জিআরও সাইদুর রহমান বাদী হয়ে গতকাল রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেছেন। মামলায় মো. রাকিব ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. আবদুস সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, সত্যায়িত জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া কোনো আসামির ওকালতনামা না দিতে বলা আছে। কেউ যাতে প্রতারণার সুযোগ না পান, আইনজীবীদের সে বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারীদের সেরা সঞ্চয়; পরিবার সঞ্চয়পত্রে মুনাফা কত, কীভাবে কিনবেন
  • আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে