কালোবাজারি রেলকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন
Published: 30th, May 2025 GMT
রেলব্যবস্থায় দুর্নীতি ও অনিয়মের যে দীর্ঘ চর্চা চলমান, চট্টগ্রাম স্টেশনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাম্প্রতিক অভিযান তারই আরেকটি পরিচিত পুনরাবৃত্তি হিসেবে ধরা দিয়েছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, সেখানে দুদক কালোবাজারে টিকিট বিক্রির অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। দুদক বলেছে, এর সঙ্গে সরাসরি রেলকর্মীরা জড়িত।
স্টেশনের বুকিং সহকারী থেকে শুরু করে নিরাপত্তাকর্মী পর্যন্ত টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত থাকার বহু প্রমাণ নানা সময়ে সামনে আসে। সর্বশেষ ঘটনায় দুদক চট্টগ্রাম স্টেশনে ১৯০ টাকার টিকিট ৩০০ টাকায় বিক্রির প্রমাণ পেয়েছে। তারা এ ঘটনায় জড়িত রেলকর্মীদের হাতেনাতে ধরেছে। তাঁদের হাতে যে টিকিট থাকার কথা নয়, সে টিকিট পাওয়া গেছে। তাঁদের সঙ্গে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের যোগসাজশও উদ্ঘাটিত হয়েছে।
প্রশ্ন জাগে—এই টিকিট কোথা থেকে আসে, কাদের অনুমোদনে তা বণ্টিত হয় আর কারা এই প্রক্রিয়ায় মৌন সম্মতি দিয়ে থাকেন? এর উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের অতি অপ্রীতিকর সত্যের মুখোমুখি হতে হয়। রেলব্যবস্থায় দুর্নীতির শিকড় যে গভীর এবং তা যে প্রশাসনিক কাঠামোর প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে আছে, সেটি তখন জনসমক্ষে চলে আসে।
বাস্তবতা হলো যাত্রীসাধারণের জন্য ট্রেনের টিকিট পাওয়া আজ দুরূহ হয়ে উঠেছে। রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘কাউন্টারে তদারক করে কিছুই পাননি’। দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তার কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য আমরা আশা করতে পারি না। এতে বরং টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা আশকারা পান।
আমরা মনে করি, দুদক প্রাথমিকভাবে যেসব অনিয়ম উদ্ঘাটন করেছে, তা পরিপূর্ণ চিত্র নয়। এটি বরং বৃহত্তর দুর্নীতির প্রান্তচ্ছেদ। কালোবাজারি শুধু অর্থনৈতিক অপরাধ নয়, এটি রাষ্ট্র ও নাগরিকের মধ্যকার আস্থাবন্ধকে ভেঙে দেওয়ার এক ভয়াবহ প্রক্রিয়া। একবার যদি রাষ্ট্রীয় সেবাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ মানুষের আস্থা বিলুপ্ত হয়ে যায়, তবে সে ক্ষয় পুনরুদ্ধার দুরূহ।
রেলব্যবস্থাকে পুনর্গঠনের সময় এসেছে। প্রথমত, রেল টিকিট বিতরণে প্রযুক্তিনির্ভর স্বচ্ছ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যাতে কোনোভাবেই ‘মনুষ্যসৃষ্ট ফাঁক’ দুর্নীতির সুযোগ করে না দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, টিকিটের মজুত, বিতরণ ও বিক্রির প্রতিটি স্তরকে তদারকির আওতায় এনে স্বয়ংক্রিয় নিরীক্ষা চালু করতে হবে। তৃতীয়ত, যাঁরা দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। শুধু নিম্নপদস্থ কর্মী নয়, বরং প্রশাসনিক উচ্চপদস্থদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সম্পূরক বৃত্তিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের আশ্বাসে ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বুধবার রাত দশটার দিকে প্রশাসনের পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়। শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করান করান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক ও সিন্ডিকেট সদস্য বিলাল হোসাইন।
এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক নির্বাচনের রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বৃত্তির জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের নভেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ করা হবে।
অনশনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করা হবে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়নে প্রশাসন কাজ করবে।
আরও পড়ুনতিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৪ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ১২ ঘণ্টা আগেএ সময় অনশনে বসা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসন ভাতার জন্য প্রতিশ্রুত সময়ও দিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।
সতর্ক করে দিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যদি প্রশাসন ঘোষিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে হবে।
এর আগে তিন দফা দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন চারজন শিক্ষার্থী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়। অনশনে বসা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বাগছাসের নেতা।
আরও পড়ুনজকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা, ভোট ২৭ নভেম্বর২ ঘণ্টা আগে