মর্গ্যান স্কুলে দুর্নীতির তদন্তে গিয়ে বাঁধার মুখে ম্যাজিস্ট্রেট
Published: 29th, May 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মর্গ্যান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানটিতে তদন্তের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করেন।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নুসরাত রেবেকা ও সরকারি প্রধান শিক্ষক বিনোদ কুমার দেবনাথ, শিক্ষক আব্দুল বাতেন, কামরুল ইসলাম, হায়াত মাহমুদ, মেহেদী হাসানসহ কয়েকজন শিক্ষক তাঁর প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ শুরু করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাঁকে ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট দাবি করে গালাগাল ও ধাক্কাধাক্কি করা হয়।
এ সময় বিদ্যালয় চত্বরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের ক্লাস থেকে নামিয়ে এনে ম্যাজিস্ট্রেট বিরোধী স্লোগান দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ম্যাজিস্ট্রেট প্রশাসনের সহায়তা চাইলে পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জুবায়ের আহমেদ, রামকৃষ্ণ, রাকিবুল ইসলাম রকি, আমির হামজা, মোফাজ্জল হোসেন, মাহাদী হাসান, এনামুল হক, খন্দকার শাহানুর শাহজালাল, আব্দুর রহমান, খাইরুল ইসলাম, মনির আক্তার, আরিফা আক্তার, নজরুল ইসলাম এবং কলেজ শাখার বাবুল হোসেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন বলে জানান। তাদের ভাষ্যমতে, কিছু শিক্ষক ম্যাজিস্ট্রেটকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
তারা আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে স্থায়ী অধ্যক্ষ ও সহকারী প্রধান শিক্ষক না থাকায় নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে। প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলার অভাব এবং ব্যক্তিস্বার্থে প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার চলছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
এ অবস্থায় জেলা প্রশাসনের প্রতি তারা আহ্বান জানান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নুসরাত রেবেকা ও সহকারী শিক্ষক বিনোদ কুমার দেবনাথকে অপসারণ করে একটি স্বচ্ছ ও শৃঙ্খলাপূর্ণ প্রশাসন নিশ্চিত করতে।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে অধ্যক্ষ নুসরাত রেবেকার পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক মো.
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)